Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুুই শতাধিক ওষুধের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো

medicine

রাজধানীসহ দেশের সবখানে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছয়টি গ্রুপের দুই শতাধিক ওষুধের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। কোনো কোনো ওষুধের ক্ষেত্রে এ দাম সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। হঠাত্ বহুল প্রচলিত এসব ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কয়ার, ইনসেপ্টা, ওরিয়ন, হেলথকেয়ার থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের তৈরি ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিউরোপ্যাথি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়াবেটিস, ঠাণ্ডাজনিত রোগ ও ঘুমের ওষুধ এবং ক্যালসিয়ামের দাম। ১০ থেকে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে ক্লোনাজিপাম, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম+ভিটামিন ডি৩, ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড, পটাশিয়াম বাইকার্বনেট+সোডিয়াম অ্যালজিনেট এবং ম্যাগালড্রেইট+সিমেথিকোনসহ বিভিন্ন গ্রুপের ওষুধের দাম।

chardike-ad

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ক্লোনাজিপাম গ্রুপের ৬০টি ২ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের মূল্য ছিল ৩৬০ টাকা। বর্তমানে তা ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই ওষুধের দশমিক ৫ মিলিগ্রামের ৬০টি ওষুধের দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, ১ মিলিগ্রামের ৬০টি ওষুধের দাম ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে।

ভিটামিন বি১+ভিটামিন বি৬+ভিটামিন বি১২ ওষুধ ৩০টির দাম আগে ১৫০ টাকা থাকলেও এখন তা ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি প্লাস ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২১০ টাকা, ফেক্সোফেনাডিন হাইড্রোক্লোরাইড ১২০ মিলিগ্রামের ৫০টি ট্যাবলেট ৩২৫ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, পটাশিয়াম বাইকার্বনেট ১২৫ টাকার সিরাপ ১৫০ টাকা এবং ম্যাগালড্রেইট+সিমেথিকোন ১০০ টাকার সিরাপ ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শশাঙ্ক কুমার সাহা জানান, নিউরোপ্যাথি ও ডায়াবেটিস রোগী এবং যাদের পিঠে ও পায়ে ব্যথা রয়েছে, তাদের ভিটামিন বি১+ভিটামিন বি৬+ভিটামিন বি১২ ট্যাবলেট দেয়া হয়। এছাড়া শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে, এমন মানুষকেও এ ট্যাবলেট সেবন করার পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের মূল্য বাড়ানোর জন্য ঔষধ প্রশাসনে প্রস্তাব পাঠায়। ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ী তাদের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হয়।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক জানান, উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক কোম্পানি প্যাকেটের আকার বড় করছে। আগে যেখানে প্রতি প্যাকেটে ৩০টি ওষুধ ছিল, এখন সেখানে ৬০টি ওষুধ থাকছে। একইভাবে ৫০টির স্থলে ১০০টি এবং ১০০টির স্থলে ২০০টি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের প্যাকেট করছে কোম্পানিগুলো। এতে ওষুধের উৎপাদন খরচ কিছু কমলেও কোম্পানিগুলো দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়ে দিয়েছে।

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিপণন) আতিকুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রত্যেকটি ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, উন্নত কাঁচামাল ব্যবহার এবং প্যাকেটের মূল্যবৃদ্ধি। ওষুধের গুণগত মান ধরে রাখতে আমরা উন্নত মানের উপাদান ব্যবহার করছি। এছাড়া নকল-ভেজাল রোধে প্যাকেটে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে।

পাইকারি ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে কোনো ওষুধের মূল্য বাড়ানোর আগে কোম্পানিগুলো  সেসব ওষুধের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। পরে তারা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে বাজারে এসব ওষুধ সরবরাহ করে। একটি কোম্পানি মূল্য বাড়ালে অন্যান্য কোম্পানিও তাদের  পথ অনুসরণ করে থাকে।

জানতে চাইলে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতির প্রণেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়েনি, বরং কোনো কোনোটির কমেছে। এ অবস্থায় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি অনুসরণ না করায় কোম্পানিগুলো দফায় দফায় পণ্যটির মূল্য বাড়িয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ডাকাতি করছে। এটা দুর্নীতির শামিল। সরকারের নীরবতার কারণে ওষুধ কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিচ্ছে।

মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, কোনো ওষুধ সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) পর্যায়ে বাড়ানো হলে সেটি মূল্য নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে থাকে। সেখানে মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করতে হয়। পরে ওই কমিটি মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবারই দাম বৃদ্ধির পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোম্পানিগুলোর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন যে, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ উন্নত মানের কাঁচামাল ব্যবহার, ওষুধের গুণগত মান ধরে রাখা, নতুন নতুন মেশিন স্থাপন, বিপণন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, প্যাকেজিং, প্রমোশন ও কারখানার খরচ বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এবারো অনেকটা একই কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশের চিকিত্সকরাই দায়ী। কারণ তারা রোগীকে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে থাকেন। কখনো কখনো ১০-১২টি পর্যন্ত ওষুধ একজন রোগীকে লিখে থাকেন। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তা।

১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এক আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে বলা হয়, ১১৭টি ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়া অন্যান্য ওষুধের মূল্য স্ব স্ব কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করবে। এ আদেশের পরবর্তী প্যারায় বলা হয়, তালিকাভুক্ত ওষুধের (১১৭টির) শতকরা ৬০ শতাংশ ওষুধ তৈরি করতে হবে। কিন্তু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানি দু-একটি ওষুধ ছাড়া কোনোটিই উৎপাদন করছে না। তবে বড় দুটি কোম্পানি ৭-১১ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করছে। বণিকবার্তার সৌজন্যে।