Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবশেষে ফেসবুকে ফিরলো সেই ছবি

napalm-girl

একটি স্থিরচিত্রে বোমা হামলায় আহত হয়ে নগ্ন অবস্থায় দৌড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে কিম ফুক নামে ভিয়েতনামের এক বালিকাকে। ১৯৭২ সালে ভিয়েতনামের মার্কিন আগ্রাসনের সময় তোলা হয়েছিল ছবিটি। পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ছবিটি ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আইকনে পরিণত হয়। সেসময় বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়া ছবিটি সম্প্রতি “কমিউনিটি রুলস” এর অজুহাতে ফেসবুক থেকে তুলে নিয়েছিল এর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ছবিটি ফিরিয়ে এনেছে তারা।

chardike-ad

সায়গনের (এখন হো চি মিন সিটি নামে পরিচিত) উত্তরে ১৯৭২ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র নাপাম বোমা (রাসায়নিক বোমা) হামলা করে তখন কিম ফুকের বয়স মাত্র নয়। হামলায় তার সমস্ত শরীর মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। ছবিটি তুলেছিলেন এপির ফটো সাংবাদিক নিক উট। এই ছবি তোলার জন্য তিনি সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ সম্মান পুলিৎজার পুরস্কার পান। তিনি এবং ব্রিটিশ টেলিভিশন আইটিএনের সাংবাদিক ক্রিস্টোফার ওয়েন ওই মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিম ফুক বাঁচবে তেমন আশা ছিল না। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বেঁচে যায়। ১৪ মাস চিকিৎসার পরে বাড়ি ফিরে যায়। কিম ফুকের বয়স এখন ৫৩। তিনি থাকেন কানাডার টরন্টোতে। সেই যন্ত্রণা তাকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

নাপাম বোমায় পুড়ে যাওয়া নয় বছরের এক নগ্ন মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। পেছনে দেখা যাচ্ছে বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে। সেসময় বিশ্বব্যাপী চলমান ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা দিয়েছিল কিম ফুকের এ ছবি। বিশ্বের শত শত প্রকাশনায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে ছবিটি।

নরওয়ের একজন লেখক সম্প্রতি ছবিটিসহ একটি পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। এরপরেই ফেসবুক ছবিটি সরিয়ে নিয়েছিল।

নরওয়ের সর্বাধিক প্রচারিত আফটেনপোস্টেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এসপেন এজিল হ্যানসেন এর প্রতিবাদে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে একটি খোলা চিঠি লেখেন। তিনি বলেন, মার্ক জাকারবার্গ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে, সাংস্কৃতিক কারণে “নগ্নতা” বলে বিবেচিত হতে পারে এমন বিষয় ও ছবি তাদের নিষিদ্ধ করতে হয়।

তবে হ্যানসেন ফেসবুকের দেয়া এই যুক্তি মানতে নারাজ। মার্ক জাকারবার্গের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে তিনি তার বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেছেন। এতে তিনি জাকারবার্গকে বিশ্বের সবচেয়ে “ক্ষমতাধর সম্পাদক” বলে বর্ণনা করেন।

তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখন স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে এবং এটি অনেক সময় করা হচ্ছে স্বৈরাচারী কায়দায়। যদি আপনি একটি যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবির সঙ্গে শিশুদের নগ্ন ছবির পার্থক্য বুঝতে না পারেন, তাহলে তা কেবল নির্বুদ্ধিতারই প্রসার ঘটাবে।’

হ্যানসেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য ব্যক্তি এ ঘটনার পরে ফেসবুকের সেন্সর নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করে অসংখ্য পোস্ট দেয়া হয়েছে ফেসবুকেই। এসব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ফিরিয়ে আনা হয়েছে এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এ ছবিটি।

সূত্র: বিবিসি