Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ পরিস্থিতি

North-South-Korea

পারমাণবিক হামলা সক্ষমতার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বার্ষিক সামরিক প্যারেডে গতকাল এ হুঁশিয়ারি বার্তা দেন পিয়ংইয়ংয়ের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে প্যারেডে গতকাল নতুন কিছু মিসাইল ও লঞ্চার প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়া। চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এসব মিসাইল ও লঞ্চারের প্রদর্শনকেও ওয়াশিংটনের প্রতি নতুন হুঁশিয়ারি বার্তা হিসেবেই নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর বিবিসি ও সিএনএন।

chardike-ad

উত্তর কোরিয়ার ভাইস মার্শাল ও সামরিক কর্মকর্তা চো রিয়ং হাই গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যেকোনো সর্বাত্মক যুদ্ধকে সর্বাত্মক যুদ্ধ দিয়েই মোকাবেলার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। এমন কি যেকোনো পারমাণবিক হামলাকে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতির পারমাণবিক হামলা দিয়ে মোকাবেলায়ও সক্ষম আমরা।

পিয়ংইয়ংয়ে গতকাল আয়োজিত বার্ষিক সামরিক প্যারেড চলাকালে চো রিয়ং হাই এ কথা বলেন। এ সময় প্রেসিডেন্ট কিম জং উন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত উত্তর কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের পরই সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হিসেবে ধরা হয় চো রিয়ং হাইকে।

বার্ষিক সামরিক প্যারেড চলাকালে গতকাল প্রথমবারের মতো দুই ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল— আইসিবিএম) ক্যানিস্টার এবং ভূমি থেকে ক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের ভিন্ন ভিন্ন দুই সংস্করণ জনসমক্ষে নিয়ে আসে পিয়ংইয়ং। বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের কাছে যদি সত্যিই আইসিবিএম দুটি থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডসহ ইউরোপের যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম উত্তর কোরিয়া। অন্যদিকে এদিন প্রদর্শন করা স্বল্পপাল্লার মিসাইলগুলোকে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

চলমান উত্তেজনার মুহূর্তে পিয়ংইয়ংয়ের এ ধরনের প্রদর্শনী কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখানে মোতায়েনের জন্য এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার কার্ল ভিনসনের নেতৃত্বে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি বহর যাত্রা করে গত সপ্তাহের শেষ দিকেই। অন্যদিকে এ সপ্তাহের শুরু থেকেই নানা টুইট বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে এসেছেন— চীন না পারলে যুক্তরাষ্ট্রই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যাচ্ছে।

কোরীয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রোলিফারেশন স্ট্যাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মেলিসা হ্যানহাম বলেন, ‘কার্ল ভিনসনকে পাঠানো হয়েছে একটি বার্তা হিসেবে। অন্যদিকে প্যারেডে প্রথমবারের নতুন কিছু মিসাইল হার্ডওয়্যার প্রদর্শনীর মাধ্যমে এর জবাবও দিয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

সংশ্লিষ্টদের জন্য উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে গতকালের সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দুই ধরনের আইসিবিএমের ক্যানিস্টার প্রদর্শনী। ক্যানিস্টারগুলোয় যে আকৃতির আইসিবিএম ধরবে, এত দিন পর্যন্ত সে আকৃতির কোনো অস্ত্র জনসমক্ষে নিয়ে আসেনি উত্তর কোরিয়া।

বিষয়টি নিয়ে মেলিসা হ্যানহামের সংশয়— ‘সম্ভবত দুটোই নতুন কোনো ডিজাইনের ধারণা। আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অস্ত্র ব্যবহার হতে দেখিনি।’

এদিকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কূটনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন ডিপ্লোম্যাটে গতকাল প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিশ্লেষক অঙ্কিত পান্ডাও আইসিবিএমগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, ক্যানিস্টারগুলোর ভেতরে

কি আদৌ কোনো কিছু ছিল কিনা। কারণ উত্তর কোরিয়াকে এখন পর্যন্ত এ আকৃতির কোনো মিসাইল পরীক্ষা করতে দেখা যায়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ক্যানিস্টারগুলোর আকৃতি ও প্রদর্শনী থেকে আমরা শুধু এটুকু ধরে নিতে পারি, পিয়ংইয়ং এখন গোটা বিশ্বকে জানাতে চাইছে যে, উত্তর কোরিয়া এখন অন্তত দুই ধরনের কঠিন জ্বালানিনির্ভর ক্যানিস্টারাবদ্ধ আইসিবিএম নিয়ে কাজ করছে।’

ক্যানিস্টারাবদ্ধ নতুন মিসাইলের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে এখন। কারণ কোনো আইসিবিএমকে ক্যানিস্টারাবদ্ধ করে রাখার অর্থই হলো, এগুলো কঠিন জ্বালানিনির্ভর। সাধারণত এ ধরনের আইসিবিএম তরল জ্বালানিনির্ভর মিসাইলের তুলনায় আরো দ্রুতগতির এবং এগুলোকে রাডারে শনাক্তও করা যায় কম। এছাড়া এসব মিসাইলের দীর্ঘাকৃতির অর্থ হলো— এগুলো বেশ দূরের পথ পাড়ি দিতে সক্ষম।

সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের সিনিয়র ফেলো অ্যাডাম মাউন্ট বলেন, ‘এখান থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পিয়ংইয়ং ওয়াশিংটনকে দেখাতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করার সক্ষমতা তার রয়েছে। নিশ্চিতভাবে, এটিই তাদের উদ্দেশ্য।’

এছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের গতকাল প্রদর্শন করা সাবমেরিন ও ভূমি থেকে উেক্ষপণযোগ্য আরেকটি মিসাইলের দুই ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেলিসা হ্যানহাম। মিসাইলটির ভূমি থেকে উেক্ষপণযোগ্য সংস্করণটি কেএন-১৫ নামে পরিচিত। অন্যদিকে সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণযোগ্য সংস্করণটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে কেএন-১১ হিসেবে।

এর মধ্যে কেএন-১৫কে নিয়েই বেশি চিন্তিত মেলিসা হ্যানহাম। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হলো— ‘এটি সাধারণত ক্যাটারপিলার ট্রিড (ট্যাংক বা ক্যাটারপিলার গোছের যানবাহনের চাকায় লাগানো চেইন, যা যেকোনো ধরনের ভূমিতে ভারী যান চলাচলে সহায়ক) ব্যবহার করে থাকে। অর্থাত্ এসব মিসাইল সহজেই লুকিয়ে রাখা যাবে।’

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে অঙ্কিত পান্ডা লেখেন— ‘উত্তর কোরিয়ায় বাঁধানো সড়ক রয়েছে ৫০০ মাইলের মতো। পুরনো চাকানির্ভর যানবাহন থেকে মিসাইলগুলো উেক্ষপণ করা হলে, তা যথেষ্টই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারত।’

এছাড়া মেলিসা হ্যানহামের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এসব উেক্ষপণ যান তৈরি হয়েছে উত্তর কোরিয়াতেই। ফলে এগুলো প্রস্তুতের জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর চীনের আরোপিত বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের কোনো প্রয়োজনই নেই পিয়ংইয়ংয়ের।