Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট ওবামার শেষ ভাষণ

base_1474446891-president-obama

গতকাল মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অষ্টম এবং সর্বশেষ ভাষণ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার ভাষণের বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বর্তমান সিরিয়ার শরণার্থী ইস্যু। এছাড়া বিশ্ব সংঘাত, বিবাদ, অর্থনীতি, বৈষম্য, ইসরাইল-ফিলিস্তিন এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। জলবায়ু প্রসঙ্গটিও খুব গুরুত্বের সাথে তুলে এনেছেন ওবামা। সব সমস্যা সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতার কথাই বলেছেন বারবার।

chardike-ad

জনাব মহাসচিব, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্র মহোদয় ও ভদ্রমহিলা বৃন্দ: প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি এই হলে শেষবারের মতো বক্তৃতা দিচ্ছি, গত আট বছরে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি সেসব আজ স্মরণ করতে চাই।

সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের খাদে থেকেও আমরা আরো বড় ধরনের সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে সহযোগিতামূলক সাড়া দিয়েছি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আবার প্রবৃদ্ধিতে নিয়ে গেছি।

আমরা সন্ত্রাসের স্বর্গ বিনাশ করেছি, নিরস্ত্রিকরণের ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছি এবং ইরানের পরমাণু ইস্যুটি কূটনৈতিক তৎপরতায় সমাধান করেছি।

আমরা কিউবার সাথে সুসম্পর্কের দুয়ার খুলে দিয়েছি, কলম্বিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দীর্ঘতম গ্রীষ্মকালের সমস্যা দূর করেছি। আমরা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাকে এখানে এই সাধারণ অধিবেশনে স্বাগত জানিয়েছি।

আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্র হলো মানুষকে তার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসার সামর্থ্য তৈরি করা, আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়ন এবং পরনির্ভরশীলতার বদলে উন্নয়নের মডেলকে উৎসাহিত করা। বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা আরো বেশি প্রতিনিধিত্বশীল করেছি। আমাদের এই গ্রহকে জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য আমরা একটি রূপরেখাও প্রণয়ন করেছি- এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা মানুষের জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন এনেছে। এটা সম্ভব হতো না যদি না আমরা একসাথে কাজ করতাম। এবং এখনো আমরা বিশ্বব্যাপী দেখছি এই বৈশ্বিক ঐক্যের শক্তিই যা আমাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীল করে তুলেছে। যদিও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় গভীর ত্রুটি রেখা রয়েই গেছে।

আমরা প্রতিদিনই শিরোনামে এটি দেখি। নিষ্ঠুর সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে সীমান্তে স্রোতের মতো আসছে শরণার্থী। অর্থনীতির ভাঙন আমাদের শ্রমিক এবং পুরো জনগোষ্ঠীর ঘাড়ে চাপছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ ভূমি, মৌল নিরাপত্তা এবং মূল ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা দেখছি অনেক সরকার সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করছে, বিরোধীদের দমন করছে এবং তথ্য প্রবাহ সেন্সর করছে। সন্ত্রাসী চক্র আমাদের সন্তানদের কচি মনকে তাদের শিকারে পরিণত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, মুক্ত সমাজকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং নিরপরাধ অভিবাসী ও মুসলিমের বিরুদ্ধে হিংসার উসকানি দিচ্ছে। ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলো তাদের সীমাবদ্ধতাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে আন্তর্জাতিক আইন দিয়ে।

এটা একটা প্যারাডক্স (আপাত বৈপরিত্যপূর্ণ) যা দিয়ে আজকের বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। শীতল যুদ্ধের দুই দশক পর বিশ্ব এখন নানা উদ্যোগের ফলে অনেক কম সহিংস এবং আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধিশালী। এবং আমাদের সমাজ এখনো অনিশ্চয়তা, অস্বস্তি এবং দ্বন্দ্বে ভরা। ব্যাপক অগ্রগতির পর মানুষ এখন প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারিয়েছে, শাসন এখন আরো কঠিন এবং জাতি জাতিতে বিবাদ দ্রুত সামনে উঠে আসছে।

