উৎপাদিত গ্যাস রফতানির সুযোগসহ বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ পাচ্ছে কোরিয়ান কোম্পানি পোসকো দাইয়ু। গভীর সমুদ্রের ১২ নাম্বার ব্লকে অনুসন্ধান করবে দক্ষিণ কোরীয় এ কোম্পানি। এ বিষয়ে আগামীকাল দাইয়ুর সঙ্গে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের (বিশেষ আদেশ) আইন-২০১০ সালের আওতায় এ কাজ পাচ্ছে দাইয়ু।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, প্রতিবেশী দেশ যখন বিদেশী বিনিয়োগ পেয়েছে আমরা তখন আমাদের উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) শক্তিশালী না হওয়ায় বিনিয়োগ পাইনি। তবে এরই মধ্যে পিএসসি সংশোধন করা হয়েছে। এর আলোকে দাইয়ুকে গভীর সমুদ্রে একটি ব্লকে অনুসন্ধানের কাজ দেয়া হচ্ছে। জানা যায়, এর আগে গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬, ২১ নাম্বার ব্লকে কাজ করার অগ্রহ প্রকাশ করে পেসকো দাইয়ু ও ক্রিস এনার্জি। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রিস এনার্জি তাদের প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়ায়।
গভীর সমুদ্রের ১২ নাম্বার ব্লকটি মিয়ানমারের গ্যাস ব্লক এডি-৭-এর থালিন-১-এ গ্যাসকূপের ঠিক পাশেই অবস্থিত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের এ গ্যাসক্ষেত্রে সফল অনুসন্ধান চালায় পোসকো দাইয়ু। বাংলাদেশের আওতাধীন ব্লক-১২-এর সঙ্গে ব্লক এডি-৭-এর ভৌগোলিক অবস্থানগত সাদৃশ্য রয়েছে। এ কারণে ব্লক-১২তেও প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস মজুদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফেব্রুয়ারিতে ব্লক-এডি-৭-এ গ্যাসের মজুদ নিরূপণের পর সেখানে এখন কূপ খননের কাজ করছে পোসকো। এছাড়া মিয়ানমারের গভীর সমুদ্রে এ-১ ও এ-৩ গ্যাস ব্লক দুটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৩ সাল থেকেই ব্লক দুটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করছে পোসকো।
এখনো খননের পর্যায় চললেও পোসকোর হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারের এডি-৭ গ্যাস ব্লকে সাড়ে চার লাখ কোটি ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। এ মজুদ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) তিন বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব। বাংলাদেশের ব্লকটিতেও একই পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্লকের উন্নয়নের পর বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে আরো কয়েকটি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান ও তার উন্নয়নে কাজ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রস্তাবের ভিত্তিতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু মন্ত্রিসভা কমিটি এ বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তি শেষ করার আদেশ দিয়ে ফেরত পাঠায়।
মন্ত্রিসভা কমিটির নির্দেশে এরই মধ্যে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) সংশোধন করেছে। সংশোধিত পিএসসি অনুযায়ী, উৎপাদিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ প্রতি ঘন ফুট সাড়ে ৬ ডলার হারে পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করতে পারবে। এর পর বাকি গ্যাসে বিদেশী কোম্পানি তাদের স্বার্থ ও শর্ত অনুযায়ী পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করবে। কিন্তু যদি পেট্রোবাংলা তা কিনতে রাজি না হয়, তবে বিদেশী কোম্পানি ওই গ্যাস বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু সেখানেও যদি কোনো কোম্পানি রাজি না হয়, তবে ওই গ্যাস এলপি গ্যাসে (বোতল) করে বিদেশে রফতানি করতে পারবে।