Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির সামনে বড় চার সংকট

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্কের পদচ্যুতি এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু গুরুতর বিষয় রয়েছে যা বিশ্ব অর্থনীতিকেও নাড়িয়ে দেবে। কঠিন এক সংকটের মুখে দক্ষিণ কোরিয়া। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এই সংকট কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা সময় বলে দিবে। পার্কের অভিসংশনের পর এখন নির্বাচনের অপেক্ষা। ৯ মে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারে দেশটি।

ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিস্টাল টান বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলে হয়তো স্বল্প মেয়াদে প্রবৃদ্ধি গতি পাবে। এই রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিতে মানুষের আবেগ অনুভূতি যেভাবে আঘাত পেয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা কিছুটা প্রশমিত করবে। পার্ক প্রশাসনের কেলেঙ্কারি পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে, অন্য সমস্যাগুলোকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি এনেছে এবং ভাবমূর্তি ধূসর করে দিয়েছে।

chardike-ad

আইএইচএস মার্কিটের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া নানা চ্যালেঞ্জের এক বিষাক্ত মিশ্রণের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ইস্যুগুলো হলো:

চীনের সাথে দ্বন্দ্ব

দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেদের মাটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসানোর সিদ্ধান্ত চীনকে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। যেখানে সিউলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। এর জবাবে ইতিমধ্যে বেইজিং সিউলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু কয়েছে। দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রিপ বন্ধ করতে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে বেইজিং। এর ফলে চীনে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহৎ করপোরেশনগুলো সমস্যায় পড়েছে।

থাড নিয়ে বিপাকে দক্ষিণ কোরিয়া
থাড নিয়ে বিপাকে দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়াকে বড় মূল্য দিতে হবে এর জন্য। কারণ দেশটির এক চতুর্থাংশ রফতানি পণ্যের বাজার চীন। আর বছরে অর্ধেক পর্যটকই চীনা।

এ ব্যাপারে বিশ্বাস বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি চীনের অর্থনৈতিক যেকোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার কাছে খুবই অরক্ষিত।

ব্যবসায়ী নেতারাও বিপদে
প্রশাসনিক পর্যায়ে যে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে’র সেই দুর্নীতির সাথে নাম এসেছে দেশটির শীর্ষ কোম্পানিগুলোরও, এর মধ্যে অন্যতম হলো: স্যামসাং।

স্যামসাং কর্ণধার লি
স্যামসাং কর্ণধার লি জে ইয়ং 

এই জায়ান্ট কংগ্লুমারেটটির কার্যত প্রধান লি জে ইয়ং এখর জেলে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ এবং অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি এবং স্যামসাং এর অন্য নির্বাহীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের কয়েক বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

স্যামসাং এর এই সমস্যা আরো জটিল আকার নেবে যদি কোম্পানিতে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয়, এটি হলে কৌশলগত এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হবে। এই জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ কোরিয়ার ১৫ শতাংশ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

জাহাজ শিল্পে সঙ্কট
দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রায় ধ্বংসের মুখে। বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দার কারণে শিপিং এবং জাহাজ শিল্পে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। অনেক বেশি কন্টেইনার শিপ কিন্তু যথেষ্ট কার্গো না থাকায় বড় বড় কোম্পানিগুলো নেতিয়ে পড়েছে।

 

south-korean-ship
কঠিন সময় পার করছে কোরিয়ার শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কার্গো কোম্পানি হানজিন শিপিং গত বছরই বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার শিপিং কোম্পানিগুলোকে বাঁচিতে রাখতে কয়েক বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ফল স্বরূপ চাকরি হারাবে হাজার হাজার মানুষ।

সংস্কারের তাড়া নেই
চলতি বছরেই দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক কোনো ভবিষ্যৎ দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা।

ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের টান বলেন, অর্থনীতিকে ফেরানোর মতো সুযোগ এখন নেই। উচ্চ আবাসন ঋণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের চলমান পুনর্গঠন এবং বাইরের চাপ সব মিলিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আর নতুন প্রেসিডেন্ট অর্থনীতির এই বড় ইস্যুগুলো সামাল দিতে পারবেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো: বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং স্থবির শ্রমবাজার।

টান আরো বলেন, কোরিয়ার এখন যে ধরনের সংস্কার দরকার তা নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব কমই আলোচনা হয়েছে। সংসদে শক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে যে-ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না কেন সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া তার জন্য কঠিন হবে।

সূত্র: সিএনএন