এবং আমি বিশ্বাস করি এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে একটি বিষয় বেছে নিতে হবে। আমরা সহযোগিতা এবং ঐক্যের একটি উন্নততর মডেল ধরে এগিয়ে যেতে পারি অথবা এমন এক বিশ্বে নিপতিত হতে পারি যা বহু পুরনো জাতি, গোষ্ঠী এবং ধর্মীয় বিভেদ এর ভিত্তিতে গভীরভাবে বিভক্ত এবং নিদেনপক্ষে বিবদমান।

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তার সাধারণ মানুষকেও প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের মতো যারা ক্ষমতায় আছি তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের বিশ্বব্যবস্থা এতোটাই সফল হয়েছে যে আমরা এখন ব্যাপারটা এভাবে ভাবতে পারি যে, বড় শক্তিগুলো আর বিশ্বযুদ্ধে জড়ায় না, শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি পারমাণবিক ধ্বংসলীলার ভীতি দূর করেছে, ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্র এখন একটি শান্তিপূর্ণ ইউনিয়ন, চীন এবং ভারত এখন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পথে।

তার মানে আমি এটা বলছি না যে, সব চ্যালেঞ্জ ধুয়েমুছে শেষ হয়ে গেছে বা এখানেই পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আরো সামনের দিকে যদি যেতে চাই, আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে বর্তমান বৈশ্বিক ঐক্য যে পথে আছে তার ত্রুটি সংশোধন দরকার। যেখানে যারা বিশ্বায়নের সুবিধা ভোগ করছেন তারা নিজেদের একং অন্য জাতির সঙ্গে বৈষম্যের কথা প্রায়ই ভুলে যান। উপেক্ষা করেন নৃতাত্ত্বি এবং গোষ্ঠীগত আত্মপরিচয়ের বহু বছরের দাবি; আন্তঃরাষ্ট্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য রাখা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপ্রস্তুত, তহবিল ও রসদ সঙ্কটে রাখেন।

এই বাস্তব সমস্যাগুলো উপেক্ষিত থাকার ফলে বিশ্বের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিগুলো (দর্শন) সম্পদশালী এবং গরীব উভয় দেশে সামনে চলে আসছে: ধর্মীয় মৌলবাদ; নৃগোষ্ঠীগত, আদিবাসী এবং গোষ্ঠীগত রাজনীতি; উগ্র জাতীয়তাবাদ; স্থূল জনবাদ- কখনো অতি বাম, কিন্তু অতি ডানদের পক্ষ থেকেই বেশি- যারা তাদের বিশ্বাসটাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

আমরা কিন্তু এই দর্শনকে উড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অনেক শক্তিশালী। তারা আমাদের বহু নাগরিকের অসন্তোষের প্রতিফলন। আমি বিশ্বাস করি না এসব দর্শন দীর্ঘমেয়াদে কোনো নিরাপত্তা বা উন্নয়ন দিতে পারবে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এইসব দর্শন আমাদের সাধারণ মানবিকতাকে স্বীকার করার ক্ষেত্রে মৌলিক স্তরেই ব্যর্থ হয়েছে। অধিকন্তু আমি বিশ্বাস করি, যাতায়াত, প্রযুক্তি এবং টেলি যোগাযোগ– একই সাথে বৈশ্বিক অর্থনীতি যা একটি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর নির্ভরশীল– তাদেরকে নিজের কাছেই পরাজিত করবে যারা এই অগ্রগতিকে পেছনের দিকে নিতে চায়। আজকাল একটি জাতি তাদের চারপাশে দেয়াল তোলা মানে নিজেকে কারারুদ্ধ করে রাখা।

