Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উচ্চবিত্তের ৭৫ শতাংশই ঢাকায়

রিসম্পদ, দায় ও খরচের ভিত্তিতে সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের উচ্চবিত্ত হিসেবে গণ্য করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর রিটার্ন জমাদানকারী এসব উচ্চবিত্তের কাছ থেকে সারচার্জ নামে অতিরিক্ত করও আদায় করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারা দেশে ১১ হাজার ৬৬১ জন উচ্চবিত্তের কাছ থেকে সারচার্জ আদায়

chardike-ad

করেছে এনবিআর। এ উচ্চবিত্তদের ৭৫ শতাংশই ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চলের বাসিন্দা।

এনবিআরের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চলের ৮ হাজার ৭৯৬ জন করদাতা। ঢাকার কর অঞ্চলভিত্তিক সম্পদশালীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে চিকিত্সক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত কর অঞ্চল-১০। এ অঞ্চলের ৭৬৪ জন সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্পদশালী রয়েছেন ধানমন্ডির আওতাধীন কর অঞ্চল-৫-এ। চলতি অর্থবছর কর অঞ্চলটিতে ৭৫০ জন করদাতা সারচার্জ প্রদান করেছেন। ব্যাংকার কর আদায়কারী ঢাকা কর অঞ্চল-১-এ সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছেন ৭০৪ জন। আর বৃহত্ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) এ পরিমাণ সম্পদের মালিক ৩৪২ জন।

ঢাকার বাইরে উচ্চবিত্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কর অঞ্চলে সম্পদের সারচার্জ দিয়েছেন ২ হাজার ৪৩ জন, মোট উচ্চবিত্তের যা ১৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া খুলনায় এ সংখ্যা ২৭৪ বা মোট উচ্চবিত্তের ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সিলেটে ২১৪ বা ১ দশমিক ৮৪, রাজশাহীতে ১৩৩ বা ১ দশমিক ১৪ ও বরিশালে ১১০ বা শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। উচ্চবিত্তের সংখ্যা সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগে, মাত্র ৮৮; দেশের মোট উচ্চবিত্তের যা দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সারচার্জ আরোপে ফ্ল্যাট, গাড়িসহ যাবতীয় সম্পদের মূল্য ধরা হয়েছে সম্পদ কেনার সময়কার। ফলে প্রকৃত মূল্য আড়ালে থাকছে। আবার অনেকে যে দামে সম্পদ কেনেন, নিবন্ধনে তার চেয়ে কম দেখান। এতেও প্রকৃত মূল্য আয়কর বিবরণীতে উঠে আসে না। অনেকে বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করেন, কিন্তু তা দেখান কোম্পানির নামে। এতে সম্পদ গোপনেই থেকে যায়। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিজমা, বাড়িসহ সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণ না হওয়ায় সম্পদশালীদের অনেকে এ তালিকার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সম্পদশালীদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ ও করজাল বাড়াতে জোরালোভাবে কাজ করছে এনবিআর। চলতি অর্থবছর এরই মধ্যে প্রায় আট লাখ নতুন করদাতা যুক্ত হয়েছেন। উচ্চবিত্তের যে সংখ্যা এনবিআরে রয়েছে, তা শিগগিরই বেড়ে যাবে। ঢাকার বাইরে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে সোয়া ২ কোটি টাকার সম্পদের মালিক, এমন করদাতা ছিলেন ১০ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চলের উচ্চবিত্ত ছিলেন ৮ হাজার ৩২ জন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সারচার্জ প্রদানকারী উচ্চবিত্ত ছিলেন ১০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৪৪ জনই ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চলের করদাতা। এছাড়া ২০১৩-১৪ অথবছরে সারচার্জ প্রদান করেন ১০ হাজার ১৫২ জন। এর মধ্যে ঢাকার করদাতার সংখ্যা ৭ হাজার ৩২১। সারচার্জ আরোপ করার প্রথম অর্থবছর (২০১২-১৩) এ করদাতার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৪৬।

তবে আয়কর রিটার্নের ভিত্তিতে সোয়া ২ কোটি টাকার সম্পদের মালিকদের যে পরিসংখ্যান এনবিআরের কাছে রয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করদাতার সম্পদের মূল্য প্রদর্শনের প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ও ঢাকার বাইরের সম্পদশালীরা তালিকায় যুক্ত না হওয়ায় সংখ্যাটা কম দেখাচ্ছে। সম্পদের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করায় অনেক আগে সম্পদ গড়া ব্যক্তিরা এ তালিকায় যুক্ত হননি। সম্পদের পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে তালিকা করা হলে ঢাকার বাইরে অন্য সিটি করপোরেশন এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরেও সোয়া ২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকের সংখ্যা বাড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ৩০ বছর আগে একজন যে দামে বাড়ি কিনেছিলেন, এখনো সেই দামই দেখিয়ে আসছেন। ঢাকার বাইরে সম্পদশালীরা অধিকাংশই পৈতৃক সম্পত্তির মালিক। ফলে সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন না হওয়ার কারণে তারা করের আওতায় আসছেন না।

উল্লেখ্য, বেশি সম্পদশালীদের ওপর অতিরিক্ত করারোপের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে সারচার্জ নামে নতুন কর খাত সৃষ্টি করে সরকার। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৮০ ধারা অনুযায়ী পরিসম্পদ, দায় ও খরচের বিবরণীতে কারো নিট সম্পদ ২ কোটি টাকার বেশি হলেই তার ওপর সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমে ২ কোটি টাকার সম্পদের মালিকদের জন্য মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে এ করারোপ হয়। পরবর্তীতে আইন সংশোধন করে তা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়।

আয়কর আইন অনুযায়ী, আয়সীমা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে সারচার্জ শূন্য শতাংশ প্রযোজ্য। ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার অধিক কিন্তু ১০ কোটি টাকার কম, এমন করদাতার ওপর সারচার্জ ১০ শতাংশ। ১০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ২০ কোটি টাকার কম, এমন করদাতার ক্ষেত্রে সারচার্জ ১৫ শতাংশ। এছাড়া ২০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ৩০ কোটি টাকার কম, এমন সম্পদশালীদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ও ৩০ কোটি টাকার অধিক সম্পদশালীদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপিত রয়েছে। বণিকবার্তার সৌজন্যে।