জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) হলের দাবিতে মিছিলে হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দফায় দফায় হামলায় সাংবাদিকসহ ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের রুহুল আমীন, আইন বিভাগের অনিমেষ রায়, জিসান ও চৈতালী আক্তার, বাংলা বিভাগের রোহিয়া সুলতানা, হিসাবরক্ষণ বিভাগের গোলাম রাব্বী, গণিত বিভাগের প্রসেনজিৎ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি মুজাহিদ অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মার্কসবাদী অংশের সভাপতি মেহরাব আজাদ, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল আমীন। আহতদের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ধর্মঘটের সমর্থনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে মিছিল করছিলেন। শুরু থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। পরে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত একটি মিছিল ক্যাম্পাসের বাইরে আসতে চাইলে তারা হামলা চালায়। জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এফ এম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে আজ সকাল ১০টা থেকে দফায় দফায় এ হামলা চালানো হয়।
আহত আল আমীন বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে তারা হামলা চালায়। সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসের মূল ফটক দখল করে নেয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলার পর বিক্ষোভ মিছিল করে কলাভবনের সামনের ফটক ভেঙে বাইরে বের হয়ে আসে এবং শাঁখারিবাজার মোড়ে হলের দাবিতে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়।
একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের ভেতরে ধর্মঘটের সমর্থনে জড়ো হতে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত কয়েকজন সাংবাদিক এ হামলায় আহত হন। সাংবাদিকদের ধারণ করা ছবি মুছে ফেলার জন্য তাঁদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য মাসুম বিল্লাহ এ হামলার ঘটনার ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম তাঁর ওপর হামলা করে। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক সমিতি জরুরি সভা ডেকে ছাত্রলীগের সব ইতিবাচক সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এনটিভি অনলাইনের সংবাদদাতা হামলার ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা আনিসুর রহমান শিশির তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে গালমন্দ করেন।
মানবকণ্ঠের সংবাদদাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনার প্রতিবাদে আমরা ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব ইতিবাচক সংবাদ বয়কট করেছি। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিচার চাই।’
সাধারণ শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমীন রূপা বলেন, ‘গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যখন হলের দাবিতে আন্দোলন চলছিল, তখন ছাত্রলীগ এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়েছিল। কিন্তু বামপন্থীরা তা করতে দেয়নি। এই ক্ষোভেই আজ তারা এ হামলা চালিয়েছে।’
হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই হামলা করিনি। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ না হয় সেভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক দাবি। আমরা এতে সমর্থন করি।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজ বিকেল ৪টায় শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছেন।