Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবৈধদের ধরতে মালয়েশিয়ার নতুন কৌশল

malaysiaমালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ধরতে এবার নতুন কৌশল নিয়েছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। অবৈধ শ্রমিকদের যেসব প্রতিষ্ঠান কাজে লাগাচ্ছে তার মালিককে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সরকার। এবার ওই সব মালিককে গ্রেপ্তার এড়াতে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ধরিয়ে দিতে বলেছে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তফার আলী গতকাল বৃহস্পতিবার মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। বিপথগামী মালিকদের উচিত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া।’

chardike-ad

মুস্তফার আলী সরকার ঘোষিত ‘থ্রি প্লাস ওয়ান’ কর্মসূচির আওতায় জরিমানা দিয়ে শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। এই কর্মসূচির আওতায় ৪০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে এবং নিজ দেশের বিমানের টিকিট কেটে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা দেশে ফিরতে পারবে।

অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলমান অভিযানে ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি অবৈধ বিদেশি শ্রমিক আটক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের কাজে লাগানোয় ৪৪ জন মালিককেও আটক করা হয়েছে। আটক বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে এক হাজারের মতো বাংলাদেশি।

এদিকে অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মুস্তফার আলীর সঙ্গে আগামী ১০ জুলাই জরুরি বৈঠক করার কথা রয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশার মো. শহিদুল ইসলামের। ওই বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশিদের মুক্তি এবং বৈধ হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া যাচাই-বাছাইয়ের পর আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে ফেরত আসতে চাইবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে হাইকমিশন। তবে গতকাল পর্যন্ত আটক বাংলাদেশিদের সুনির্দিষ্ট তালিকা হাতে পায়নি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশন।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানায়, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যারা আটক হয়েছে, তাদের মুক্তির বিষয়ে হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আটককৃতদের মধ্যে কেউ বড় ধরনের অপরাধে জড়িত না থাকলে রিহায়ারিংয়ের আওতায় তাদেরও বৈধ করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, ‘আটক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। শুধু তাই নয়, যারা আটক হয়েছে তাদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে চাইবে তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। যারা যেতে চাইবে না তাদের কিভাবে বৈধ করা যায় সে চেষ্টা করা হবে। ’ তবে তিনি জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশে ফেরত যেতে চায় না।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা খন্দকার মাহতাব বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর থেকেই মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীরা আতঙ্কে দিন পার করছে। ই-কার্ড করার ক্ষেত্রে কম্পানির মালিকরা গাফিলতি করায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে প্রবাসীরা। ’ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা বলছেন, আটক বাংলাদেশিদের হাতে তো আর টাকা নেই। তারা কিভাবে জরিমানা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে দেশে যাবে? তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতা করা উচিত।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোনো ধরনের চিঠি পাইনি। সেখানে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই আমরা করব। ’

অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার এনফোর্সমেন্ট কার্ডের (ই-কার্ড) মাধ্যমে সাময়িক বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। ই-কার্ড নেওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। ওই সময়ে যারা বৈধ হয়নি তাদের ধরতে ৩০ জুন মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে শাহআলম, জরুরবারু, পেনাংসহ বিভিন্ন প্রদেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অবৈধ প্রবাসীদের অনেকে বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।