Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ায় সরকারীদলের পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট!

senuri
অনশন করছেন কোরিয়ার সরকারী দলের প্রধান লি জোং হিয়ন

উপরের ছবিতে যাকে দেখছেন তিনি কোরিয়ার বর্তমান সরকারী দলের প্রধান লি জোং হিয়ন।গতকাল সোমবার থেকে তিনি অনশনে নেমেছেন পার্লামেন্টের স্পিকারের বিরুদ্ধে। একটি দেশের সরকারী দলের প্রধান হয়েও তিনি অনশন শুরু করছেন। ব্যাপারটা অবাক করার মতো হলেও এইটাই দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতির একটি চিত্র। প্রথমেই ঘটনার সারসংক্ষেপ উল্লেখ করি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে কৃষি, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে কিম জে সুককে নিয়োগ দেন। তার পরপরই প্রধান বিরোধী দল অভিযোগ করে অভিযোগ কিম অস্বাভাবিক কম সুদে নোংহিয়প ব্যাংক (বাংলায় কৃষি ব্যাংক) থেকে লোন নিয়েছেন। অভিযোগের পর বিরোধী দল মন্ত্রী কিমের বিরুদ্ধে প্রমাণও পেশ করে পার্লামেন্টে। গত শুক্রবার ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী দল কিমের পদত্যাগ চেয়ে পার্লামেন্টের ভোটের আবেদন জানায় এবং স্পিকার সোং সে খিয়ন তাতে সাড়া দিয়ে পার্লামেন্টে ভোট আহবান করে। এতেই শুরু হয় বিপত্তি। সরকারী দল এর কড়া সমালোচনা শুর করে এবং ভোটের পূর্বমুহুর্তে পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করে। প্রধান বিরোধী দলের ১২১ ভোটসহ মোট ১৬০ ভোটে বিল পাস হয়।

chardike-ad

বিল পাসের পর নিয়ম অনুযায়ী ন্যাশনাল এসেম্বলি প্রেসিডেন্টের প্রতি মন্ত্রী কিমকে বরখাস্ত করার আহবান জানায়। সরকারী দল সেনুরি ন্যাশনাল এসেম্বলির ভোটাভুটির তীব্র নিন্দা জানায় এবং স্পিকার বিরোধী দলের পক্ষে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করে। গত রবিবার প্রেসিডেন্ট পার্ক জানিয়েছেন তিনি কিমকে বরখাস্ত করবেন না।

আধুনিক কোরিয়ায় অর্থাৎ দুই কোরিয়া ভাগ হওয়ার পর  কোরিয়ায় এই নিয়ে ৬বার এই ধরণের বিল পাস হয়েছে এবং আগের পাঁঁচবারই প্রেসিডেন্ট এসেম্বলির সিদ্ধান্তই মেনে নিয়েছিলেন। এবারই তার ব্যতিক্রম হল। সরকারী দল এই বিল বাতিলের আহবান জানিয়েছে। দলটির প্রধান লি জোং হিয়ন অনশনে নেমেছেন স্পিকার একটি দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন অভিযোগ করে। স্পিকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

audit
কৃষি, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অডিট বর্জন করেছে সরকারী দল

উপরের ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে বলার জন্য লিখছিনা। গণতন্ত্র চর্চার জন্য উপরের ঘটনা আমার কাছে অন্যতম বড় আদর্শ বলে মনে হয়েছে বলেই ঘটনাটা উল্লেখ করছি। সাধারণ কোরিয়ানরা বলে কোরিয়া এখনো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। কোরিয়ান রাজনীতিবিদরা প্রচন্ড দূর্নীতিবাজ, খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এখন পর্যন্ত কোন কোরিয়ানকে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করতে শুনিনি।

নিচের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়েই শেষ করছি।

-সরকারে থেকে সরকারী দলের পার্লামেন্ট বয়কট।
-কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অডিট শুরু হয়েছে। সরকারী দল অডিট বয়কট করেছে।
-সরকারী দল পার্লামেন্টের এই ভোটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। এবং সরকারী দলের প্রধান নিজে অনশন করছেন।

উপরের তিনটি পয়েন্টের উপসংহার হলো সরকার বিরোধীদলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে!

পুরো কোরিয়ার রাজনীতি এখন উথাল পাতাল এই ঘটনা নিয়ে। আরো মজার ব্যাপার হলো যে কারণে এত বড় ঘটনা সেটা হলো একজন মন্ত্রীর কম সুদে লোন নেওয়া। আবারও বলছি কম সুদে লোন!

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সরকার, রাজনৈতিক দল, বিরোধীদলের ভুমিকা এইসব এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবিষয়। কখনোই বাস্তবে ধরা দেয়নি। তারপরও স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। স্বপ্ন দেখি একসময় এইসব বিষয় বাস্তবে দেখার।

সরওয়ার কামালঃ সম্পাদক, বাংলা টেলিগ্রাফ।