Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফেসবুক লাইভে তরুণ-তরুণীদের নোংরামি

facebook-live
প্রতীকী ছবি

বর্তমানে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাবার কারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। মেসেঞ্জারে ইন্সট্যান্ট চ্যাট, ফেসবুক কল (অডিও-ভিডিও), ভিডিও আপলোড – সব কিছু মিলিয়ে ফেসবুক সারা বিশ্বকে করছে নিয়ন্ত্রণ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে হালের জনপ্রিয় তারকারা সবাই কমবেশি এতে আসক্ত।

আজকের এই লেখা মূলত ফেসবুক কেন্দ্রিক নয়, ফেসবুকের নতুন একটি সিস্টেম নিয়ে; আর তা হল “ফেসবুক লাইভ”

chardike-ad

সবকিছুরই একটা ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে। তবে মানুষ বোধহয় মন্দ আর নিষিদ্ধের প্রতিই আকর্ষিত হয় বেশি। ঠিক তেমনি, এই ফেসবুক লাইভকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে উচ্ছৃংখল নারীদের একটি গ্রুপ যারা কিনা অর্ধনগ্ন হয়ে লাইভে আসছে; লাইভে এসে নোংরা কথাবার্তা দিয়ে যুবক সম্প্রদায়কে উসকে দিচ্ছে; সর্বোপরি যৌনতাকে উসকে দিচ্ছে।

অথচ কিছুদিন আগেও ফেসবুক এমন ছিলো না; হ্যাঁ অনেকেই সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার উদ্দেশ্যে খোলামেলা ছবি দিয়ে আলোচনায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু সেগুলো যতটা না প্রভাব ফেলেছিল, এই লাইভ সুবিধা পেয়ে তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ফেসবুকের নিউজ ফিড হয়ে পড়েছে দূষিত।

বাংলাদেশের একটি বড় অংশ নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করছে যারা কিনা কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী। এদের বয়স ১৩ থেকে ২৩ এর কোঠায়। এই সকল নোংরা ফেসবুক লাইভ মূলত এই বয়সী মানুষকে উদ্দেশ্য করেই করা হচ্ছে। খোলামেলা পোশাকে নিজের শরীর দেখিয়ে, নোংরা কথা, অশ্রাব্য ভাষার গান ইত্যাদির মাধ্যমে তারা নিজেদের অসভ্যপনা কে তুলে ধরছে।

এই সকল নারীরা শুধুমাত্র ফেসবুকের সস্তা জনপ্রিয়তা, লাইক, কমেন্টসের ভীড়েই সীমাবদ্ধ নয়। কিছু কুলাঙ্গার ইউটিউবার আবার এদেরকে হাইলাইট করছে ইন্টারভিউ নেবার নাম করে, হয় নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়াতে, নয়তো সেই নারীই আসছে ইউটিউব চ্যানেলকে টাকা দিয়ে নিজেকে আরো বেশি জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে। সেইসব ইন্টারভিউতে চলে নানা প্রকার নোংরা প্রশ্নোত্তর। ধীরে ধীরে ভিডিও গুলো ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে এবং আপনি না চাইলেও যেকোন ভাবে আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে এসে যাচ্ছে। অনেকেই কৌতুহল দমাতে না পেরে দেখছেনও।

এসব লাইভের কমেন্টে ছোড়া হয় যাবতীয় নোংরা প্রশ্ন, নির্লজ্জের মত এসব নারীরা আবার সেইসকল প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে যায়। বেহায়াপনার কোন সীমারেখা এদের কাছে নাই; কি বলবো, বেহায়াপনার সীমা নিয়েও এখন আমাদের ভাবতে হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, একজন মোটাসোটা মেয়েকে প্রায়ই দেখা যায় লাইভে। কে আশা করি বুঝতে পেরেছেন। সে মোটা নাকি চিকন এই নিয়ে আমার মাথাব্যথা নয়। কথা হলো, মানুষ তাকে আদর করে (নাকি ব্যঙ্গ করে জানিনা) নাম দিয়েছে হাতিপু বা হাতি-আপু। অবাক লাগে, সে এই নামেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে!! কোন প্রতিবাদ নেই তার! লজ্জা ! লজ্জা!

এমন অনেক আপু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখন আমাদের চারপাশে। এগুলো ভার্চুয়াল বা সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না এখন আর। আমাদের বাস্তবিক জীবনে এর কঠিন প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় কিংবা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষও বুঝতে পারছেন যে এরা এক একটা মানসিক রোগীর পর্যায়ে চলে গেছে; ফেসবুকই এদের ধ্যান-জ্ঞান বর্তমানে। এরা কেউই সুস্থ জীবনযাপন করছে না বর্তমানে। অনেকেই আবার নেশাগ্রস্ত হয়েও লাইভে আসে।

আর এই নোংরা নারীদের দোষ দিয়েও শুধু লাভ নেই; আমরা যারা এর ভিউয়ার্স, তারা কি করছি ? তারা এগুলোকে প্রমোট করছি; ফলে ভাইরাল হয়ে যেতে সময় লাগছে না। আমি এখানে ঐসব নারীদের নাম উল্লেখ করে দিলে আপনারা এখনই গুগলে কিংবা ফেসবুকে সার্চ লাগাবেন; নাহ! আমি এটা চাইনা। আমি চাচ্ছি যুবসমাজের ভেতরে, আমাদের সকলের মাঝে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করতে। আমরা যদি এইসকল লাইভ দেখা বাদ দিই, এদেরকে প্রোমোট করার সুযোগ না দিই, তাহলে ওরাও এত সাহস পাবেনা বরং আগ্রহ হারিয়ে এসব করা বন্ধ করে দিবে।

এইসকল ভুয়া সেলিব্রেটিদেরকে বলছি, আপনারা দয়া করে এসব বন্ধ করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। পড়ালেখা করুন বা সংসার ধর্ম করুন; দেশের উন্নতি করা যায় এমন কিছু করুন। আমরা বাংলাদেশের মানুষ ফেসবুকে এমন নোংরা নিউজফিড দেখতে চাইনা।

আমরা ফেসবুকিং করবো, নিজেদের প্রয়োজনে! বন্ধু বিদেশে থাকলে সহজে একটা কল দিতে পারি, যারা বিদেশে আছে তারা দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে সহজে; লাইভের কথা বলবো? মনে করুন, আপনি মহাস্থানগড়ে ঘুরতে গেলেন, সেখান থেকে আপনি লাইভে আসতে পারেন। বন্ধুদের নতুন কিছু জানালেন। নতুন একটা রেসিপি পেয়েছেন? রান্না করবেন? লাইভে এসে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। কিংবা বিজ্ঞানভিত্তিক অনেক কিছুই শেয়ার করা সম্ভব ; সর্বোপরি ইতিবাচক দিকের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

আমাদেরকে অবশ্যই শিক্ষামূলক দিকগুলো বের করতে হবে প্রতিটা বিষয়ের। তাহলেই আমরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারবো।

লিখেছেনঃ ফেরদৌস সাগর