Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পরিবর্তন ঘটছে অনমনীয় উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে

অনমনীয়, বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া। দেশটির অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হতে দেখা যায় রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের রাস্তায়। সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী ঠেলা থেকে সবজি বিক্রি করছেন। বাজারে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রি করছেন, এমনকি কোকা-কোলাও। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোয় প্রকাশ্যে হার্ড কারেন্সি কালো বাজারের দরে বিনিময় করা হচ্ছে।

chardike-ad

সরকারিভাবে উত্তর কোরিয়া সংস্কারের পরিপন্থী। জাতির জনক কিম দ্বিতীয় সুংয়ের আত্মনির্ভরশীলতার দর্শন ‘জুচে’ অনুসারেই দেশটি পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর উত্তর কোরিয়া। শনিবার জাতির জনকের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, না চাইলেও দেশটিতে অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে। কিম জং উনের শাসনামলে একদা দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র শক্তিসম্পন্ন

দেশটির অর্থনীতি ধীরে ধীরে পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদিকে কয়েক দশকের অব্যবস্থাপনায় দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশটি অর্থনৈতিক নেতৃত্বে এগিয়ে গেছে বহুদূর।

পিয়ংইয়ংয়ে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে। এর বদলে রাজধানীর চওড়া রাস্তাগুলোয় রয়েছে বীর সৈনিক ও ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের প্রচারণামূলক পোস্টার। নতুবা ‘কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সপ্তম কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত মেনে চলি,’ ধরনের স্লোগান।

দেশটির সমাজবিজ্ঞান একাডেমির অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান রি সান-চোলের মতে, একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া এর নীতি দ্বারা আবদ্ধ। ফলে বাজার অর্থনীতি গ্রহণের জন্য জাতীয় সংস্কার করা যাবে না। কিন্তু কূটনৈতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, কিম জং-উনের অধীনে একাধিক বিধান দেশটিকে ঠিক সে পথেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার বহু কৃষি সমবায় কার্যকরভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং খাদ্য উত্পাদন বাড়ানোর জন্য ‘পরিবারভিত্তিক কর্ম ইউনিট’ হিসেবে উল্লেখ করে কৃষিজমি ব্যবস্থাপনা পৃথক পৃথক পরিবারগুলোয় বণ্টন করা হয়েছে। এমনকি অনমনীয় করপোরেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থাকা সত্ত্বেও কারখানার ব্যবস্থাপকদের সরবরাহকারী ও গ্রাহক খুঁজে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবসায় নাক না গলানোর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা মতে, উত্তর কোরিয়ার জিডিপির এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত অবদান রয়েছে বেসরকারি খাতের। তবে এসব উপাত্তই অনিশ্চিত, এর অন্যতম কারণ পিয়ংইয়ং সাধারণত অর্থবহ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না। এমনকি ২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে নাকি সংকুচিত হয়েছে, গত বছর এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্লেষকরা।

তবে উত্তর কোরিয়ার এ পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রয়েছে গত শতাব্দীর আশির দশকের প্রথম দিকে চীনের বিপ্লবী নেতা ডেং জিয়াওপিংয়ের ‘সংস্কার ও উন্মুক্ত’ নীতির প্রাথমিক স্তরের। বতর্মান সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্ অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল চীনের এ সংস্কার নীতি।

পিয়ংইয়ংয়ের একমাত্র মিত্র এবং প্রধান বাণিজ্য ও সহায়তা প্রদানকারী বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়াকে চীনের উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য বলে আসছে। কিন্তু গত বছর পার্টি কংগ্রেসের এক ভাষণে কিম জং-উন এ ধরনের ভাবনাকে ‘বুর্জোয়া স্বাধীনতার নোংরা বাতাস’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক রি বলেন, সংস্কারটি চীনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই ছিল, একই সঙ্গে চীনের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। সে সংস্কার যদি চীনের অর্থনীতিকে বিকশিত করে, তবে তার জন্য উত্তর কোরিয়া আনন্দিত। তবে তার দেশ সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করে চলবে বলে জানান তিনি।

তবে রি’র বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন অনেকেই। এনকে নিউজের বিশেষজ্ঞ পরিচালক ও সিউলের কুকমিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আন্দ্রেই ল্যানকভ বলেন, অবশ্যই উত্তর কোরিয়া চীনকে অনুসরণ করছে, এর কারণ চীন এক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল। ল্যানকভের মতে, কারো কাছ থেকে তারা কিছু শিখছে, এটা উত্তর কোরিয়া কখনই স্বীকার করবে না। কিন্তু কিম জং উন একটা বিষয় ভালোই বুঝেছেন যে, গত অর্ধশতকে পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই অবাক করা প্রবৃদ্ধি নিয়ে এসেছে বাজার অর্থনীতি।

সূত্র: এএফপি