বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কে এগিয়ে থাকবে— স্যামসাং, অ্যাপল নাকি হুয়াওয়ে? বাজারটিতে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা স্যামসাং ইলেকট্রনিকস এবং অ্যাপল ইনকরপোরেশনকে পাঁচ বছরের মধ্যে পেছনে ফেলতে চায় হুয়াওয়ে। অর্থাত্ এ সময়ের মধ্যে স্মার্টফোন বাজারের ২৫ শতাংশ দখলে নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে চীনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি হুয়াওয়ের কনজিউমার ইলেকট্রনিকস ব্যবসা বিভাগের প্রধান রিচার্ড ইয়ু এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্ভাবনা কতটুকু? একবিংশ শতাব্দীর এ সময় এটা সহজেই অনুমেয়। একটা সময় ছিল, চীনের পণ্য মানেই মনে করা হতো জনপ্রিয় কোনো ব্র্যান্ড পণ্যের আদলে তৈরি নকল পণ্য। নিঃসংকোচে বলা যায়, আর্থিক সমৃদ্ধি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য শুরুতে অনুকরণকেই বেছে নিয়েছিল চীন। যদিও এ শতাব্দীর শুরু থেকে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বলতে গেলে, চীন অনুকরণ থেকেই এখন উদ্ভাবনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতাদের প্রায় সবাই পণ্য উত্পাদনের জন্য দেশটির মুখাপেক্ষী। স্যামসাং থেকে শুরু করে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের জনপ্রিয় আইফোন ডিভাইস তৈরি হয় চীনে। শুধুই কী চুক্তিভিত্তিক পণ্য উত্পাদনে এগিয়েছে চীন? এটা বললেও ভুল হবে। বাইরের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য চুক্তিভিত্তিক পণ্য উত্পাদনের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে চীনের বেশকিছু মৌলিক পণ্য নির্মাতা। স্থানীয় বাজারে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি এসব কোম্পানি এখন কার্যক্রম প্রসার করছে আন্তর্জাতিক বাজারে। এদের কেউ কেউ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা স্যামসাং ও অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। চীনভিত্তিক এমনই কিছু কোম্পানি হলো— হুয়াওয়ে, শাওমি, এইচটিসি ও অপ্পো।
স্মার্টফোন বাজারে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব বাড়ছে দিনকে দিন। বিশেষ করে হুয়াওয়ে ও শাওমি আকর্ষণীয় ও ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষ দুই কোম্পানি স্যামসাং ও অ্যাপলের সঙ্গে জোরালো প্রতিযোগিতা করছে। এমনকি বাজারটির শীর্ষ দুই কোম্পানির মোবাইল ডিভাইস ব্যবসায় উত্থান-পতন ঘটলেও, চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে ও শাওমির ডিভাইস ব্যবসায় এক ধরনের ইতিবাচক গতি বিদ্যমান রয়েছে।
সম্প্রতি হংকংয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এফডটআউনডার্স আয়োজিত কনভার্জ টেকনোলোজি কনফারেন্সে হুয়াওয়ের কনজিউমার ইলেকট্রনিকস ব্যবসা বিভাগের প্রধান রিচার্ড ইয়ু বলেন, আমরা বিশ্বের এক নম্বর স্মার্টফোন নির্মাতা হতে চাই। সে অনুযায়ী কাজ করছি। যদিও এটি একটি লম্বা প্রতিযোগিতা। তা সত্ত্বেও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের যথেষ্ট ধৈর্য রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম বড় টেলিকম নেটওয়ার্কিং গিয়ার সরবরাহকারী শেনজেনভিত্তিক হুয়াওয়ে। সংশ্লিষ্ট খাতে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী সুইডেনভিত্তিক এরিকসন। হুয়াওয়ে গত কয়েক বছরে নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশের পাশাপাশি হ্যান্ডসেট ব্যবসা খাতে ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে।
হুয়াওয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজারে দখলের দিক থেকে স্যামসাং ও অ্যাপলের সঙ্গে দূরত্ব অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। মূলত এর পরই সংশ্লিষ্ট বাজারের শীর্ষ অবস্থান দখলের বিষয়ে মন্তব্য করলেন রিচার্ড ইয়ু।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে ৫৯ শতাংশ। একই প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বিক্রি প্রবৃদ্ধি এর আগের প্রান্তিকের সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ থেকেছে। অর্থাত্ গত প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়নি স্যামসাংয়ের। আর প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের জনপ্রিয় আইফোন বিক্রি কমেছে ১৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের দখল বেড়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে বাজারটিতে স্যামসাংয়ের দখল ২৩ শতাংশ ও অ্যাপলের দখল ১৫ শতাংশ। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ক্রমেই দখল বাড়ছে হুয়াওয়ের। এ পরিস্থিতিতে উচ্চপ্রযুক্তির ডিভাইস সরবরাহে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন পি৯ উন্মোচন করা হয়েছে। ডিভাইসটিতে ডুয়াল লেন্স ক্যামেরা ফিচার রয়েছে, যা উন্নয়ন করা হয়েছে জার্মান অপটিকস কোম্পানি লাইকা ক্যামেরা এজির সহায়তায়।
রিচার্ড ইয়ু বলেন, হুয়াওয়ের যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত উচ্চপ্রযুক্তি ও প্রিমিয়াম ডিভাইস বাজারগুলো থেকে এসেছে। বাজার দখলে শীর্ষ অবস্থান দখলে নিতে হলে অবশ্যই আগে উচ্চপ্রযুক্তির ডিভাইস বাজারে নেতৃত্ব দিতে হবে।