Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একযোগে পদত্যাগ

trump

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা সবাই পদত্যাগ করেছেন বুধবার। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কৃতকর্মের কোনো দায়ভার নিতে রাজি নন এসব কর্মকর্তা, যার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এদিন একসঙ্গে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে দেশটির নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের জন্য বিভাগটি চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ল। এদিকে হুমকি ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য কিছু দেয়ার নেই বলে মনে করছেন দেশটির পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকরা। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও ফরেন পলিসি ডটকম।

chardike-ad

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডারসেক্রেটারি ফর ম্যানেজমেন্ট পদে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত প্যাট্রিক কেনেডিসহ চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই পদত্যাগ করেছেন। এরা হলেন— অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জয়েস অ্যান বার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ফর কনসুলার অ্যাফেয়ার্স ও ফরেন মিশনস দপ্তরের পরিচালক এবং রাষ্ট্রদূত জেন্ট্রি ও. স্মিথ। পররাষ্ট্র দপ্তরে এরা সবাই হোয়াইট হাউজের আগের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের অধীনে একসঙ্গে কাজ করেছেন।

এদিকে এশিয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক গণমাধ্যম। এতে বলা হয়, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর ও চিরায়ত নীতিগত অবস্থানকে কলমের এক খোঁচায় বাতিল করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোকেও হতভম্ব করেছে। ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণে তার একটা নীতির কথাই উঠে এসেছে বারবার। আর তা হলো, ‘সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র।’ বিষয়টি দেশ দুটির জন্য বেশ হতাশাজনক। ভাষণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিয়োজিত মার্কিন সম্পদ ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। তার এ বক্তব্যটিও দেশ দুটির কাছে কম গোলমেলে নয়। অন্যদিকে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান একটু বিপরীতমুখী। আর সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের জায়গা সেখানেই।

ট্রাম্পের মতলব হলো, এশিয়ায় আরো কঠোর ও শক্তিনির্ভর বৈদেশিক নীতির প্রয়োগ। কঠোরতা ও শক্তিনির্ভরতার মিশেলে গড়া এ বৈদেশিক নীতি অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র তথা সবার জন্যই সমান বিপজ্জনক।
যুক্তরাষ্ট্রে জন কেরির পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এক্সনমবিলের সাবেক সিইও রেক্স টিলারসনকে বেছে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি এক সিনেট শুনানিতে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, দক্ষিণ চীন সাগরে আরো দ্বন্দ্বমুখর নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘এখানকার সাগরে দ্বীপ নির্মাণ বন্ধের বিষয়ে চীনকে পরিষ্কার ও জোরালো হুঁশিয়ারি দিতে যাচ্ছি আমরা। আমরা তাদের এও বোঝাতে চাই, এসব দ্বীপে তাদের কোনো ধরনের প্রবেশাধিকার দেয়া হবে না।’

ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে অনেকভাবেই এ ধরনের ইঙ্গিত দিতে পারত। টিপিপি বাতিলের হুমকিও এ ধরনের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যবহার করা যেত। বৈদেশিক নীতি ও কৌশল নির্ধারণী অবস্থানে এ ধরনের অর্থনৈতিক হাতিয়ার বেশ কার্যকর। কিন্তু এ অর্থনৈতিক হাতিয়ার যদি আগেই ঝেড়ে ফেলে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে চীনের উচ্চাভিলাষ ঠেকানোয় শক্তিপ্রয়োগ ছাড়া আর কোনো ধরনের রাস্তা খোলা থাকে না। বিষয়টি দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নৌবাহিনীর নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে নৌ-অবরোধের প্রয়াসের দিকেও ঘুরে যেতে পারে।
কিন্তু এক্ষেত্রে আরো কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়। প্রথমত. ট্রাম্প প্রশাসন কি আসলেই চীনের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে প্রস্তুত? দ্বিতীয়ত. মার্কিনভূমি থেকে বহুদূরে বেইজিংয়ের নাকের ডগায় বসে পাঞ্জা লড়ে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি আছে ট্রাম্প প্রশাসন? তৃতীয়ত. যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা এ ধরনের সংঘাতে কি আদৌ কোনো সমর্থন দেবে?

