Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাস্কর্য বানানো উৎসব

koreaদক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতের তালিকা করলে নিঃসন্দেহে শীর্ষে থাকবে বুসানের ‘হেউন্দে বিচ’। ডাউন টাউনের পাশেই এই বিচের সত্যিকারের প্রশস্ততা গড়ে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ মিটারের মতো হলেও ২০১৪ সাল থেকে বুসান নগরী কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের আগ্রহকে মাথায় রেখে সৈকতের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজ শুরু করে। প্রতি বছর শীতেই তাই বাইরে থেকে বালি নিয়ে আসা হয় সৈকতের যৌবন ধরে রাখতে।

আর এই কৃত্রিম বালির সৈকতেই যখন শুনি বালু উৎসব হচ্ছে, একবার ঢু মেরে আসা ছাড়া উপায় থাকে না। চার দিনব্যাপী চলা এই ‘বুসান স্যান্ড ফেস্টিভাল’ কিংবা ‘বুসান বালি উৎসব’ এর ঠিক শেষের দিন পা রাখি বুসান শহরে।

chardike-ad

তুলনামূলকভাবে হেউন্দে এলাকা বুসানের সবচেয়ে আধুনিক এলাকা। কোরিয়ান হেউন্দে শব্দের অর্থ ‘আধুনিক’- এতটা সঠিক নামকরণ খুব কমই দেখা যায়।

koreaসমুদ্র তটে গিয়ে দেখি এক এলাহী কাণ্ড। বেশ উঁচু এক বালির ঢিপি করে দেওয়া হয়েছে আর একাধিক বুথে বাচ্চাদের জন্য প্লাস্টিকের বোর্ড। বাচ্চারা লাইন ধরে নিজেদের বোর্ড নিয়ে থপ থপ পায়ে উঠছে সেই বালির ঢিপিতে। উপরে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্য করছে প্রতিটি বাচ্চাকে বোর্ডে বসিয়ে নিচের দিকে ঠেলে দিতে। বালির পাহাড় থেকে বোর্ডে বসে পিছলে নিচে নামতে বাচ্চাদের সে কী অপার আনন্দ!

ভবিষ্যতের পিকাসোরা ব্যস্ত একটা সামিয়ানা খাটানো স্টলে। রঙ মেশানো বালি দিয়ে ইচ্ছামতো ছবি আঁকতে ব্যস্ত একেকজন। কাগজে প্রথমে পেন্সিল দিয়ে এঁকে আউটলাইন করে তারপর খুব সাবধানে আঠা বসাচ্ছে ছোট্ট হাতে। মনোযোগের সাথে ঠিক জায়গায় ছড়াচ্ছে সঠিক রঙের বালু। সব শিশুর সাথেই তাদের বাবা কিংবা মা থাকলেও নিজেদের শিল্পকর্মে অন্যের হাত লাগতে দেওয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড সংবেদনশীল।

পাশেই আবার একদল প্লাস্টিকের শোভেল আর স্পেড নিয়ে তৈরি। ঘোষণা পাওয়া মাত্র শুরু করবে বালি খুঁড়ে গুপ্তধন বের করার খেলা।

দেবশিশুদের বালি খেলা দেখে পা বাড়াই প্রাপ্তবয়স্কদের শিল্পের দিকে। বড় বড় কয়েকটি ভাস্কর করে রেখেছেন ভাস্করেরা। প্রতিটা ভাস্কর্যে একটি করে মেসেজ দেওয়া। কোনটা বন্ধুত্বের জন্য, কোনটা প্রিয়জনের জন্য, কোনটা আবার পরিবারের প্রতি উৎসর্গকৃত। মায়ের প্রতি উৎসর্গকৃত ভাস্কর্যে ছেলে একটি বার্তা লিখে রেখেছে, ‘মা, তোমার ছেলে ২০১৭ বুসান বালি উৎসবে একটি ভাস্কর্য বানিয়েছে।’

koreaচারদিকে হাঁটু সমান উঁচু ঘের দিয়ে দেওয়া ভাস্কর্যগুলো গত তিনদিন ধরে অক্ষত আছে। এত মানুষের ভিড় কিন্তু কেউ একবারও দড়ি টপকে ভাস্কর্যগুলো হাত দিয়ে ধরে দেখছে না কিংবা সহজ বাংলায় নষ্ট করতে উদ্যত হচ্ছে না।

সবচেয়ে মজা লাগলো এই ভাস্কর্যগুলো দেখে বেশ কিছু বাচ্চা নিজেরাও ভাস্কর্য বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমি অবাক হবো না, এই বাচ্চাদের মধ্য থেকেই একদিন কোন সেরা ভাস্কর বেড়িয়ে এলে।

সন্ধ্যার দিকে সব ভাস্কর্যের উপর রঙিন আলো ফেলে আরও মোহনীয় করে তোলা হয়। শেষ দিন উপলক্ষে ছিল বিশেষ আতশবাজির আয়োজন। পরদিনই সোমবার থাকায় দেরি করা হয় নাই। মোবাইলেই অনলাইনে বাসের টিকেট কেটে সাবওয়েতে বাস টার্মিনালে রওনা দেই। ব্যস্ত ট্রেনে ফেইসবুকে ঢুকেই দেখি লেডি জাস্টিসকে অ্যানেক্স ভবনের সামনে নিয়ে এসেও খুশি করা যাচ্ছে না।

দেশে যখন ভাস্কর্য নাকি মূর্তি – ধর্মীয় স্থাপনা থাকবে নাকি থাকবে না, এসব নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলছে, তখন ছোট্ট একটা সৈকতে এতো চমৎকার বালির ভাস্কর্য সব দেখে দীর্ঘশ্বাস বের হয় বৈকি!

লেখক: সৈয়দা শামীমা নাসরীন, কোরিয়া থেকে