Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

‘আমি রানিং একটা মিনিস্টারের লগে ঘুরি’

BTT‘আমি রানিং একটা মিনিস্টারের লগে ঘুরি। বাংলাদেশের ভেতরে এক নম্বর মন্ত্রী থাকলে আমার মন্ত্রী। আমি একটা পুলিশ অফিসার। আমি একটা হিউম্যান রাইটসের ই…। তোর মতো ছ্যামড়া আমারে নিয়া বাজে কথা কস… বাচ্চা!’

কথাগুলো নাজমুল ইসলাম হান্নান মিঞার। তিনি সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই)। এখন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের গানম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। হুমায়ুন কবির সিকদার নামের এক ব্যক্তিকে তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।

chardike-ad

হুমায়ুন কবির সিকদার পটুয়াখালীর লোহালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই এলাকার বাসিন্দা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গানম্যান হান্নান মিঞা। হুমায়ুন কবিরের অভিযোগ, হান্নান মিঞা এলাকার বেকার যুবকদের স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়গুলো নিয়ে হুমায়ুন এলাকায় কথাবার্তা বলে এএসআই হান্নানকে অবহিত করার চেষ্টা করেন।

হুমায়ুনের দাবি, এরপরই নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন এএসআই হান্নান। এমনকি বাড়িতে লোক পাঠিয়ে গালাগাল ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

গত ২৭ ডিসেম্বর হুমায়ুন কবির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এএসআই হান্নানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে হুমায়ুন কবির বলেন, এএসআই নাজমুল ইসলাম হান্নান মিঞা অবৈধ উপায়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট, বরিশাল শহরে দুটি প্লট, পটুয়াখালী শহরে একটি বাড়ি ও দুটি প্লটের মালিক হন। তিনি নিজের পোস্টার ছাপিয়ে নিজের সুনাম করে বেড়ান। ওই পোস্টারে এএসআই হান্নান দাবি করেন, ‘জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার বাংলাদেশ এরিয়ার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার পদে’ তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

লোহালিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ওই পোস্টার লাগানো আছে।

হুমায়ুন কবির অভিযোগ করেন, গত ১৬ ডিসেম্বর এএসআই হান্নানের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্বজনদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। ‘৮/১০ সন্ত্রাসী’ তখন হুমায়ুনের হাত-পা ভাঙার জন্য আসে বলে জানায়। এ সময় হুমায়ুন কবির বাড়িতে ছিলেন না বলে জানান। হুমায়ুনকে না পেয়ে স্বজনদের হত্যার হুমকিও দেয় তারা। তিনি আরো জানান, এএসআই হান্নান মামলা ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়েছেন। ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিচ্ছেন।

‘কী করতাসি দেখ’

হুমায়ুন কবির ওই অভিযোগে উল্লেখ করেন, পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বারবার ফোন করে এএসআই হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য চাপ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে এএসআই হান্নানকে ফোন করেন তিনি। তখন এএসআই হান্নান অকথ্য ভাষায় হুমায়ুনকে গালাগাল করেন।

হুমায়ুনের ফোন পেয়েই ক্ষিপ্ত হন এএসআই হান্নান। তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার নিজের বিপদ নিজে ডাইকা আনছ।’ তিনি বলেন, ‘তুই আমারে নিয়া আউল-ফাউল কথা কস, তোর এত বড় সাহস! তোর চৌদ্দগুষ্টি পারে আমারে নিয়া বাজে মন্তব্য?’

এএসআই হান্নান আরো বলেন, ‘তোরে আমি কী করতাসি তুই দেখ! তোগো দুই ভাইয়েরে আমি বারোটা বাজামু। তুই কোন.. ছিঁড়তে পারিস ছেড়।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা আছে, যেখানে আমার লোক নাই। এমন কোনো জায়গা আছে, যেখানে আমার পোলাপান নাই!’

এএসআই হান্নান বলেন, ‘আইজির লগে আমার ছবি দেহ না পোস্টারে? তোর কাছে ভুয়া র‍্যাব পাঠাতে হয়? ওপেন র‍্যাব পাঠালে কী হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমি কালই ঢাকায় যাইতেছি। তোর ভাই কোন এলাকায় থাকে। পয়লা তোর ভাইরে ধরমু। আর ধরমু তোর বাপেরে। তোরে কিসু কমু না। তুই তো একটা পাগল।’

‘শিগগিরই তদন্ত করবেন’

পুলিশ কর্মকর্তার ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো সরকারি কর্মকর্তা এটা করতে পারেন না। এটি চাকরিবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। চাকরিবিধি অনুযায়ী, এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘এএসআই হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চিঠি তাঁর কার্যালয়ে আসে। পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান তাঁকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তিনি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এখনো কাজ শুরু করতে পারেননি। শিগগিরই তদন্ত করবেন।’

‘এই সব মিথ্যা, বানানো’

এ অভিযোগের বিষয়ে এএসআই হান্নান মিঞা বলেন, ‘পোস্টার তো একজনের নামে অন্য কেউ ছাপাতে পারে। আমি চাকরি করি, আর যে চাকরি করে সে কি কোনো পোস্টার ছাপাতে পারে? পূর্বশত্রুতার কারণে, আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে।’

অভিযোগকারী হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে আপনার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান মিঞা বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি হজ করে আসছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, আমার বিরুদ্ধে যদি কেউ কোনো ষড়যন্ত্র করে তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

ফোন রেকর্ড সম্পর্কে এএসআই হান্নান বলেন, ‘এই সব মিথ্যা, বানানো, এখন সবকিছু ইচ্ছা করলেই বানানো যায়। এটি আমার ফোন রেকর্ড নয়।’

আপনার ছবি দিয়ে এলাকায় পোস্টার ছাপানো হয়েছে জানার পর ব্যবস্থা নেননি কেন—জানতে চাইলে এএসআই হান্নান বলেন, ‘আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা আমাকে বলেছে, কেউ যদি রাতের আঁধারে কোনো কিছু করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ মামলা করতে বলেছে। কিন্তু আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব। যেহেতু তারা আমার এলাকার লোক, এখন আমি যদি তাদের একটা ক্ষতি করি, আমার বিবেকে এটা বাধা দেয়, তার ভুল সে একসময় বুঝবে। যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা বলবে তুমি এই কাজ করলে!’

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সংস্থার পদ সম্পর্কে এএসআই হান্নান বলেন, ‘আমি এ রকম কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নই। সবকিছু পরিকল্পিত।’

সূত্র ঃএনটিভি