Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত

qatarমাত্র ৫ মাস আগেই ৭ লাখ টাকা খরচ করে ভাগ্য বদলের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পাড়ি জমিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মাদ সোলাইমান। নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের গুজিয়াখাই গ্রামের সোলাইমানের স্বপ্ন ছিল বিদেশের টাকায় বাড়িতে নতুন ঘর উঠবে, ঘরে আসবে টুকটুকে বউ। মা-বাবা আর স্বজনদের নিয়ে তার হবে সুখের সংসার।

কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে সেই স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিয়ে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে তাকে। বাড়িতে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, দেশে ফিরে আসতে বাড়ি থেকে বিমান ভাড়া পাঠাতে হচ্ছে তাকে।

chardike-ad

সোলাইমানের মতো আরও অনেক কাতার প্রবাসীর স্বপ্ন ভেঙ্গেছে। কাতারে কাজ করা প্রায় তিন লাখের মতো বাংলাদেশিদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে ‘বাধ্য হয়ে’ দেশে ফিরে আসার।

সম্প্রতি কাতারকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ একযোগে একঘরে করে ফেলেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় দেশটি এখন নানামুখী কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপের মুখে পড়েছে।

আর এই চাপ পড়েছে দেশটিতে থাকা প্রবাসী শ্রমিক-কর্মচারিদের ওপর। দেশটিতে নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ বন্ধের পাশাপাশি জীবনধারণের ব্যয়ও হুট করে বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

৩২ বছরের বাংলাদেশি যুবক অনিল। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতারের মহাকর্মযজ্ঞের এক সামান্য শ্রমিক তিনি। দোহার বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজে পাথর ভাঙার কাজ করেন।

মাসে বেতন পান ৮২০ রিয়াল। এর মধ্যে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানের জন্য প্রতিমাসে গড়ে ৫০০ রিয়াল পাঠাতেন তিনি। কিন্তু সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন এই প্রবাসী।

বার্তাসংস্থা এপিকে অনিল জানান, সেখানে কয়েকদিন আগে যে আপেল প্রতিকেজি ৭ রিয়াল বিক্রি হয়েছে তার দাম এখন ১৮ রিয়াল। তিনি জানান, এই অবস্থায় সকলেই তাদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কিত। একদিকে এখানে খরচ বেড়ে যাওয়া, আরেক দিকে ‘বাধ্যতামূলক’ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার আতঙ্ক!

কাতার সংকটে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরাও। তারা বলছেন, বর্তমানে কাতার সংকটের প্রভাব পড়তে পারে প্রবাসী আয় ও জনশক্তি রপ্তানিতে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেছেন, কাতার সংকটের কারণে প্রবাসী আয় আরও কমে যেতে পারে। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক প্রবাসী আয়ে।

এছাড়া কাতারে থাকা প্রবাসীদের পরিবারও দেশে পরতে পারেন চরম অর্থ সংকটে। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কাগদি গ্রামের আব্দুল বাতেনের বড় ছেলে আব্দুর রাজ্জাক থাকেন কাতারে। একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কাতারের রাজধানী দোহা যান রাজ্জাক।

যাওয়ার দুই মাস পর থেকেই নিয়মিত টাকা পাঠাতে শুরু করেন তিনি। তবে সেই টাকার বেশিরভাগই ঋণ শোধ করতেই শেষ হচ্ছে। গত এক বছরে ছেলেকে কাতার পাঠানোর জন্য জমিজমা বন্ধক রেখে, আত্মীয়-স্বজনদের থেকে যে ঋণ নিয়েছিলেন তার অর্ধেকটা মাত্র শোধ করেছেন আব্দুল বাতেন।

কিন্তু এখন শুনছেন তার ছেলেকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে! এই অবস্থায় আব্দুল বাতেন অথৈ সাগরে পড়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি জানেন না, ছেলে খালি হাতে ফিরে এলে বন্ধকী জমি ছাড়াবেন কী দিয়ে? ১১ জনের সদস্যের পরিবার চালাবেন কী উপায়ে?

সোলাইমানের বাবা কুতুবউদ্দীন মিয়াও চোখে অন্ধকার দেখছেন। সামান্য কৃষক কুতুবউদ্দীন জমি বিক্রি করে ছেলেকে কাতার পাঠিয়েছিলেন। ছেলে সেখানে ৫ মাসে ভালো কাজ না পাওয়ার পরেও হতাশ হননি তিনি। আশা করেছেন কয়েকদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন যখন শুনেছেন ছেলেকে ফিরে আসতে হবে, তখন আশা আর ধৈর্য্যের বাঁধ হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছে কুতুবউদ্দীনের। এখন ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাকি এক চিলতে জমি বন্ধক রাখতে এর-ওর দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকের এই বাবা।