Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

base_1480306118-ctg-port-3রফতানির শর্তে শুল্কমুক্ত (বন্ড) সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারেন কারখানার মালিকরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে এসব কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা। গত দুই বছরে অর্ধশতাধিক অ্যাকসেসরিজ প্রতিষ্ঠান অন্তত ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে— এমন প্রমাণ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে গোল্ডেন সান ও লিবার্টি গ্রুপ প্রতিষ্ঠান মিলে ফাঁকি দিয়েছে ৮৮ কোটি টাকার রাজস্ব।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে ৬৩টি প্রতিষ্ঠান অন্তত ৩৯৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বন্ডের পণ্য খোলা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সরকারকে ২৩২ কোটি ৩ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় ১৫৯টি মামলা হয়েছে।

chardike-ad

একই অভিযোগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৮১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৬৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা) রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে চট্টগ্রামের বদ্দারহাট এলাকার মেসার্স লিবার্টি অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড ও লিবার্টি গ্রুপের আরো ছয়টি প্রতিষ্ঠান। বন্ড কমিশনারেটের ২৪টিসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অন্তত ৩০টি মামলা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামের খোয়াজনগর এলাকার মেসার্স গোল্ডেন সান লিমিটেডের কারখানায় অভিযান চালিয়ে গত দুই বছরে ২১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির দায়ে নয়টি মামলা করেছে বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

মেসার্স জেএমএস গার্মেন্টস ১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, মেসার্স ডাফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ১২ কোটি ৮৫ লাখ, চট্টগ্রাম নন্দির হাট এলাকার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মৌরেন এন্টারপ্রাইজ ৯ কোটি ৪০ লাখ, মেসার্স ফাস্ট প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ২ কোটি ২৮ লাখ, মেসার্স এএ অ্যাকসেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ ১ কোটি ৬৮ লাখ ও কালুরঘাটের রিগ্যান পলি প্যাকেজিং লিমিটেডে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়। এছাড়া আরো অন্তত অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মুহাম্মদ মুবিনুল কবির  বলেন, ‘বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি লাভের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করছেন। রফতানির শর্তে কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ফাঁকি প্রতিরোধে সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শন, মজুদ যাচাই, মূসক ও ডেলিভারি চালান যাচাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির প্রাপ্যতা (ইউপি) দেয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা, বিদ্যুত্ বিলের কপির মাধ্যমে বিগত সময়ে কি পরিমাণ উৎপাদন করা হয়েছে— তা যাচাই করা হচ্ছে।’

শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার রোধে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক এসএম শামীমুর রহমান বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিভিন্ন কাঁচামাল এনে খোলা বাজারে বিক্রি করার দায়ে প্রতি বছরই বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। মূলত শুল্ক গোয়েন্দারা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এসব অনিয়ম উদ্ঘাটন করে থাকেন। এ ধরনের অনিয়ম রোধে কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে তদারকি বাড়াতে হবে। শুল্ক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পণ্য ডেলিভারি দেয়া হলে অনিয়ম কমে আসবে। এরই মধ্যে বন্ড কমিশনারেট এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছে।’ এর প্রভাবে অনিয়ম কমে আসছে বলে এ সময় দাবি করেন তিনি।

বণিক বার্তাকে