Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৩৬০ কোটি মানুষের সমান সম্পদ আটজনের হাতে

base_1484579192-555

পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদ রয়েছে আটজন শীর্ষ ধনীর হাতে। দারিদ্র্যবিরোধী সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভাকে সামনে রেখে অক্সফাম গতকাল সকালে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। খবর এপি ও এএফপি।

chardike-ad

পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদ একসঙ্গে যোগ করলে তা আটজন ধনকুবেরের সম্পদের সমান হবে। এ আট ধনকুবেরের মধ্যে ছয়জন মার্কিন নাগরিক। অন্য দুজন স্পেন ও মেক্সিকোর নাগরিক।

ফোর্বস ম্যাগাজিন গত মার্চে শীর্ষ ধনকুবেরদের সম্পদের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, অক্সফাম তার ভিত্তিতে ‘অ্যান ইকোনমি ফর দ্য নাইনটিনাইন পার্সেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে। যে আটজন ধনীর হাতে ৩৬০ কোটি মানুষের মোট সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তারা হলেন— মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের কর্ণধার ওয়ারেন বাফেট, মেক্সিকোর ব্যবসায়ী কার্লোস স্লিম হেলু, স্প্যানিশ ফ্যাশন জায়ান্ট জারার মালিক আমানচিও ওর্তেগা, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোস, ফেসবুকের স্রষ্টা মার্ক জাকারবার্গ, ওরাকলের ল্যারি এলিসন ও নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ও ব্যবসায়ী মাইকেল ব্লুমবার্গ।

সবচেয়ে ধনীদের সঙ্গে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর সম্পদের এ ফারাক যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে, তা বিদ্যমান ‘সমাজব্যবস্থাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার ঝুঁকি রাখে’ বলে অক্সফাম মন্তব্য করেছে। অক্সফাম মনে করে, ধনী ও দরিদ্রের এ বিরাট পার্থক্যের কারণেই বিশ্বজুড়ে মূলধারার রাজনীতির প্রতি মানুষের হতাশা বাড়ছে।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত বর্ণবাদের উদ্বেগজনক উত্থান এবং মূলধারার রাজনীতির ব্যাপারে ব্যাপক হতাশা দেখা গেছে। দিনের পর দিন এটা নানাভাবে স্পষ্ট হচ্ছে যে, ধনী দেশগুলো আর বিদ্যমান ব্যবস্থাকে মানতে রাজি নয়।

ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদের বিন্যাস সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশের পর অক্সফামের হিসাবে পরিবর্তন এসেছে। এক বছর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অক্সফাম বলেছিল, পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সমান সম্পদ ৬২ জন ধনীর হাতে রয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিয়নেয়ার তালিকার তথ্যের ভিত্তিতে অক্সফাম গত বছরের মার্চে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের সংগৃহীত সবশেষ তথ্য পাওয়ার পর অক্সফাম আগের হিসাব পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দেখা গেছে, আটজন ধনীর হাতেই এখন ৩৬০ কোটি মানুষের মোট সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

দাভোসে আজ থেকে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় এজেন্ডার শীর্ষভাগে থাকবে অসাম্যের বিষয়টি। এবারের সভার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘রেসপনসিভ অ্যান্ড রেসপনসিবল লিডারশিপ’। আয়োজকরা বলছেন, বিশ্বায়নবিরোধী যে জনমত দুটি বিস্ময়কর নির্বাচনী ফলাফল এনেছে এবং পাশ্চাত্যে জন-অসন্তোষের উত্থান ঘটিয়েছে, তার জবাবে এ প্রতিপাদ্য বেছে নেয়া হয়েছে।

অক্সফাম বলেছে, অতিধনী ও অতিদরিদ্রের মধ্যকার ব্যবধান এক বছর আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নেতাদের উচিত, অসাম্য নিরসনে স্রেফ মুখের কথার পরিবর্তে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। অন্যথায় জনগণের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন ও ব্রেক্সিট সিদ্ধান্তের মতো আরো ভূকম্পন দেখা যাবে।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানিমা বলেছেন, প্রতি ১০ জন মানুষের একজন এখনো দৈনিক ২ ডলারের কম আয়ে জীবনধারণ করছেন। এ অবস্থায় এত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে এত বেশি পরিমাণ সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়ার বিষয়টি অশ্লীল।

উইনি বিয়ানিমা আজ থেকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, অসাম্য অগণন মানুষকে দারিদ্র্যের বৃত্তে বন্দি রাখছে। এ অসাম্য আমাদের সমাজগুলোয় ফাটল ধরাচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করছে।

সামাজিক ও আর্থিক অসাম্য নিরসনে অক্সফাম কিছু ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে সবার আগে সম্পদ ও আয়কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সমান করতে এবং সরকারি পরিষেবা ও কর্মসংস্থান বিনিয়োগ অর্থায়নের জন্য এসব কর বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্রমিককর্মীরা যাতে সম্মানজনক বেতন পায় এবং ধনীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ না পায়, অক্সফাম সেজন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে অক্সফাম একই রকম আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ব্যবসায়ী নেতাদের  পরিমাণ কর পরিশোধ ও কর্মীদের বেঁচে থাকার উপযোগী বেতন পাওয়ার ব্যাপারে  অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

অক্সফামের পলিসি অ্যাডভাইজর ম্যাক্স লসন বিলিয়নেয়ারদের প্রতি ‘সঠিক কাজটি’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিল গেটস যা বলেছেন, বিলিয়নেয়ারদের তা-ই করা উচিত। কর পরিশোধ করা উচিত।

ম্যাক্স লসন বলেন, আমরা এমন পরিস্থিতি দেখছি যেখানে বিলিয়নেয়াররা তাদের ক্লিনার অথবা সেক্রেটারির চেয়ে কম কর পরিশোধ করছেন। রীতিমতো উল্টাপাল্টা পরিস্থিতি।

অক্সফাম বলেছে, আগামী ২০ বছরে ৫০০ জন মানুষ তাদের উত্তরাধিকারীর হাতে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ হস্তান্তর করবে। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে জিডিপির চাইতে বেশি সম্পদ এসব উত্তরাধিকারীর হস্তগত হবে।

গত ২০ বছরে চীন, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সবচেয়ে ধনী ১০ ভাগ মানুষের আয় ১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে অক্সফাম জানিয়েছে। বণিকবার্তা।