Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঈদ শেষে ফেরা হলো না প্রবাসী সাহেদের

sahedঈদের ছুটির পর ২৭ জুন মঙ্গলবার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরতের প্রথম কর্মদিবস। ছুটির পরেও অফিসপাড়া জমে ওঠেনি। ছুটির দ্বিতীয় দিন শনিবার হাতের কিছু কাজ সেরে রুমমেটের বানানো চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফেইসবুক খুলে বসেছি। অমনি চোখ আটকে গেল যশোরের সাগর ভাইয়ের পোস্টের ওপর। আমাদের অনেকেরই প্রিয় প্রবাসী সংগঠক সুহৃদ নুর হোসেন সুমনের ছোট ভাই সাহেদ ঢাকায় রোড অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসপাতালের আইসিইউতে আছে।

বুকের ভেতর ধুকপাক শুরু হল। ফেইসবুক ছেড়ে হাতে ফোন তুলে নিলাম, বন্ধুমহলে তখনও অনেকে বিষয়টা জানেন না। সুমন ভাই দেশে, সাগর ভাইয়ের সাড়া নেই, মামুন ভাইয়ের ফোন ব্যস্ত। বুকের কাঁপন বাড়তেই থাকে।

chardike-ad

রাত আটটার দিকে সাগর ভাই কল ব্যাক করলে তার কাছ থেকে ঘটনার কিছুটা জানলাম। রাতভর উৎকণ্ঠায় ছিলাম, না জানি সকালে উঠে কী খবর পাই। অফিসে কাজের ফাঁকে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করছি, এরই মধ্যে বেলা দেড়টায় সাগর ভাই ধরা গলায় ফোন দিলেন- সাহেদ আর নেই ভাই! চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো বেদনার জল।

শুক্রবার ঢাকার কুড়িল মহাসড়কের তিনশ’ ফুট রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় আবুধাবি প্রবাসী ব্যবসায়ি সাহেদ হোসেন (২৬) আহত হন। আহত আরো ৫ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হলেও ঢাকার একটি হাসপাতালে সাহেদের তলপেট ও পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া দু’টায় হাসপাতালে তিনি মারা যান।

সাহেদের আবুধাবি প্রবাসী আত্মীয় মিজানুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরির সময় তাদের বহনকারী পাজেরোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কুড়িল মহাসড়কে ব্রিজের রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়।

নিহত সাহেদ লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার ৮ নং করপাড়া ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের আবদুল বেপারী বাড়ির মৃত হাফিজ উল্লাহর ছোট ছেলে। সাহেদ তার বড় ভাই ও বৃহত্তর নোয়াখালী ফোরাম আবুধাবির সদস্য সচিব নুর হোসেন সুমনের মালিকানাধীন খালিফা মোহাম্মদ হোসেন জেনারেল কন্ট্রাক্টিং কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন।

বারবার সুমন ভাইয়ের কান্না ভেজা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। পিতৃস্নেহে বাবাহারা ভাইদের তিলে তিলে মানুষ করছিলেন তিনি। অনেক সামান্য অবস্থান থেকে আজকের অবস্থানে তিনি উঠে এসেছেন পরিশ্রম আর মেধার জোরে। তার প্রতিষ্ঠানে আজ পাঁচশ’ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে।

বয়সে অনেক ছোট হলেও দুই ভাই রুবেল হোসেন আর সাহেদ হোসেনকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে টেনে এনেছেন, এই আদরের ছোট ভাইয়ের অকালে হারিয়ে যাওয়ার ভার তিনি সইবেন কি করে!

আবেগটাকে খানিকটা সামলে নিয়ে এবার একজন প্রবাসী সংবাদকর্মীর দায় পালনে কি-বোর্ডে হাত চালালাম। লিখছি আর হাতের আঙুলগুলো ভারি হয়ে আসছে। সাদা পৃষ্ঠা অক্ষরে ভরছে, চোখটাও কি জলে ভরে উঠেনি!

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি,আবুধাবি থেকে