Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হার না মানা আরিফার গল্প

Arifaছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে অভাবের সংসার। দুই বোন আরিফা আক্তার ও ফারজানা আক্তার। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় কম বাস্তবতা দেখেননি শরীয়তপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাশাভোগ গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেন সিকদারের স্ত্রী পারুল বেগম। দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে যখন অনেক কষ্ট তখন মেয়েদের পড়াশুনা শেখানোর স্বপ্নও বিলাসিতা মনে হত।

আরিফা আক্তার বলেন, আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবা চট্টগ্রামে একটি দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর পুরো পরিবার নিয়ে কাশাভোগ গ্রামের সিরাজুল হক মোল্যার বাড়িতে ছোট একটা ঘর তুলে কোনোরকমে জীবন চলে আমাদের। নিজের ও বোনের পড়াশুনা এবং সংসারে সাহায্য করতে আমি ক্লাস ফোরে থাকতেই টিউশনি শুরু করি। প্রাইমারি শেষ করে কিছুদিন এতিমখানায় লালিত-পালিত হই।

chardike-ad

টিউশনি করেই শরীয়তপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে ২০০৮ সালে জিপিএ ৪.০৯ পেয়ে মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং ২০১০ সালে জিপিএ ৪.৪৪ উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসএসি) পাস করেন আরিফা আক্তার। পাশাপাশি কম্পিউটারের কাজ, মায়ের কাছ থেকে সেলাইয়ের কাজ, মহিলা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কুটির শিল্পের কাজ শেখেন।

এইচএসসি পাসের পর থেকে কয়েক বছর শরীয়তপুর জেলা পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর পদে মাস্টার রোলে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসেবে এতিম কোটায় চাকরি পান।

আরিফা আক্তার জানান, চাকরি পাওয়ার পর ২০১৫ সালে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। এখন তিনি সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে মাস্টার্স করছেন। তার ছোট বোন ফারজানা আরফিন মিতু শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করেছে।

আরিফা আক্তারের মা পারুল বেগম বলেন, বাবাহারা দুই মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। ওর বাবার গ্রামের বাড়িতে মোটামুটি কিছু জমি-জমা ছিল কিন্তু কোনো অভিভাবক না থাকায় অন্যরা ভোগদখল করে আছে। ছোট মেয়ের যখন দেড় বছর আর বড় মেয়ের পাঁচ বছর বয়স তখন তাদের বাবা মারা যায়। আরিফা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় টিউশনি শুরু করে। আমি অনেক বলেছি এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করার দরকার নেই। কিন্তু সংসারের অভাব সত্ত্বেও সে নিজের ও বোনের লেখাপড়া চালিয়ে গেছে।

তিনি জানান, এখন আমরা আল্লাহর মেহেরবানীতে অনেক ভালো আছি। থাকার জন্য সামান্য একটু জমিও কিনেছি।