সুতরাং উত্তরটা বৈশ্বিক মিলনকে অস্বীকার করার মতো সরল নয়। তা সত্ত্বেও এই মিলনের ফল ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারি এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক যে ভগ্নদশা এই বৈশ্বিক মিলনের কারণে তৈরি হয়েছে তা সার্বিকভাবেই চিহ্নিত করা একটা কাজ। এটা বিস্তারিত নীতির কোনো রূপরেখা প্রণয়নের স্থান নয়, তবে আমি সেসব সব বিষয় বিস্তারিতভাবে নির্দেশ করতে পারি যেসব জায়গায় আমাদের অবশ্যই আরো ভালো কিছু করতে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এটা শুরু হতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে সব মানুষের জন্য আরো কার্যকর করার মাধ্যমে, শুধু তাদের জন্য নয় যারা শীর্ষে রয়েছে। মুক্তবাজার এবং পুঁজিবাদ যখন বিশব্যাপী জীবনযাপনের মান বাড়িয়েছে, দ্রুত অগ্রগতির সাথে বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তি একই সঙ্গে শ্রমিকের অবস্থানকে নড়বড়ে করে দিয়েছে এবং তাদের ভালো মজুরি পাওয়ার সক্ষমতাকে দুর্বল করেছে। আমার মতো উন্নত অর্থনীতিতে ইউনিয়নগুলোর ভিত দুর্বল করে দেয়া হয়েছে এবং অনেক উৎপাদনশীল কাজ বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি যারা বিশ্বায়নের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তারাও প্রায়ই শ্রমিকদের অবস্থান দুর্বল করে দিতে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে প্রায়ই দাবিয়ে রাখা হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান পিছিয়ে পড়েছে দুর্নীতি এবং বিনিয়োগ অনীহার কারণে। সরকারের রপ্তানিমুখি বণিকনীতি ঐক্যের শক্তিকে দুর্বল করে তা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এবং বৈশ্বিক পুঁজি প্রায় জবাবদিদিতার বাইরে থাকছে- প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ট্যাক্স হেভেনে চলে গেছে, একটি ছায়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যা গড়ে উঠেছে কোনো পর্যবেক্ষণের নাগালের বাইরে।

এমন একটি বিশ্ব যেখানে এক শতাংশ মানুষ এতো পরিমাণ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে যে বাকি ৯৯ শতাংশ মিলিয়ে ততখানি হয়- এটা কখনো স্থিতিশীল হবে না। আমি জানি ধনী গরীবের এই বৈষম্য নতুন নয় কিন্তু বস্তিবাসী একটি শিশু এখন তার পাশেই গগণচুম্বি অট্টালিকা দেখতে পায়, আমাদের মধ্যেই বসবাসকারী কে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং তাদের এবং অন্যদের জীবনের মধ্যে যে ফারাক তা প্রযুক্তি যেকোনো মানুষকে একটা স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

প্রত্যাশা বেড়েছে সরকার যে গতিতে দিতে পারে তার চেয়ে বেশি দ্রুত। এই ব্যবস্থার মধ্যে মানুষের বিশ্বাসকে হেয় করার মতো কিছু বিকৃত বিচার বুদ্ধিও বেড়েছে।

এখন কীভাবে আমরা এই ভারসাম্যহীনতা ঠিক করতে পারবো? আমরা এই বৈশ্বিক মিলনের প্যাঁচ আর খুলতে পারবো না, তার চেয়ে প্রযুক্তিকে বাক্সবন্দি করে ফেলা সহজ। অতীতের ব্যর্থ কোনো মডেলেও ফিরে যেতে পারি না। আমরা বাণিজ্য যুদ্ধ, বাজার নিয়ন্ত্রণের ভর্তুকি, প্রতিবেশীকে ভিক্ষুক বানাও নীতি, উদ্ভাবনে জোর না দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অতিনির্ভরশীলতা- এর মধ্যেই যদি থাকি- এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সামগ্রিকভাবে আরো গরীব বানাবে, এগুলো আরো বেশি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। এবং পুরো দস্তুর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব যেমন: কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সাফল্য এবং উত্তর কোরিয়ার পতিত ভূমি দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় ও পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি আসলে অচল।

