Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চালু হলো দেশে কোকাকোলার প্রথম কারখানা

base_1484806240-Coca-Cola-__KKN_11154-(1)

২০১০ সালে ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগ বোর্ডের আওতায় কারখানা স্থাপনের নিবন্ধন নেয় কোকাকোলা। সে সময় ২০১৩ সালে কারখানায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কারখানা চালু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে গতকাল নিবন্ধনের ছয় বছর পর ময়মনসিংহের ভালুকায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে কোকাকোলার কারখানা।

chardike-ad

গতকাল কোকাকোলা কোম্পানির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজেস প্রাইভেট লিমিটেড ময়মনসিংহের ভালুকায় আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বটলিং প্লান্ট বা বোতলজাত কারখানা উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, গ্রাহক ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ দেশে কোম্পানির ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অংশ হিসেবে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কোকাকোলা কোম্পানি নতুন এ কারখানা স্থাপনে ৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আর বাকি ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পণ্য বিপণন ও বিপণন-সংক্রান্ত কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা হবে। প্রাথমিকভাবে এ কারখানায় দুই ধরনের পণ্য উত্পাদন হবে। পণ্যগুলো হচ্ছে কোকাকোলা, ফান্টা ও স্প্রাইট এবং কিনলে পানি। এতে সরাসরি দেড় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর পরিবহন, উত্পাদন ও প্যাকেজিং সাপ্লাইসহ পুরো ভ্যালু চেইন প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে আরো এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বে কোকাকোলা একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। আজকের এ মহোত্সবে আমি সরকারের পক্ষ থেকে কোকাকোলা কর্তৃপক্ষকে তাদের এ নতুন কারখানা উদ্বোধন উপলক্ষে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি বরাবরই কোকাকোলার ভক্ত এবং তা শুরু হয় ১৯৬৩/৬৪ সাল থেকে, যখন আমি বিদেশে ছিলাম। তিনি বলেন, দেশে এখন বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণের জন্য তিনি দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ

প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তার হস্তক্ষেপেই বাংলাদেশ সরকারের সব নিয়মনীতি মেনে দ্রুততার সঙ্গে দেশে কোকাকোলার নিজস্ব কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিতে পেরেছি। যেহেতু কোকাকোলা মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই আমার বিশ্বাস তাদের এ উদ্যোগ অবশ্যই সফল হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি গর্বিত। এ বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশের জনগণের সামনে জীবনযাপনের মানোন্নয়নের সুযোগ তৈরি হলো। এ কারখানায় উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়া ব্যক্তিরাও কাজের সুযোগ পাবেন। কোকাকোলা এ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ বিনির্মাণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে তারাও অংশীদার হতে চায়।

কোকাকোলা কোম্পানির প্যাসিফিক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জন মারফি বলেন, কোকাকোলা কোম্পানি বাংলাদেশে এ বিনিয়োগকে হাল্কাভাবে নেয়নি। আমরা নানা কারণেই বাংলাদেশে এ কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণের ইতিবাচক মনোভাব এবং উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জনবলের সহজলভ্যতা। বাংলাদেশের বর্তমান ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারায় একটি অপরিহার্য অংশ হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

কোকাকোলার নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানির বটলিং ইনভেস্টমেন্টস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইরিয়াল ফিন্যান বলেন, এ বিনিয়োগ প্রকল্পের মহত্ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এক অসাধারণ মুহূর্ত। আমরা আশা করি, এখানকার জনগণ এখন দেখতে পাচ্ছেন এ দেশের প্রতি আমাদের বিশ্বাস কতটা সুদৃঢ়।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকায় কোকাকোলার বটলিং ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ এবং হিন্দুস্তান কোকাকোলা বেভারেজেস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টি কৃষ্ণকুমার বলেন, নতুন এ প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে আমাদের ব্যবসায় সম্প্রসারণের পাশাপাশি এ দেশের গ্রাহকদের জন্য ব্যাপক পরিসরে পণ্য উদ্ভাবন এবং বাজারে উচ্চমানসম্পন্ন ও সুস্বাদু পণ্য বিপণনের ক্ষেত্র তৈরি হলো।

কোকাকোলা কোম্পানির ভারত ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভেঙ্কটেশ কিনি বলেন, কনজিউমার প্রডাক্টস বা ভোগ্যপণ্য উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান, প্রবৃদ্ধিশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে অনুযায়ী কোকাকোলা কোম্পানির নতুন এ প্লান্ট বা কারখানা আগামী দশকগুলোয় বাংলাদেশের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং নিত্যনতুন পণ্য উত্পাদনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।