Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রেসিডেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনেক দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছেন বিক্ষোভকারীরা। আজ শুক্রবার প্রেসিডেন্টের অভিসংশনের পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। পাল্টামেন্টে ২৩৪-৫৬ ভোটের ব্যবধানে এই প্রস্তাব পাস হয় বলে বিবিসির খবর প্রকাশ।

aen20161129006852315_02_i

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের পর পার্কের ক্ষমতা আপাতত প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তাবে। পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে অভিশংসনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে ১৮০ দিনের মধ‌্যে অনুমোদন দেবে দেশটির সাংবিধানিক আদালত।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই রাজনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পার্কের এবং তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ছোয়ে সুন সিলকে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বন্ধুকে সুবিধা পাইয়ে দিতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে প্রেসিডেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে গত ছয় সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছিল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের রাস্তায়। জনমত জরিপে পার্কের জনপ্রিয়তা নেমে এসেছিল মাত্র চার শতাংশে।

প্রেসিডেন্ট পার্ক ও ছোয়ে সুন সিলের সম্পর্ক

প্রেসিডেন্ট পার্ক এবং ছোয়ে সুন সিলের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৭৪ সালে পার্কের মা-কে হত্যা করে উত্তর কোরিয়ার এক গুপ্তচর। তবে লক্ষ্য ছিল তার বাবা সামরিক শাসক পার্ক চুং হি-কে হত্যা করা। ২২ বছর বয়সী পার্ক তখন ইউরোপে পড়াশুনা করছিলেন। দেশটির ফার্স্ট লেডি হওয়ার জন্য পার্ক তখন দেশে ফিরে আসেন।

soeul-park

ছোয়ে থে মিন নামে এক সিউডো খ্রিস্টান নেতার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল পার্কের। যিনি চার্চের ধর্মানুষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পার্কের প্রয়াত মায়ের আত্মার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। পার্ককে পরিচালনার জন্য তিনি তাকে অনুরোধ করেছেন। এরপর তিনি পার্কের মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন করেন ঐ খ্রিস্টান নেতা।

পার্কের বাবা ১৯৭৯ সালে গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের হাতে নিহত হন। জল্পনা আছে, গোয়েন্দা প্রধান উদ্বিগ্ন ছিলেন প্রেসিডেন্ট ‘কোরিয়ান রাসপুতিন’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

এখানে বলা রাখা ভালো, চোই তাই মিনের মেয়ে ছোয়ে সুন সিলের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তবে সমালোচকরা মনে করেন, ছোয়ে সুন সিল তার পিতার অভ্যাস দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

কেন তাদের বন্ধুত্ব সমস্যায় পরিণত হলো?

কেউ কেউ দাবি করেছেন, স্ক্যান্ডাল নিয়ে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে রঙ চড়ানো হয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে এমনও লেখা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতুলে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট কম্পাউন্ডে আধ্যাত্মিক চর্চার আয়োজন করতেন। তবে অনেকে দাবি করেছেন, এটি প্রমাণিত নয়।

পার্কের বন্ধু ছোয়ে সুন সিলকে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, ছোয়ে সুন সিল সরকারের বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে মধ্যস্থতা করছেন এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রেসিডেন্টের আরেকজন সহযোগীকে গোপন নথি প্রকাশের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ছোয়ে’র বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের প্রভাব খাটিয়ে তিনি কয়েকটি কোম্পানিকে তার দুটি দাতব্য সংস্থায় কয়েক মিলিয়ন ডলার দান করতে বাধ্য করেন। স্যামসাং, হুন্দাই-এর মতো কোম্পানিগুলো এর মধ্যে রয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় আদালতে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণ থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট পার্ক এতে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি চোই এবং দুটি রাষ্ট্রীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছোয়ে ফাউন্ডেশন চালু করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে।

প্রেসিডেন্টের আরেক সহযোগীর মাধ্যমে সরকারে ব্যাপক গোপন নথি সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে মিস ছোয়ে’র বিরুদ্ধে। এই গোপন নথির মধ্যে উত্তর কোরিয়া এবং মন্ত্রিত্ব প্রত্যাশী প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য ছিল।

এমন দাবিও করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের পোশাক কেনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে চোই কম দামের পোশাক ক্রয় করতেন এবং বাড়তি টাকা রেখে দিতেন।

গত ২০ নভেম্বর ছোয়ে’র বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। তার মধ্যে রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, বলপ্রয়োগ এবং প্রতারণার চেষ্টা।

প্রেসিডেন্টের দুজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নিজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সহযোগী ছিলেন।

তবে যাবতীয় অভিযোগ বার বার প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট পার্ক।