Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঘোর রহস্যজটে এসপি বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যা

রহস্যজটের জটিল ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ড। দেশব্যাপী তোলপাড় করা এ হত্যাকাণ্ডের নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো নেই এ মামলার তদন্তের সন্তোষজনক অগ্রগতি। সুরাহা হয়নি পুলিশি খাতায় পলাতক, খুনের জন্য কিলার ভাড়া করা কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদারের ‘অন্তর্ধান’ রহস্যের। এমনকি পুলিশ প্রকাশ করতে পারেনি এ খুনের মোটিভ ও আসল পরিকল্পনাকারীর নাম। সব মিলিয়ে ঘোর রহস্যের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এ হত্যা মামলা। মামলার সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে জট খুলবে এ খুনের রহস্যের। তাই মুছাকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। ’ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন কে গুলি করেছে, কে কিলিং মিশনে ছিল তা জানতে চাই না। আমরা এখন জানতে চাই, এ ঘটনার মোটিভ কী এবং কার নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘এ মামলার যা অগ্রগতি হয়েছে তা সন্তোষজনক হওয়ার মতো নয়। মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। উন্মোচিত হবে আসল রহস্য। তাই মুছাকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। ’

babul

chardike-ad

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে এরই মধ্যে যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের কারও মুখে ঘটনার মোটিভ ও আসল নির্দেশদাতার নাম উঠে আসেনি। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেওয়া আসামিদের সবাই বলেছে, মুছা সিকদার ভাড়া করেছে এ কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার জন্য। তাই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মুছাকে গ্রেফতার করাটা খুবই জরুরি। কারণ মুছাই জানেন, কোন ব্যক্তি তাদের এ খুনের জন্য ভাড়া করেছে এবং কেন এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একইভাবে এ খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আরেক পলাতক আসামি কালুর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পুলিশের খাতায় মুছা পলাতক থাকলেও তার পরিবার বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, মুছা পুলিশ হেফাজতেই রয়েছেন। মুছার স্ত্রী পান্না আকতার দাবি করে বলেন, ‘গত বছর ২২ জুন বন্দর এলাকার বাসা থেকে মুছাকে সাদা পোশাকের পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর মুছাসহ অন্য আসামিদের নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে রাখা হয়। কিন্তু অন্য আসামিদের গ্রেফতার দেখালেও মুছাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। মুছার পরিণতি নিয়ে অনেকের কাছে নানা রকম তথ্য শুনি। তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। ’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসন বলছে, মুছা এ খুনের প্রধান আসামি। তিনি সবকিছু জানেন। আমার দাবি, মুছাকে প্রকাশ্যে এনে মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হোক। ’ অবশ্য মুছার স্ত্রীর এমন দাবি অস্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মুছা ও কালুকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। ’

জানা যায়, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু খুনের পরপরই রহস্য উন্মোচনে কোমর বেঁধে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট। দেশব্যাপী শুরু করে সাঁড়াশি অভিযান। ওই অভিযানে আটক করা হয় ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে। এক মাসের মধ্যেই এ খুনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং অস্ত্র সরবরাহকারীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন খুনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী রাশেদ ও নবী। এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হলেও এখনো মূল মামলার কোনো কূলকিনারা হয়নি। এমনকি সুরহা হয়নি হত্যার জন্য কিলার ভাড়া করা মুছা সিকদার ও কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া কালুর অন্তর্ধান রহস্যের। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বাবুল আক্তার গ্রেফতার : সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী-২০১৭ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেনকে হত্যার অভিযোগ তুলে বিচার চেয়েছে তার পরিবার। এসআই আকরামের স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে তাকে হত্যা করা হয় বলে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবার দাবি করে।

এসআই আকরাম হত্যা মামলার অভিযোগে কেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না— এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাবুলের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। আইন সবার জন্যই সমান। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপহরণ ও হত্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অপহরণ ও হত্যায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধী সরকারি চাকরিজীবী কিংবা পুলিশ যেই হোক, অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু দেশপ্রেম ও কর্তব্য পালনে অনেকেই দেশের জন্য জীবনও দিচ্ছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে সম্প্রতি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তার কথিত বান্ধবীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। তবে পুলিশ বলছে, তদন্তের এ পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুলের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পদ্মা সেতুর বিষয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান ও আলহাজ মো. সফিউল্লাহ সফি। বাংলাদেশ প্রতিদিন।