Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুর্নীতিবিরোধী আইনের কড়াকড়িতে কোরিয়ায় উদ্বেগ

corruptionঘুষ-দুর্নীতি ঠেকাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কঠোরতম আইনটি আগামী সেপ্টেম্বরে কার্যকর হতে যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে কথা উঠেছে এ আইনের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে। অনেকের মতে, উপহার গ্রহণ ও আপ্যায়ন অগ্রাহ্য করতে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে, তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি হারাতে পারে। খবর ব্লুমবার্গ।

সরকারি কর্মকর্তাদের খাওয়ানো ও উপহার দেয়ার রেওয়াজ দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে কোরীয় নাগরিকরা তাদের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ, অংশীদার, পরিচিত ও প্রিয়জনকে উপহার দেয়, আপ্যায়ন করে। সাধারণত কোরিয়ান বিফ, সি ফুড, ফ্রুট সেট ইত্যাদি উপহারের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের লেনদেনের ফলে বিভিন্ন সংস্থার তদারকি ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে শৈথিল্য আসার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে সিউল ফেরি দুর্ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। ওই দুর্ঘটনার তদন্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে জাহাজ চলাচল শিল্প-সংশ্লিষ্টদের ওঠাবসা ও খানাপিনার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনভিপ্রেত যোগাযোগ ঠেকাতে নতুন ‘অন্যায় লেনদেন ও ঘুষ আইন’ প্রণয়ন করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্নীতিবিরোধী এ আইনে আপ্যায়ন ও উপহার দেয়া-নেয়ার ব্যাপারে যেভাবে বিস্তারিত উল্লেখ ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তাতে বেশকিছু পেশা ও শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নতুন আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও সাংবাদিকরা যদি কারো কাছ থেকে ৩০ হাজার ওন (২৫ ডলার) মূল্যমানের বেশি খাবার ও পানীয় গ্রহণ করেন, তাহলে তাদের জরিমানা দিতে হবে। একইভাবে এসব পেশাজীবী যদি ৫০ হাজার ওন অথবা তার চেয়ে বেশি দামের কোনো উপহার গ্রহণ করেন, তাহলেও জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৫ সালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ ১৬৮টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ৩৭তম। ওই সূচকে সোমালিয়া ও নাইজেরিয়ার অবস্থান সবচেয়ে ওপরে। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপান, তাইওয়ান ও হংকং দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

সরকারের নতুন আইনটি দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ শতাংশ কর্মজীবীকে প্রভাবিত করবে বলে হুন্দাই রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে।

মিয়ংজি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির প্রফেসর চো ডং কিউন বলেন, নতুন আইন প্রবর্তনের সময়টি অর্থনীতির জন্য সুবিধাজনক নয়। কারণ এমনিতেই অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তা চাহিদা দুর্বল রয়েছে। চান্দ্র নববর্ষ ও চুসকের ছুটিতে উপহার দেয়া-নেয়ার রেওয়াজ কৃষি ও মত্স্য আহরণ শিল্পকে সাহায্য করেছে। নতুন আইনে উপহার ও আপ্যায়নের ক্ষেত্রে যেভাবে মূল্যসীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতি বাড়লে আইনটি কিভাবে প্রয়োগ হবে, সে প্রশ্ন থেকে যায়।

ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ ফেডারেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, নতুন আইন কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ অর্ধেকের বেশি ফ্রুট গিফট সেটের দাম ৫০ হাজার ওনের ওপর। একইভাবে বাজারে যেসব বিফ গিফট সেট বিক্রি হয়, সেগুলোর ৯৮ শতাংশই ৫০ হাজার ওনের বেশি দামের।

এদিকে ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজড এন্টারপ্রাইজেস আপ্যায়নের ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া মূল্যসীমা বাড়িয়ে ৭০ হাজার ওন নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। তা না হলে খাদ্য শিল্পে সংকোচন দেখা দেবে বলে ফেডারেশন সতর্ক করেছে।