Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশের মেয়ে এবং তার চীনা মায়ের অসাধারণ গল্প

chin-with-her-china-mother
চীনা মায়ের সাথে বাংলাদেশের চিন

ছবির সুন্দর এ মেয়েটির নাম চিন। সে বাংলাদেশি মেয়ে। তার সঙ্গে ওই চীনা মহিলার নাম শেং রুই ফাং। তিনি চীনের নৌবাহিনীর বিদেশে দায়িত্বরত জাহাজের এক চিকিত্সক। ছোট্ট মেয়ে চিন চীনা ডাক্তার শেংকে ‘মা’ বলে ডাকে! আচ্ছা, কেন বাংলাদেশি মেয়েটি চীনা নারীকে মা ডাকছে? শুনুন সেই গল্প।

গত ২৩ তারিখ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় চীনের নৌবাহিনীর জাহাজ দল চার দিনের সফরে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পৌঁছায়। বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ, চীনা-বাংলাদেশি মেয়ে চিন এবং তার পরিবারের সবাই দেশের বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে চীনা নৌবাহিনীকে স্বাগত জানায়। কারণ, ২০১০ সালে চীনের নৌবাহিনীর ‘পিস আর্ক’ হাসপাতাল জাহাজের ডাক্তারের সহায়তায় জন্মগ্রহণ করে চিন।

chardike-ad

চিনের মা জন্নাত মুহূর্তের মধ্যেই তার ও তার মেয়ের জীবন রক্ষাকারী চীনা ডাক্তার শেংকে চিনতে পারেন। জন্নাত বলেন, তখন আমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ঠিক সে সময় ডাক্তার শেং আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

চিনের বাবা বলেন, বাংলা ভাষায় চিন অর্থ হলো চীন দেশ। তার এ নাম রাখার কারণ, সে যেন সব সময় চীন দেশের কথা মনে রাখে!

চিনের বাবা-মা এবং তার চীনা মা

ডাক্তার শেংও ২০১০ সালের কথা স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। তিনি বলেন, তখন চিনের মা’র অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তার জন্মগত হৃদরোগ আছে। ওই সমস্যা নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া কঠিন। কারণ, তা মায়ের জন্য বিপজ্জনক। এ অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা জান্নাতের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু স্থানীয় হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তারা আমাদের সমুদ্র চিকিত্সা দলের কাছে আসে।

সাত বছর আগের কথা। চিন যখন চীনা ডাক্তারের সহায়তায় নিরাপদে জন্মগ্রহণ করে; সে মুহূর্তে চিনের বাবা শুধু একটি কথাই বলতে পেরেছিলেন, ‘চীনা ডাক্তারকে ধন্যবাদ।’

২০১৩ সালে চীনের ‘পিস আর্ক’ হাসপাতাল জাহাজ আবার বাংলাদেশে যায়। হাজার হাজার লোক স্বেচ্ছায় চীনের জাহাজ হাসপাতালে যায় চিকিত্সার জন্য। একদিনে ১৭০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি রোগীর চিকিত্সা সেবা দেওয়ার রেকর্ড করেছে হাসপাতালটি! একদিনে ৮৪টি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে তারা! এ রেকর্ড আন্তর্জাতিক মানবিক চিকিত্সা সেবার ইতিহাসে সর্বোচ্চ! বাংলাদেশি বন্ধুরা জানান, চীনা ডাক্তারদের বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবার পাশাপাশি তাদের আন্তরিকতাও বাংলাদেশি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।

সে বছর তিন বছর বয়সী চিন কিন্তু যায়নি। তার বাসা অনেক দূরের গ্রামে! সে জানত না, চীনা ডাক্তার আবার এসেছেন বাংলাদেশে।

চিন কেমন আছে? সে কি সুস্থ আছে? চীনা ডাক্তার তার কথা ভুলতে পারেননি! অনেক চেষ্টার পর চীনা ডাক্তার তাকে খুঁজে বের করেন এবং তাকে হাসপাতাল জাহাজে শারীরিক পরীক্ষার জন্য যেতে বলেন।

ডাক্তার শেং বেশ কয়েক বার বিদেশ সফরে অংশ নিয়েছেন। তিনি বিশ জনেরও বেশি-বিদেশি রোগী উদ্ধারেও অংশ নিয়েছেন। সুস্বাস্থ্য এবং ও মিষ্টি চেহারার চিনকে দেখে তিনি তার কাজের সার্থকতা উপলব্ধি করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন সামরিক ডাক্তার হিসেবে আমি নিজ চোখে দেখেছি চীনা নৌবাহিনীর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা। আমি নিজেই খুব গর্ব বোধ করি। আমার কাজ হলো, মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর জীবন বাঁচানো।

চিন চীনা ডাক্তার মা শেংকে জড়িয়ে ধরে তাকে অসংখ্য চুমু দেয়। চীনা ডাক্তার শেংয়ের মুগ্ধ চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমার নিজেরও একটি মেয়ে আছে। চিনের মুখে মা ডাক শুনে আমি কান্না আটকাতে পারি না!

বন্ধুরা, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর প্রতীক এই চিন! আমরা তার সুন্দর ভবিষ্যত ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।