Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘মে দিবস’ বাংলাদেশে কতটা মহান?

may dayবাংলাদেশ তার নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সব কল্পনা ও পরিকল্পনার আগেই ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সারির এখনো নিচের দিকে কিন্তু ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে’, তাতেই আমরা বেশুমার বগল বাজাচ্ছি। কিন্তু বাংলাদেশের এ ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’ হয়ে ওঠার পেছনে যাদের শ্রম, ঘাম ও রক্ত মিশে আছে তারা হচ্ছেন এ দেশের মজুর ও মজদুর শ্রেণীর মানুষ। কারণ নানা বিবেচনায় দেশের অর্থনীতি এখনো মজুরের অর্থনীতি। এ দেশের অর্থনীতি এখনো মজদুরের অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি (যা কৃষিজীবী মানুষের অবদান), তৈরি পোশাক শিল্প (যা পোশাক শ্রমিকদের অবদান) ও রেমিট্যান্স (যা প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান)। এ তিন সেক্টরেই এ দেশের শ্রমজীবী মানুষ, কৃষিজীবী মানুষ ও মজদুর শ্রেণীর মানুষ তাদের অশেষ অবদানের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুষ্টি জুগিয়েছে। যার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাত ধরে এসব শ্রমজীবী, কৃষিজীবী ও মজদুর মানুষের জীবন এবং জীবনমানের কতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটাই ভাবনার বিষয়। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সমান্তরালে এসব শ্রমজীবী মানুষের উন্নতি হয়েছে, নাকি উন্নয়নের অন্তরালে তাদের শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার উপাখ্যান আরো নিষ্ঠুর থেকে নিষ্ঠুর হয়েছে— সেটাই আজকের এ ‘মহান’ মে দিবসে যথাযথভাবে উপলব্ধি করা জরুরি। বিশ্বায়ন, বাজার অর্থনীতি কিংবা নব্য উদারবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্থানিক ও বৈশ্বিক দর্শনে শ্রমজীবী মানুষের জায়গা কোথায়— আজকে ‘মে দিবসে’র প্রাক্কালে তা উপলব্ধি করাটা জরুরি বাংলাদেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা উপলব্ধির জন্য।

৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে ১৮৮৬ সালে শিকাগো শহরে ও হে মার্কেটে শ্রমিকদের যে আন্দোলন ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রচিত হয়েছিল, তারই স্মরণে প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’ পালিত হয়। সেকালে বামপন্থী সংগ্রামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল শিকাগো। স্বভাবত এ শিকাগোতেই ৮ ঘণ্টা শ্রমঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে যে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়, তা খুব জঙ্গি চেহারা ধারণ করে। ১ মে শিকাগোতে শ্রমিকদের এক সুবিশাল সমাবেশ হয়, যেখানে শহরে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলনের ডাকে সব কারখানার সব শ্রমিক কাজ বন্ধ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এর আগে শ্রেণী সংহতির এত বলিষ্ঠ প্রকাশ আর দেখা যায়নি। ১৮৮৬ সালে ১ মের ধর্মঘটে ৮ ঘণ্টা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামী ইতিহাসে এ আন্দোলন রচনা করে এক গৌরবময় অধ্যায়।

chardike-ad

শ্রমিক শ্রেণীর এ ঐতিহাসিক উত্থান রুখতে এবং এর সংগ্রামী ভবিষ্যত্ ধ্বংস করতে বিভিন্ন কারখানার মালিক ও শিকাগো সরকারের যৌথ পরিকল্পনায় এক ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো হয়। এই ১ মে’র ঘটনারই প্রত্যক্ষ পরিণতি হলো ৩ ও ৪ তারিখের ঘটনাগুলো, যা ইতিহাসে ‘হে মার্কেটের ঘটনা’ নামে জারি আছে। ৩ মে ‘ম্যাক-কর্মিকরিপার কারখানা’র ধর্মঘটী শ্রমিকদের এক সভায় পুলিশ জানোয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ছয় শ্রমিককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং অসংখ্য শ্রমিককে ভয়াবহভাবে আহত করে। পুলিশের এই পাশবিক আক্রমণের প্রতিবাদে ৪ মে হে মার্কেটের স্কোয়ারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় শ্রমিকদের ওপর পুলিশ আবার আক্রমণ করে। তখন ভিড়ের মধ্যে একটি বোমা এসে পড়ে এবং তার আঘাতে একজন সার্জেন্ট নিহত হন। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ বনাম শ্রমিকের দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়, যেখানে সাতজন পুলিশ ও চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ফলে হে মার্কেটে রক্তের জোয়ার বয়ে যায়। পুলিশ হত্যার অপরাধে (!) শিকাগোর শ্রমিক নেতা পার্সনস, স্পাইজ, ফিসার ও এঙ্গেলকে ফাঁসি দেয়া হয়। আর শিকাগোর সংগ্রামী শ্রমিক নেতাদের গণহারে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। শিকাগোর শ্রমিক নেতাদের ফাঁসির পরও ১৮৮৮ সালে বর্তমানে আমেরিকায় ‘ফেডারেশন অব লেবার’ বলে যা পরিচিত, সেই ‘ফেডারেশন’ সেন্ট লুই সম্মেলনে ৮ ঘণ্টা কাজের আন্দোলন আবার শুরু ও সংগঠিত করার প্রস্তাব গ্রহণ করে। আমেরিকার শ্রমিকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে কংগ্রেসে ‘১৮৯০ সাল থেকে ১ মে অনুরূপ বিক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং এ তারিখটিকেই আন্তর্জাতিক বিক্ষোভ প্রদর্শনের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়।’ তখন থেকেই ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ সারা দুনিয়ায় শ্রমজীবী মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, চাওয়া-চাহিদা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের দিন হিসেবে পালিত হয়। এছাড়া পরে ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে ১ মে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের জন্য সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই তা কার্যকর হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মহান মে দিবস হিসেবে পালন করা এবং বাংলাদেশও এ ৮০টি দেশের অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু বাংলাদেশে মে দিবসের যে আনুষ্ঠানিকতা কিংবা মে দিবস পালনের যে কর্মসূচি, তা বহুলাংশে শ্রমিক শ্রেণীর হাতে নেই। সেটা কোনো না কোনোভাবে চলে গেছে মালিক শ্রেণীর হাতে, সরকারের হাতে। অথবা তা কোনো না কোনোভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কিছু বাম রাজনৈতিক দল এবং এনজিওর নানা কিসিমের ‘শ্রমিক’ প্রদর্শনীর কর্মসূচিতে। মহান মে দিবসে শহুরে নাগরিক মধ্যবিত্তরা একদিনের বিশ্রাম পান, যাতে পরের দিন আরো অধিক শক্তিসহকারে শ্রমিক শোষণের কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারেন! বাম-ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো লাল পতাকা, পোস্টার, ফেস্টুন দিয়ে কিছু শ্রমিক জোগাড় করে মে দিবসের নানা আনুষ্ঠানিকতা করে, তাতে যতটা না শ্রমিকের দাবিদাওয়া, চাওয়া-চাহিদার প্রতিফলন ও প্রকাশ ঘটে, ততধিক একটি পাইকারি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়ার কসরত পরিলক্ষিত হয়। এনজিওগুলোও কিছু লাল ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন দিয়ে একটা শোভাযাত্রা করার ব্যবস্থা করে। যার ভেতর দিয়ে কিছু ‘ঘর্মাক্ত শ্রমিক প্রদর্শনী’র মাধ্যমে দাতাগোষ্ঠীর টাকা হালাল করার এবং শ্রমিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে নতুন ‘মাল’ আদায়ের রাস্তা সুগম করে। সরকারিভাবেও মে দিবস পালনের একটা রুটিন অনুশীলন দেখা যায়, যেখানে কিছু ছকে বাঁধা আলোচনা অনুষ্ঠান থাকে। শ্রমিকদের জন্য ‘ভালোবাসা’ বিগলিত হয় এবং নানা কথার ‘সহমর্মিতা’ প্রকাশিত হয়। কিন্তু কাজের বেলায় ‘মজুরের বাচ্চা’ মজুরই থাকে! মজদুর সবসময় মজদুর হিসেবেই বিবেচিত হন, কখনো মানুষ হিসেবে নয়। এর বাইরে সমাজের বিরাট একটা শ্রমজীবী মানুষ মে দিবসেও নিজের শ্রম বিক্রি করে অমানবিক ও অমানুষিক পরিশ্রম করে দুবেলা পেটের ভাত জোটান। ‘মে দিবসে’ রাজনৈতিক তাত্পর্য বিবেচনায় নিয়ে এ দেশের শ্রমজীবী মানুষ যেমন রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে শাসক শ্রেণীর কাছে তাদের ন্যায্য দাবি যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারেন না, তেমনি দেশে বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোও শ্রমজীবী মানুষের দাবিদাওয়া ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করে ঠিক জায়গায় পেশ করতে পারেন না। ফলে এখনো দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তাই শ্রম শোষণের বিষয়টি  দেশে এখনো ভয়াবহ অবস্থায় জারি আছে। ঈদের আগে বেতন-বোনাসের জন্য রাস্তায় আন্দোলনে নামা শ্রমিকদের একটি বার্ষিক নিয়তি হয়ে উঠেছে। কিছুদিন পর পর প্রবাসী শ্রমিকদের ‘কফিনবন্দি হয়ে লাশ হয়ে দেশে ফেরা’ একটা রুটিন কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়া এখানে নিয়মিত ঘটনা। তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ১১১টি লাশের গন্ধ এখনো বাতাসে পাওয়া যায়। কিংবা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মৃত মানুষের আহাজারি এখনো রাজধানীর বাতাসে ঘুরপাক খায়। ক্ষতিপূরণের নামে চলছে নানা মাত্রার হয়রানি। আর ‘ডমিস্টিক ওয়ার্কারস’, যাদের আমরা বাসার ‘কাজের লোক’ বলি, তাদের কথা তো বলে শেষ করার নয়। আধুনিক ‘দাস-শ্রমিক’ বলতে যা বোঝায়, তার দগদগে নজির হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোর অট্টালিকার চার দেয়ালে বন্দি মানবেতর জীবনযাপন করা এসব ‘কাজের লোক’। আগুনের ছেঁকা, বেদড়ক পিটুনি, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে খুন করা ইত্যাকার হেন কোনো নির্যাতন নেই এসব শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে হয় না। আজ পর্যন্ত এমন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। ক্ষুদ্র শিল্পের শিশু শ্রমিক, ইটভাটার শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, ঠেলাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, গ্যারেজের শ্রমিক, নির্মাণ শিল্পের শ্রমিক— এ রকম অসংখ্য সেক্টরের অসংখ্য শ্রমিকের জীবনালেখ্য বিয়োগান্ত নাটকের করুণ উপাখ্যান ছাড়া আর কিছুই নয়। দৈনিক শ্রমিকের, যারা দৈনিক একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করেন, তাদের আখ্যান তো আরো ভয়াবহ। শ্রম শোষণের আরো একটি কুিসত নজির হচ্ছে এ দৈনিক শ্রমিকের শ্রম কেনাবেচার দেনদরবারের প্রক্রিয়া। গ্রাম থেকে ভাগ্যের সন্ধানে শহরে আসা ভাসমান মানুষগুলোর শ্রমের কোনো মূল্যই নেই। তাই ‘আপনি যা দেন’ যখন তার শ্রমের মূল্য, তখন তার চরম শোষণই একমাত্র নিয়তি। এভাবেই চলে এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ।

এ রকম একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে আন্তজার্তিক শ্রম দিবস বা মে দিবস উদযাপনের তাত্পর্য কোথায়, সেটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। এ দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রাখেন নিত্য শ্রম আর ঘামের অমানবিক বিনিয়োগের ভেতর দিয়ে, তাদের শ্রম-ঘামের কী মূল্য এ সমাজ ও রাষ্ট্র নির্ধারণ করে, সামাজিক মর্যাদার কোন জায়গায় আমরা এসব শ্রমজীবী মানুষের জন্য জায়গা নির্ধারণ ও সংরক্ষণ করছি, তা নিশ্চিত করার ভেতরেই মে দিবস পালনের সার্থকতা নিহিত। মে দিবসকে বলা হয় মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের যথাযথ মূল্য না দিয়ে এবং শ্রমজীবী মানুষকে যথাযথ সামাজিক মর্যাদা না দিয়ে আমরা যতই মে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা করি না কেন, সেটা কখনই ‘মহান’ হয়ে উঠবে না। এ ‘মহান’-এর ধারণা আনুষ্ঠানিকতায় নয়, রাষ্ট্রের চরিত্র ও আমাদের রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যেই নিহিত আছে।

 

লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বণিকবার্তা থেকে নেওয়া।