তবে আমি বিশ্বাস করি পথ আরেকটা আছে- একটি যা প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে। এবং ব্যাষ্টিক এবং সামষ্টিক সাফল্যের সুযোগ তৈরিতে পরিষ্কার পথ দেখায়। এটা হৃদয়হীন পুঁজিবাদের কাছে নতিস্বীকার নয় যা শুধু গুটিকয়েককে লাভবান করে কিন্তু তারচেয়ে এমন একটি অর্থনীতির কথা বলছি যা আরো সফল হবে যখন আমরা ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারবো এবং প্রবৃদ্ধি হবে সমগ্রতার ভিত্তিতে। এবং এর অর্থ শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো যাতে তারা স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন করতে পারে এবং জীবনধারণের মতো মজুরি পায়। এর অর্থ আমাদের জনগণের মধ্যে বিনিয়োগ- তাদের দক্ষতা, তাদের শিক্ষা, তাদের সক্ষমতা থেকে আইডিয়া বের করা এবং তা
একটি ব্যবসায় পরিণত করা। এর অর্থ নিরাপত্তা জাল শক্তিশালী করা যা আমাদের জনগণকে অস্বচ্ছলতা থেকে রক্ষা করবে এবং নতুন কাজ খোঁজা এবং নতুন একটি উদ্যোগ শুরু করার ব্যাপারে আরো ঝুঁকি নিতে সাহস জোগাবে।

এই নীতিগুলোই আমি যুক্তরাষ্ট্রে অনুসরণ করেছি এবং ফলাফল পরিষ্কার। আমেরিকার ব্যবসা খাত সাড়ে ১০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে। মন্দার পর শীর্ষ এক শতাংশ আমেরিকান ৯০ শতাংশের বেশি আয় বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আজ এই হার অর্ধেকে নেমে গেছে। গত বছর দারিদ্র্য যে হারে কমেছে তা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবং অবকাঠামো, শিশুশিক্ষা এবং মৌলিক গবেষণা খাতে বেশি বিনিয়োগ এই অগ্রগতি ধরে রাখবে, আমি নিশ্চিত।

যেমনটি আমি করেছি, আমার বিশ্বাস বিশ্বের গরীব ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য সর্বনিম্ন করতে উন্নত অর্থনীতিগুলোর এখনো অনেক কিছু করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে এটা করা কঠিন। বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর হয়েও করা কঠিন। কিন্তু আমি মনে করি না এটা দাতব্য কোনো বিষয়। ইরাক যুদ্ধে যা ব্যয় হয়েছে তার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থনে ব্যয় করতে পারতাম যাতে ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলো প্রথম ধাক্কাতেই ধসে না পড়ে এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করা যেত যা আমাদের পণ্যের বাজার হয়ে উঠছে। এটা শুধু সঠিকই নয়, একটা স্মার্ট ব্যাপারও বটে।

এ কারণেই আমাদের জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার। আমরা সাহসিকতার সাথে এটা যদি না করি তাহলে যে বকেয়া পড়ে যাচ্ছে তা ব্যাপক স্থানান্তর (মাইগ্রেশন), অনেক শহর তলিয়ে যাওয়া ও বহু মানুষ স্থানচ্যুত হওয়া, খাদ্য সরবরাহ ধ্বংস এবং নৈরাশ্য থেকে সংঘাত হয়ে ফিরে আসবে। প্যারিস চুক্তি আমাদের একটি রূপরেখা দিয়েছে এটা বাস্তবায়ন করা উচিত যদি আমাদের উচ্চাভিলাসকে আরেকটু বাড়াই। এই চুক্তি বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা সম্পর্কে বোধ তৈরি হওয়া উচিত।

আমি স্বীকার করি যে এই হলে যারা আছেন সেসব দেশ একই মডেলের সরকার ব্যবস্থা অনুসরণ করেন নাI আমি মনে করি না অন্য দেশের উপর আমাদের সরকার ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে পারে আমেরিকা বা তার পারা উচিত। কিন্তু স্পষ্টত স্বৈরতন্ত্র এবং উদারতাবাদের দ্বন্দ্ব চলছে। এবং সবাই বুঝুক যে আমি, এই দ্বন্দ্বে মোটেও নিরপেক্ষ নই। আমি একটি উদার রাজনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে, যে ব্যবস্থা শুধু নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের মাধ্যমে নয় অধিকন্তু মানবাধিকার এবং নাগরিক সমাজ এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন দ্বারা গঠিত।

