Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শিক্ষক সংকটে ৩৮% প্রাথমিক বিদ্যালয়

eduশিক্ষক সংকটে ভুগছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৮ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। নিয়োগ না হওয়ায় দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োজিত রয়েছেন প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক শিক্ষক।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কোর) হিসাব অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতি ৪৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রাথমিক শিক্ষার মান পূরণে এ নিয়ম অনুসরণ হচ্ছে গোটা বিশ্বব্যাপী। শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এ অনুপাত অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

chardike-ad

সম্প্রতি দেশের প্রাথমিক শিক্ষার হালচাল নিয়ে ‘অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বার্ষিক প্রতিবেদনটির তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা খাতে প্রতি ৪৬ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেছে দেশের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ হিসাবে এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়নি দেশের ৩৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে।

এ বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত্ দেশের প্রাথমিক বিদালয়গুলোয় অনেক শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। বিশেষ করে কয়েক হাজার বিদ্যালয়ে এখন প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য। শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় মানসম্মত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত, শূন্য পদগুলোয় অতিদ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগের পরও যদি সংকট থাকে, তা হলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে।

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি ২০১৬-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে এখনো লিডারশিপ প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে গেছেন ৫১ শতাংশ। বিষয়টিকে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার পথে অন্তরায় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও মনিটরিং সবক’টি বিভাগের দেখভাল করার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। সহকারী শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেয়া, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধনসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান শিক্ষকরা যাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন, সেজন্য লিডারশিপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশেরই এ প্রশিক্ষণ নেই।

জানা যায়, দেশে ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প ৩’-এর আওতায় ২১ দিনব্যাপী এ লিডারশিপ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একজন প্রধান শিক্ষককে ভালো শিক্ষকের পাশাপাশি দক্ষ প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ চলাকালে কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো— সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সহকর্মীসুলভ সম্পর্ক তৈরি, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধান, পাঠদান ও শিক্ষার মানের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি।

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, শিক্ষক সংকট দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এর ফলে এ সমস্যার অনেকটাই লাঘব হবে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ২০১৭ সালের মধ্যে ৮৫ শতাংশ প্রধান শিক্ষককে লিডারশিপ প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে।