Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুই মাসে ২১ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে

indonesia_-malaysia_-_myanmar_-_rohingyaমিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে ২১ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) বরাত দিয়ে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

অক্টোবরের শুরুতে রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সে সময় থেকেই দেশটি থেকে বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সীমান্তে ভিড় করে। আর এ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশও সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটি থেকে ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অভিবাসন-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএমের কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান সংযুক্ত সাহানি বলেন, গত ৯ অক্টোবর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের অন্তত ২১ হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।

chardike-ad

জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ঢাকা কার্যালয়ও অনুরূপ তথ্য জানিয়েছে। তাদের মতে, গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে নতুন করে ২১ হাজারের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। গত দুই মাসে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। এ সময়কালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু বহনকারী কয়েকশ নৌকাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে শুধু সীমান্ত পেরোতে এসেই মারা পড়েছে। নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত সোমবার সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। নৌকাটির অনেক যাত্রীকেই এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। নৌকাটিতে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা ছিল বলে জানান জীবিত উদ্ধার হওয়া এক আশ্রয়প্রার্থী নারী। গতকাল নৌকাডুবির স্থানটির কাছে এক নারীর মরদেহ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশপ্রধান আবদুল মজিদ।

এদিকে মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়। দেশের ভেতরেও বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের কাছ থেকে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে সরকার থেকে শুরুতেই বলা হচ্ছে যে, সীমান্ত খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের কাছে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, কাগজ-কলমে বাংলাদেশে বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থীর দায় জাতিসংঘ নিয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে এ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

মিয়ানমারের রাখাইনে গত ৯ অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ঘর হারানো এসব মানুষ নিকটবর্তী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। স্থানীয় একটি পুলিশ ফাঁড়িতে বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সন্দেহভাজন হামলাকারী খোঁজার নামে এ অভিযান চালানো হলেও মূলত রোহিঙ্গা নিপীড়নই এর উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ রয়েছে। শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ একে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এদিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভিযানের নামে আদতে পুরো একটি জাতিকে নিধন করছে। আর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অন্তত কয়েকশ বসতি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির শান্তিতে নোবেল পাওয়া গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু চির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘ সময় নিশ্চুপ থাকলেও গত সপ্তাহে অবশেষে তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তবে তিনি রাখাইনের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।