সুতরাং হ্যাঁ আমার এই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে আমেরিকায় কিছু নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার আলোকে। কিন্তু আমি মনে করি না এই গল্পটা আমেরিকার অনন্য। বিভিন্ন দেশ যেমন জাপান, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, বোতসোয়ানার মতো দেশের পরিবর্তনগলো দেখুন। এই দেশগুলো যারা সফল হয়েছে যাদের জনগণ বুঝেছে যে তারা এর অংশীদার।

ইউরোপে সাবেক সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোর অগ্রগতি দেখুন যারা গণতন্ত্রের পথে এসেছে তাদের সাথে যারা এই পথে আসেনি তাদের পার্থক্যটা খুব স্পষ্ট। সর্বোপরি, ইউক্রেনের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল কারণ বাইরে থেকে কিছু ষড়যন্ত্র তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছি। তারা রাস্তায় নেমেছিল কারণ নেতারা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের কোনো উপায় ছিল না। তারা পরিবর্তন চেয়েছিল কারণ তারা দেখছিল বালটিক এবং পোল্যান্ডের মানুষ তাদের চেয়ে ভালো জীবন পেয়েছে। তাদের সমাজ অনেক বেশি উদার এবং গণতান্ত্রিক তাদের চেয়ে অনেক উন্মুক্ত।

হ্যাঁ, আমেরিকার রাজনীতিতে অনেক টাকা, অনেক দলবাজি খুব গভীরভাবে প্রোথিত, নাগরিকের অংশগ্রহণ খুব কম, কিছু আইনি দুর্বল কাঠামো ভোটের বিষয়টি কঠিন করে ফেলেছে। ইউরোপে, ভালো উদ্দেশ্যধারী ব্রাসেলস প্রায়ই জাতীয় রাজনীতির স্বাভাবিক টানা-পোড়েন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাজধানীতে নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই ভুলে যান গণতন্ত্র পরিচালিত হতে হয় নিচ থেকে উপরের দিকে এই প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, শীর্ষ থেকে নিচের দিকে এই প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা শাসিত হওয়া নয়। সুতারাং এটাই আসল সমস্যা। প্রত্যেক দেশের সরকার গঠন করা উচিত তাদের শত বছরের ইতিহাস, ভূপ্রকৃতির অবস্থা এবং জনগণের গভীর বিশ্বাসগুলো জেনে।

এটা স্বতঃসিদ্ধ সত্য যে, বৈশ্বিক একীভবন সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক, অভিবাসন, ইন্টারনেট সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এই বিষয়গুলো আমাদের বহু লালিত আত্মপরিচয়কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং বিচলিত করে তুলতে পারে। আমরা দেখি উদার সমাজগুলোও নারীরা যখন তাদের ঢেকে রাখতে চায় তখন বিরোধিতা করে। আমরা প্রতিবাদ দেখি যখন পশ্চিমা পত্রিকায় নবী মোহাম্মদের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপা করা হয়।

একটি বিশ্ব যা পেছনে একটি সাম্রাজ্য রেখে এসেছে, আমরা দেখি রাশিয়া বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চেষ্টা করে। এশীয় শক্তিগুলো ইতিহাসের দাবি নিয়ে বিতর্ক করছে। এবং ইউরোপ ও আমেরিকায়, আপনারা দেখছেন মানুষ অভিবাসী এবং পরিবর্তনশীল জনমিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা বলছে যে, যাদের অন্যরকম তারা আমাদের দেশের চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে কলুষিত করছে।

কিন্তু এখন এইসব সামাজিক চাপ সমাধানের কোনো সহজ উত্তর নেই। এবং মানুষ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, ধর্ম, নৃতাত্ত্বিক পটভূমি এবং তাদের জাতীয়তাবোধ থেকে যে অভিপ্রায় তৈরি হয় সেটাকে আমাদের সম্মান করা উচিৎ।

