বায়ুমণ্ডলে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে মিথেন গ্যাস। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০০ সালের সাময়িক স্থবিরতার পর হঠাৎ করেই এ গ্যাসটির মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন শঙ্কা। কারণ মিথেন গ্যাসও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় গ্রিন হাউজ প্রভাব তৈরি করে। যদিও তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে কম মাত্রার ক্ষতিকর।
গবেষকরা সতর্ক করছেন যে, বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের বৃদ্ধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলার সব চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
গেলো সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন (এজিইউ) আয়োজিত মিথেন গ্যাসের ওপর এক আলোচনা সভায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট জ্যাকসন বলেন, কার্বন ডাই অক্সাইড প্রশমনের জন্য এখনো বড় একটা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাকি রয়েছে। তবে কার্বন ডাই অক্সাইডের পাশাপাশি যদি মিথেন গ্যাসের নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্য রক্ষা না হয় তাহলে তা ভবিষ্যতে ঝুঁকি তৈরি করবে।
তবে হঠাৎ করে বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস কেন বেড়ে গেলো তা এখনো স্পষ্ট নয়। ২০০০-২০০৬ সাল পর্যন্ত এ গ্যাসের হার একটা স্বাভাবিক মাত্রায় ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে তা সামান্য বেড়ে যায় এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে স্পষ্টভাবেই অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
এই শেষ দুই বছরে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে, এ সময়ে গ্যাসটির পরিমাণ বছরে প্রায় ১০ (পার্টস পার বিলিয়ন) পিপিবি বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮৩০ পিপিবির বেশি। বিপরীতে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে এটি নির্গমনের বার্ষিক হার প্রায় ৪০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) এর কিছু বেশি।
অধ্যাপক জ্যাকসন বলছেন, যদিও মিথেন গ্যাস সৃষ্টির অনেক উৎস রয়েছে তবে ব্যাপক হারে এ গ্যাস বৃদ্ধির মূল কারণ সম্ভবত কৃষি উৎপাদন।
‘আমরা দেখেছি গত দশকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে , তবে আমরা মনে করি জৈব উৎস ও ক্রান্তীয় উৎসের অত্যধিক উষ্ণতা এর জন্য দায়ী।’ যোগ করেন তিনি।
কৃষিভিত্তিক উৎসগুলোর মধ্যে গবাদি পশু ও অন্যান্য জাবর কাটা তৃণভোজী প্রাণি এবং ধানক্ষেতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া জলাভূমি থেকেও মিথেন নিঃসরণ এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বিগত একশ বছর ধরে বায়ুমণ্ডলের তাপ ধরে রাখতে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ৩০ গুণ বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে মিথেন গ্যাস।
কয়েকটি গ্যাসের সংমিশ্রণে পৃথিবী কীভাবে উষ্ণ হবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে তা উদঘাটনের চেষ্টা করছেন। এছাড়া বর্তমানে মিথেন গ্যাস যে হারে বাড়ছে তা ভবিষ্যতে বিশ্ববাসীকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। না হলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা তা বিফল হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা অনেক আশাবাদী কারণ এ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য নতুন একটি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হচ্ছে, যা নিয়মিতভাবে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ ও অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে।
সূত্র: বিবিসি