Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ব্রিটেনে হঠাৎ নির্বাচনের ঘোষণা টেরিসা মে’র

যুক্তরাজ্যে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে। নিয়ম অনুযায়ী দেশটির বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকলেও চলতি বছরের ৮ জুন তা অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রেক্সিট আলোচনার জন্যই এ নির্বাচন প্রয়োজন বলে তিনি তার ঘোষণায় উল্লেখ করেন। শুরু থেকেই আগাম নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না বলে জানালেও গতকাল সকালে ডাউনিং স্ট্রিটে আকস্মিকভাবে তিনি এ ঘোষণা দেন। খবর বিবিসি, টেলিগ্রাফ ও দ্য গার্ডিয়ান।

ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিট গণভোটে হেরে যাওয়ার পর গত বছর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান কনজারভেটিভ পার্টির নেতা  ডেভিড ক্যামেরন। এর পর ব্রেক্সিট আলোচনার দায়িত্ব বর্তায় দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের ওপর। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত মাসের শেষ নাগাদ ব্রেক্সিট আলোচনাও শুরু করেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে লেবার পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতেই নিজের পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আগাম নির্বাচনের এ ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানান টেরিসা মে।

chardike-ad

এ-বিষয়ক বিবৃতিতে গতকাল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রেক্সিটের প্রস্তুতিকে বাধাগ্রস্ত করতে বিরোধী দলগুলো একাট্টা হয়েছে। ব্রেক্সিট প্রশ্নে জনগণের মধ্যে বিভাজন না থাকলেও হাউজ অব কমন্সে রয়েছে। অথচ গণভোটের ফলাফল বাস্তবায়নের জন্য এ মুহূর্তে স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন ব্রিটেনের। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আগাম নির্বাচনের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে আমি বাধ্য হয়েছি।

তবে টেরিসা মে আগাম নির্বাচনের এ ঘোষণা কার্যকরের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী টেরিসা মে আজ হাউজ অব কমন্সে তার প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন। পরে এর ওপর সংসদ সদস্যরা পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেবেন। এতে টেরিসা মের প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে বিজয়ী হলেই শুধু দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নিজের মত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে টেরিসা মে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রেক্সিট আলোচনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। অথচ বিরোধী দলগুলো এক ধরনের ‘খেলা’ খেলছে। ব্রেক্সিট-বিষয়ক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট প্রদানের হুমকি দিয়েছে লেবার পার্টি। বাণিজ্য বিষয়ে  লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানও একই। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন হাউজ অব লর্ডসের সদস্যরা। এটি ব্রেক্সিট প্রশ্নে আমাদের সাফল্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের স্থিতিশীলতা। এ কারণে আগামী বছরগুলোয় দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ন রাখতেই এ নির্বাচন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, শিগগিরই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে বিরোধী দলগুলো তাদের ‘খেলা’ অব্যাহত রাখবে। পূর্বনির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই এ আলোচনা খুব জটিল পরিস্থিতিতে উপনীত হবে।

এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, লেবার পার্টিও এ নির্বাচনকে স্বাগত জানাবে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে প্রাধান্য দিতে একটি সহায়ক সরকার গঠনের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ।

একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী  ডেভিড ক্যামেরনও। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। কনজারভেটিভ দলের সব প্রার্থীর প্রতি আমার শুভকামনা রইল।

এদিকে বিবিসি রেডিও ফোরকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ব্রেক্সিট সেক্রেটারি ডেভিড ডেভিস বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন বলে আমি মনে করি না। টেরিসা মের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় শুধু ব্রেক্সিট নয়, অন্যান্য বিষয়েও ব্রিটিশ জনগণের মতামত জানাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। এজন্য আগাম নির্বাচন ছাড়া ভালো আর কোনো পথ নেই। কারণ টেরিসা মে ব্রেক্সিট প্রশ্নেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।