টিলারসনের এ উসকানিমূলক বক্তব্যকে বাহুল্যের প্রকাশ বলে ধরে নিতে পারেন অনেকেই। আবার এখানে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিনির্ভর নীতি প্রয়োগের সম্ভাবনাও স্পষ্ট। কিন্তু  বাস্তবতা হলো, উভয় দিকই সমান বিপজ্জনক।

বিষয়টিকে ট্রাম্পের এশিয়া-বিষয়ক দুই উপদেষ্টা আলেক্সান্ডার গ্রে ও পিটার নাভারোর প্রস্তাবিত ‘শক্তি প্রয়োগে শান্তি’ আনার নীতির প্রয়োগ হিসেবেও দেখা যায়। এ দুই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বাড়াতে চাইছেন ট্রাম্প। উভয়ের বিশ্বাস, বেইজিংয়ের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ঠেকাতে হলে শক্তি প্রদর্শন জরুরি।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, আঞ্চলিক ভারসাম্য স্থাপন না করে এ ধরনের কৌশল হাতে নেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপে চীন ভেবে নিতেই পারে, দেশটির উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে এ ধারণা এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বাণিজ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা ও সামরিক শক্তির অযাচিত প্রদর্শনের মাধ্যমে শুধু চীনের কট্টরপন্থীদেরই শক্তিশালী করে তুলতে পারেন ট্রাম্প, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দুই মহাশক্তির সংঘাত দেখা দেয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার ও মিত্ররা ওয়াশিংটনের কাছে শুধু নিরাপত্তা নয়, একই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধাও চায়। আঞ্চলিক নীতিনির্ধারণের জায়গা থেকে বিষয়গুলো একটি আরেকটির পরিপূরক। কয়েক দশক ধরে এ ক্ষেত্রে নরম ও গরম— এ দুই নীতিই অনুসরণ করেছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে নিজস্ব চাওয়ার জায়গাগুলো প্রকাশ হয়েছে মার্কিন কূটনৈতিক পদক্ষেপ, বিনিয়োগ ও সংস্কৃতির মাধ্যমে।
ওবামা প্রশাসনের বেশকিছু পদক্ষেপে বেইজিংয়ের ধারণা হয়েছে; এগুলো চীনের উত্থান ঠেকিয়ে রাখার প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদিকে টিপিপি বাস্তবায়নে অসমর্থতা এখানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির অর্থনৈতিক ভিত্তিটিকেও ধসিয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে যে ভয়ঙ্কর ভারসাম্যহীনতা দাঁড়িয়েছে, তাকে আরো খারাপ পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। যদি তার উপদেষ্টারা বর্তমানে এশিয়া অঞ্চলের জন্য বাণিজ্যিক উদ্যোগ গ্রহণসহ আরো ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল প্রণয়নে ব্যর্থ হয়; সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে আরো সন্দিহান হয়ে উঠতে পারে চীন। এতে করে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারে। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাকে ছেড়ে কাকে ধরা হবে, তা বোঝা মুশকিল।

মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতেও ট্রাম্পের অবস্থান বেশ শঙ্কাজনক। প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্ব নিয়ে তার সার্বিক অবস্থানের সামান্যকেই যুক্তি দিয়ে বিচার করা সম্ভব। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গঠনমূলক উপস্থিতিতেও তার বিতৃষ্ণা লক্ষ করার মতো। ট্রাম্প ও তার প্রধান উপদেষ্টারা ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সামরিক উপস্থিতির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ না থাকলে আবারো ফিরে আসতে পারে আইএস। কিন্তু ট্রাম্প সম্ভবত বিষয়টি বুঝতে পারছেন না।