এই ধরনের মানসিকতা আমরা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই দেখছি। এখানে শৃঙ্খলার অনেক পতন ঘটেছে যার কারণ নেতারা বৈধতা চেয়েছেন, নীতি অথবা তাদের কর্মসূচির জন্য এমন হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিপীড়ন অথবা অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীকে খারাপ ভাবা, মসজিদে জনগণের জন্য স্থান সঙ্কীর্ণ করছে। এ ধরনের শক্তিগুলো অনেক বছর ধরেই তৈরি হচ্ছে এবং এখন সিরিয়াতে প্রাণঘাতি গৃহযুদ্ধ ও হৃদয়হীন, মধ্যযুগীয় ভীতি আইএসআইএল এর আবির্ভাবের পথ তৈরি করে দিয়েছে।

এই গোষ্ঠীবাদ, উগ্রবাদী মনোভাব এবং রক্তপাত এবং প্রতিফলের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে খুব দ্রুত এর পরিবর্তন আসবে না। এবং আমরা যদি আন্তরিক হই, আমরা বুঝতে পারবো বাইরের কোনো শক্তিই ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় অথবা নৃগোষ্ঠীকে দীর্ঘ সময় কখনোই জোর করে সহাবস্থানে রাখতে পারবে না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই সংঘাতগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে আন্তরিক হতে হবে এবং আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে যারা গড়তে চায় ভঙতে চায় না।

এখানে একটি সামরিক শক্তির বিষয়ও আছে। তবে সিরিয়ার মতো জায়গায় সামরিক বিজয় সম্ভব নয়। আমাদের কূটনৈতিকভাবে এগুতে অনেক কাজ করতে হবে- এই সহিংসতা বন্ধ করতে এবং ভুক্তভোগীদের ত্রাণ সরবরাহ করতে এবং তাদের সমর্থন দিতে হবে যারা একটি রাজনৈতিক মীমাংসার পথ ধরেছে।

এবং অবশ্যই ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালো হবে যদি ফিলিস্তিনিরা উসকানি বন্ধ করে এবং ইসরাইলের বৈধতা দেয়। কিন্তু ইসরাইলও বুঝতে পেরেছে তারা ফিলিস্তিনের ভূমি স্থায়ীভাবে দখল করে রাখতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি জানি, মানুষের ইতিহাসের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ক্ষমতা কখনো এক মেরুতে ছিল না। শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি অনেককে এই সত্যটা ভুলে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি দেখেছি, আমেরিকার প্রতিপক্ষ এবং আমাদের কিছু মিত্রও বিশ্বাস করে যে সমস্যা হয় ওয়াশিংটন থেকে তৈরি করা হয় নয়তো ওয়াশিংটন থেকে সমাধান করা হয়। এবং সম্ভবত ওয়াশিংটনেও অনেকে এটা বিশ্বাস করেন। (হাসি)। কিন্তু আমি বশ্বিাস করি, এখনো পর্যন্ত মানুষের ইতিহাসে আমেরিকা একটি বিরল সুপারপাওয়ার যা সঙ্কীর্ণ আপন স্বার্থের বাইরে ভাবতে চেয়েছে।

যেখানে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছে, যেটি বিশ্ব নিরাপত্তা বাড়িয়েছে এবং অন্যান্য দেশের সেঙ্গে ইরানের কাজ করার সামর্থ্য বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরপক্ষে উত্তর কোরিয়া একটি বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে যা আমাদের সবাইকে বিপদের মুখে ফেলেছে। এবং যেকোনো দেশ যারা মৌলিক বিনিময় ব্যবস্থা ভেঙে দেবে তাকে অবশ্যই ফল ভোগ করতে হবে। এবং আমেরিকার মতো যেসব দেশের এ ধরনের অস্ত্র আছে তাদের একটি অনন্য দায়িত্ব হলো- আমাদের মজুদ কমিয়ে ফেলার পথ ধরা এবং আর কখনোই পরীক্ষা না চালানোর প্রতিশ্রুতির মতো মৌলিক শর্তকে আবারো নিশ্চিত করা।

আমরা জিকার মতো রোগের সাথে যুদ্ধ করতে পারবো না যা কোনো সীমানা চেনে না, মশা যা কোনো দেয়াল মানে না…যদি না আমরা বোলার বিরুদ্ধে যেমন করেছিলাম তেমনভাবে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা না নেই। আমাদের জনস্বাস্থ্যকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, চিকিৎসা এবং রোগের মূল খোঁজার জায়গায় বিনিয়োগ এবং গরীব দেশগুলোতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অবকাঠামো নির্মাণে সাহায়তা না করি।

