Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানো হলো গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য

Sculptureবাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমেসিসের ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপনের কথা রয়েছে। হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, আওয়ামী ওলামা লীগসহ কয়েকটি সংগঠন পবিত্র রমজানের আগেই ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ভাস্কর মৃণাল হকের নেতৃত্বে ১৩ জন কর্মীসহ মোট ২০ শ্রমিক ভাস্কর্যটির ভিত ভাঙার কাজ শুরু করেন। ভোর চারটায় এটি সরানোর কাজ শেষ হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

chardike-ad

ঘটনাটি তদারকির সঙ্গে জড়িত একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মকর্তা জানান, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের সামন থেকে অপসারণের পর এদিন ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা মেট্রো ন-১৬-১৫০৪ নম্বরের পিকআপ ভ্যানে করে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের ভেতর পানির পাম্পের পাশে ভাস্কর্যটি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক ভাস্কর্যটিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নীল রঙের একটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখেন।

তিনি জানান, ‘আজকে পুনঃস্থাপন হচ্ছে না। দু’একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের জায়গায় ঢালাইয়ের কাজ চলছে, এ কারণে বিলম্বিত হতে পারে।

ক্ষুব্ধ ভাস্কর মৃণাল হক: ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভাস্কর মৃণাল হক সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে জানানো হয় যে, ভাস্কর্য সরানো হবে। ভাস্কর্যটি সরিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পেছনের দিকে এনেক্স ভবনে নেয়া হবে। সরানোর সময় ভাস্কর্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয় এ জন্য তদারকি করতেই ঘটনাস্থলে আছেন তিনি।

ভাস্কর্যটি অপসারণ করতে হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মৃণাল হক বলেন, আমাকে চাপ দিয়ে এটা সরানো হয়েছে। আমাকে এটা সরানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর হয়তো ‘অপরাজেয় বাংলা’, রাজু ভাস্কর্য ও শেরাটনের সামনের ঘোড়ার গাড়ির ভাস্কর্য সরানোর নির্দেশ আসবে।

‘প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ভাস্কর্য অপসারণ’: এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আমাকে ডেকেছিলেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের বারের বর্তমান ও সাবেক দায়িত্বশীলরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। এটি সরিয়ে নেয়া হোক এবং এমন জায়গায় স্থাপন করা হোক যেন প্রশ্ন না ওঠে। এসময় সুপ্রিম কোর্টের সামন থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি।’

এরপরেই প্রধান বিচারপতি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার একেবারেই বিপরীত। অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় ইমান, আকিদা ও ঐতিহ্য রক্ষায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

এরপর গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমি মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের এক সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত নয়।’

কওমী মাদ্রাসার আলেমদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরেন। এটা নিয়ে কোনো হইচই নয়। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে, সেটাকে আমাদের সরাতে হবে। সেটার জন্য আপনারা একটুকু ভরসা অন্তত রাখবেন যে এ বিষয়ে যা যা করার আমি তা করব।’

বিভিন্ন সংগঠনের আল্টিমেটাম: প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ১১ দিন পর গত ২২ শে এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত এক মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আসন্ন পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ‘গ্রিক মূর্তি’ অপসারণের আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূর্তি অপসারিত না হলে ১৭ রমজান সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঈদের পর সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও করে দুর্বার অন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

৬ মে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে আওয়ামী ওলামা লীগ নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘পবিত্র রমজান মাসের আগে গ্রিক দেবীর মূর্তি এবং প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে হবে। নইলে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য প্রধান বিচারপতি নিজেই দায়ী থাকবেন। পবিত্র রমজান শরীফ শেষে ঈদগাহে ঈদের নামাজ মুসল্লিরা বয়কট করবে।’

এছাড়া, গত ১৭ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের একাংশ সর্বোচ্চ আদালত চত্বর থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেধে দেয়। ভাস্কর্য অপসারণ না করা পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক। ডান হাতে নিচের দিকে করা একটি তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়ানো নারী। এই ভাস্কর্য স্থাপনের পর থেকেই বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন এবং আলেমগণ তা অপসারণের দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।