Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী পারভেজ

parvejভাগ্য ফেরানোর আশায়, দালালদের প্রলোভনে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে ফেনীর পারভেজ (২৫) লুফে নেন মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর আগে ঘুণাক্ষরেও উপলব্ধি করতে পারেনি, কী আছে সামনে। পারভেজ তখন ভাগ্য বদলের নেশায় বিভোর।

পরিবারের অভাব দূর করতে ও মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে তারই এলাকার দালাল নাসিরের প্ররোচনায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়া যান পারভেজ। সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তার চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

chardike-ad

কুয়ালালামপুরের চানছাউলিং একটি গেমসের দোকানে কাজ করে গত ১ এপ্রিল বাসায় ফেরার পথে পুলিশ পরিচয়ে ৪/৫ জন তামিল সন্ত্রাসী তাকে মারপিট করে মোবাইল নগদ এক হাজার রিঙ্গিত নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, পারভেজের ডান হাত ভেঙে যায়।

ছেলের এ দুর্ঘটনার খবর শুনে বাবা মকবুল আহমেদ স্ট্রোক করে মারা যান। আর দীর্ঘ দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর কর্মস্থলে আর কাজ ফিরে পান না, মালিক বিদায় করে দেয়। কারণ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়ে গেছে ভিসার মেয়াদ।

এলাকার দালাল নাসির, ঢাকার দালাল নয়ন আর মালয়েশিয়ার দালাল টিটুর সঙ্গে যোগাযোগ করেও পারভেজের লাভ হয়নি। কিন্তু মালয়েশিয়া পাঠানোর সময় এদের সঙ্গে প্রফেশনাল ভিসায় দুই বছরের চুক্তি ছিল। এক বছরের পর আর ভিসা লাগেনি। এদিকে হাসপাতাল থেকে বাসা, বাসা থেকে হাসপাতালে ছুটোছুটি করতে করতে ক্লান্ত পারভেজ।

প্রায় দুই মাস কাজ করতে না পারায় পড়েছে চরম অর্থ সঙ্কটে পড়ে। অনেক দিন কাজ না করতে পারায় বর্তমানে নিদারুণ কষ্টে ভাঙা হাত নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। অনেক ধারদেনা করে প্রবাসে গিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও এখন প্রাণে বাঁচার লড়াইয়ে পারভেজ।

অন্যদিকে কাছের কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকায় ও সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন পারভেজ। সিদ্ধান্ত নেন দেশে চলে যেতে। ট্রাভেল পাসও করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে টিকিট কেটে যেতে পারছেন না তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ মে) মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলে শ্রম কাউন্সেলর মো. সায়েদুল ইসলাম প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মকবুল হোসেন মুকুলকে বললে মুকুল পারভেজের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দুই মাস আগে প্রবাসে ছেলের দুর্ঘটনার খবর শুনে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন বাবা। আর দেশে ফেরার আগেই চলে গেলেন মা। মায়ের লাশ দাফনের অপেক্ষায় পারভেজের।

আজ শনিবার ভোর রাতে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন পারভেজ মাকে দাফন করতে। ফেরার সময় পারভেজের ঝুলিতে থাকছে কেবল মালয়েশিয়া-জীবনের দুঃসহ স্মৃতি।