যদি রাশিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোতে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যায়, এটা তাকে হয়তো নিজ দেশে জনপ্রিয় করবে, হয়তো একটা সময় পর্যন্ত জাতীয়বাদীদের সমর্থন এনে দিবে কিন্তু সময় সাথ এর মর্যাদাকে খাটো করবে এবং সীমান্তকে বেশি অনিরাপদ করে তুলবে। দক্ষিণ চীনের বিবাদের সমাধানে আইনের দ্বারা সুরক্ষিত একটি শান্তিপূর্ণ চুক্তির মানে হলো আরো বেশি স্থিতিশীলতা।

এই সাধারণ অধিবেশনে সহযোগিতা বৃদ্ধির যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তাকে সবাই যারা এখানে জড়ো হয়েছেন তাদের স্বাগত জানানো উচিত। রাজনীতি অনেক কঠিন হলেও আমাদের এগুলো অনুসরণ করতে হবে। কারণ নিরপরাধ নারী পুরুষ এবং শিশুরা যাদের কোনো দোষ নেই, পরিচিত সব কিছু ছেড়ে যাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে, সব কিছু ছেড়ে যা তারা ভালোবাসতো, তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা দেখাতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে যদি আমাদের পরিবার, আমাদের সন্তানদের এবং এই অবর্ণনীয় ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটতো তাহলে কেমন হতো। এবং আমাদের সবার এটা বুঝা উচিত নিদেনপক্ষে আমাদের বিশ্ব আরো বেশি নিরাপদ হবে যদি আমরা বিপদগ্রস্তদের এবং সেইসব জাতীর জন্য যারা এইসব শরণার্থীদের জায়গা করে দিতে বিরাট বোঝা সম্মানের সাথে বহন করছে তাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকি।

অনেক দেশ এখন সঠিক কাজটিই করছে। কিন্ত অনেক দেশ বিশেষ করে যারা ধনসম্পদে আশীর্বাদপুষ্ট এবং ভৌগলিক অবস্থানের সুবিধাভোগী…যারা তাদের হাতটি বাড়িয়ে দিয়ে আরো কিছু করতে পারে। যদি তারা এই কথার উপর জোর দেয় যে, শরণার্থী যারা আমাদের দেশে আসছে তাদের দেশের সংস্কৃতি ও আমাদের জনগণের রীতিনীতির সঙ্গে নিজেদের আরো খাপ খাইয়ে নিতে হবে, তবু্ও।

আমি এই বলে একটি উপসংহার টানতে চাই যে, আমি স্বীকার করি ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে, এখানে একজনের সাথে আমি যে কথা বলেছি তার চেয়ে ভিন্ন। মানবজাতি প্রায়ই লোভ এবং ক্ষমতার দ্বারা প্ররোচিত হয়। ইতিহাসের বেশিরভাগ জুড়ে দেখা যায় বড় দেশগুলো ছোট দেশগুলোকে চারদিক থেকে চাপে রাখে। আদিবাসী এবং নৃগোষ্ঠী এবং জাতিরাষ্ট্রগুলো যা তারা ঘৃণা করে এবং তাদের এক করে ফেলতে পারে এমন ধারণাগুলো বাদ দিয়ে নিজেদের সংজ্ঞায়িত করতেই বেশি পছন্দ করে।

প্রিজন সেলে বসে একজন তরুণ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র লিখেছিলেন, “মানবজাতির অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবিতার চাকায় চড়ে চলে না; এটা আসে ঈশ্বরের সহযোগী হওয়ার জন্য মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা থেকে”।

এটাই আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা সবাই ঈশ্বরের সহযোগী হতে পারি। এবং আমাদের নেতৃত্ব, আমাদের সরকার এবং এই জাতিসংঘকে এই কঠিন সত্যকে প্রতিফলিত করতে হবে।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

(সংক্ষেপিত)

সূত্র: ল্যাটিনপোস্ট, কার্টেসি: হোয়াইট হাউস