Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মেধা পাচার নিয়ে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরিয়া

brain drainশুধু চীন জাপান নয়, জ্ঞান বিজ্ঞানে গোটা বিশ্বের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে হলে এবং টেকনোলজি খাতকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে হলে যেখানে আরো বেশী বেশী দক্ষ এবং সুশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন, সেখানে উচ্চ শিক্ষিত কোরিয়ান নাগরিকদের বিরাট একটি অংশকে আর দেশে ফিরে আসতে দেখা যায় না। বরং তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশেই খুঁটি গেঁড়ে থাকতে চান।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি পলিসি ইন্সটিটিউট (STEPI) এর দেয়া তথ্য মতে, এবছর সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রাপ্ত ৮,৯৩১ জন ছাত্র দক্ষিণ কোরিয়া ত্যাগ করেছে, যা বিগত দশ বছরের মধ্যে প্রায় তিন গুন বেশী। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি দশ জনের মাঝে চার জন অর্থাৎ ৪০% ছাত্রই অভিমত দিয়েছেন যে তারা যদি ভাল কোন সুযোগ পায় তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া ছেড়ে অন্য কোন দেশে চলে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি পলিসি ইন্সটিটিউট (STEPI) এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন “যারা বেশী মেধাবী এবং ভাল মানের গবেষক তারা অহরহ দক্ষিণ কোরিয়া ত্যাগ করছেন এবং উপরন্তু আমরা কোন বিদেশী ভাল মানের গবেষককে এখানে আকৃষ্ট করতে পারছি না”।

chardike-ad

কোরিয়ান সংবাদ মাধ্যম জুসন ইলবো (Chosun Ilbo) এবং বায়োলজিক্যাল রিসার্স ইনফরমেশন সেন্টার যৌথভাবে একটি জরিপ করে। যেখানে দেখা যায় ১,০০৫ জন পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনকারী গবেষকদের মাঝে ৪৬% জন তরুণ বিজ্ঞানী বলেছেন যে তারা বিদেশে যেতেই বেশী পছন্দ করেন। মাত্র ৩১% বলেছে যে ভাল মন্দ যাই হোক না কেন তারা কোরিয়াতেই থাকতে চান শেষ পর্যন্ত।

brain drain 3
ব্রেইন ড্রেইনে ভারত, জাপানের চেয়ে খারাপ অবস্থা কোরিয়ার

আমেরিকার একটি গবেষণা সংস্থা ২০১৩ সালে এক জরিপে দেখিয়েছে যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইডি ডিগ্রী অর্জনকারী প্রায় ৬০% কোরিয়ান নাগরিক তারা আর দেশে ফেরার ইচ্ছে পোষণ করছেন না। অর্থাৎ ঐসব ব্যাক্তি আমেরিকাতেই থাকতে চান। অপর পক্ষে, কোরিয়ার একটি গবেষণা সংস্থা জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে ৯৭,০০০ জন ডক্টরেট ডিগ্রী ধারী কোরিয়ানদের মাঝে ৩৬% ই কোরিয়া ত্যাগ করে বিদেশ যেতে চায়।

কিন্তু কেন, উচ্চ শিক্ষিত ডক্টরেট ডিগ্রীধারীদের এই বিদেশ গমনের প্রবনতা? জুসন ইলবো মিডিয়া কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় পাওয়া তথ্যমতে প্রায় ৫৯% গবেষকই অভিযোগ করে বলেছেন যে দক্ষিণ কোরিয়াতে স্বল্প সময়ে বেশী রেজাল্ট পাওয়ার জন্য প্রচন্ড কাজের চাপ থাকে এবং গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব রয়েছে প্রচুর। প্রায় ৪১% বলেছেন এখানে চাকুরির সুযোগ কম এবং ৩৩% শতাংশের মতে এখানকার গবেষণা কাজের মান উন্নত দেশের চেয়ে এখনো বেশ পিছিয়ে।

একজন তরুণ গবেষক তার অভিজ্ঞতা বর্ননা করতে গিয়ে বলেছেন যে “যদি আমি কোন নতুন কাজের পরিকল্পনা করি তাহলে আমাকে বলা হয় করো, যেভাবে অন্যেরা করে সেভাবে করো। এই ধরনের পরিস্থিতি একজন তরুণ গবেষকের জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ এবং কষ্টদায়ক। এই কষ্ট মাসিক বেতনের তুলনায় আসলে কিছুই না”।

brain drain 2একজন প্রোগ্রামার যিনি এমাজন (Amazon) কোম্পানিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন আমার অনেক সহকর্মী আছেন যাদের মন মানসিকতা এমন যে, তারা বয়স বা পদমর্যাদার দিকে না তাকিয়ে বিদেশী ভাল কোন কোম্পানির অফার পেলে এক্ষুনি চলে যাবেন।

বিদেশী কোন মেধাবী বিজ্ঞানীকে আকৃষ্ট করাটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। স্যামসং এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন “উচ্চতর এসব ডিগ্রী নিতে বেশ কয়েক বৎসর সময় লেগে যায়। যার যত বড় ডিগ্রী, তার ফ্যামিলির বিদেশ যাওয়ার চাহিদা তত বেশী। কারণ তারা কোরিয়ান কর্পোরেট কালচার নিয়ে বেশ শংকায় থাকেন এবং কাজের চাপও এখানে খুব বেশী”।

এসব কথা বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কোম্পানি স্যামসাং ২০১৪ সালে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। যেখানে দেশ বিদেশের মেধাবী বিজ্ঞানীদেরকে কাজে লাগানো যাবে বলে তাদের ধারণা।

দক্ষিণ কোরিয়ার জুসন ইলবো’র থেকে।