Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়, হাইকমিশনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন

ফাইল ফটো

মালয়েশিয়ায় আড়াই হাজারের বেশি কর্মী আটক হলেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভূমিকা রহস্যজনক। বাংলাদেশী আটকের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে কর্মীরাও কাক্সিক্ষত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। গত কয়েক দিনে কর্মীরা টেলিফোনে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। পাসপোর্ট নবায়ন ও ওয়ার্ক পারমিটের কাগজপত্র হালনাগাদ করতে কর্মীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের মতো অভিযোগও উঠেছে। হাইকমিশনের কারণেই মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী আটক করে চলেছে। যদি তারা অন্য দেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসের মতো ভূমিকা পালন করত তাহলে এত বাংলাদেশী আটক হতো না। কর্মী আটক নিয়ে হাইকমিশনের কোন কর্মকর্তার মাথাব্যথা নেই। হাইকমিশনের বারান্দা, ক্যান্টিন আর আশপাশের জায়গায় কর্মীরা দিনরাত অপেক্ষা করছে কাগজপত্র ঠিক করার জন্য। কিন্তু কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃত তাদের বসিয়ে রাখছে। অবশ্য হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কর্মীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, যখন যে কর্মী হাইকমিশনে আসছে তাদের সব সমস্যা সমাধান করে দেয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট আর ১২ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কাগজপত্র ঠিক করে দেয়া হয়। এত বিপুলসংখ্যক কর্মী অবৈধ যে, যত দ্রুতই কাজ করা হোক না কেন কিছুটা সময় লেগে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ গত ৫ আগস্ট থেকে আবার অবৈধ বিদেশী কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। কয়েক দিনে দেশটিতে বাংলাদেশের ৫০৬ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। হাইকমিশনের ভেতর থেকেও ৭৬ কর্মীকে আটক করা হয়। তবে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন জেনেছে, ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কর্মীকে আটক করেছে। এর আগে দ্বিতীয় দফায় (২৭ জুলাই) বাংলাদেশের ১১৩ কর্মীকে আটক করা হয়। সব মিলে দেশটিতে বাংলাদেশের মোট এক হাজার ৮৩৬ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটক অভিযান চলমান রেখেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফা মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আর কোন বৈঠকে বসেনি। কর্মীদের আটক না করার জন্য পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোন চিঠিও দেয়া হয়নি। ফলে হাইকমিশন কত সংখ্যক কর্মী আটক হয়েছে এ তথ্যও জানে না। তবে মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দেশটিতে আড়াই হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। যাদের ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। আটক কর্মীদের ওপর পুলিশের বর্বর নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে।

chardike-ad

মালয়েশিয়া থেকে খবর মিলেছে, কুয়ালামলামপুরে মসজিদ ইন্ডিয়া এলাকা থেকে বহু কর্মীকে আটক করেছে। এ হিসাব বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানায়নি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। পুলিশ দিনে রাতে বিভিন্ন এলাকায় ব্লকরেইড দিচ্ছে। বৈধ-অবৈধ যাকেই সামনে পাচ্ছে, তাকেই আটক করে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে। ডিটেনশন সেন্টারে আটককৃতদের ওপর পুলিশের বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে। কয়েক দিনে কত সংখ্যক আটক করেছে তা জানার চেষ্টাও করেনি বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশন যেন ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে’ এমন অভিযোগ করেছেন এক কর্মী। তিনি চারদিন আগে হাইকমিশনে তার কাগজপত্র ঠিক করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরে তাকে টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়েছে। তার অভিযোগ হাইকমিশনের কোন কর্মকর্তা দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে না। বরং হাইকমিশনের ভেতর থেকে সম্প্রতি ৭৬ কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।

হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কত সংখ্যক কর্মী আটক হয়েছে তার একটা তালিকা পাঠায়। ওই তালিকা শনিবার পর্যন্ত তাদের হাতে আসেনি। প্রথম দফায় আটক অভিযানের পর বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের বৈঠকের পর বলা হয়েছিল আর কোন কর্মী আটক করা হবে না। কিন্তু ওই বৈঠকের পর পুলিশ আরও দুইবার অভিযান পরিচালনা করছে। তৃতীয় দফার অভিযান কত দিন চলবে তা হাইকমিশন জানে না। এবারের অভিযানের বিষয়ে হাইকমিশনকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। পুলিশ হঠাৎ করেই শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কয়েকশ’ কর্মীকে আটক করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৪৩০ কর্মী আটক হয়েছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের বৈঠকে সময় জানিয়ে দেয়া হয় কর্মীদের ই-কার্ড দেয়ার আর কোন সময় বাড়ানো হবে না। তবে রি-হায়ারিংয়ে নিবন্ধন চলবে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তথ্য জানিয়েছে। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের অবৈধ এক হাজার ৩৩৩ জন কর্মীকে আটক করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন করে আরও সাড়ে ৫০৬ কর্মীকে আটকের বিষয়টি জানায়নি। তবে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। কর্মীদের ৪শ’ রিংগিত জরিমানা দিয়ে নিজ খরচে দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।

মালয়েশিয়ার বিষয়ে বিএমইটির জানিয়েছে, মালয়েশিয়া অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার জন্য এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) সময় বাড়ানো চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ই-কার্ডের জন্য আর কোন সুযোগ দেবে না। তবে তারা রি-হায়ারিংয়ে নিবন্ধন কর্মসূচী বহাল রেখেছে। এ কর্মসূচী এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২ লাখ ৯৩ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ লাখের মতো কর্মী নিবন্ধিত হতে পারবেন। ই-কার্ডের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দু’দফা বৈঠকের পরও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ কর্মসূচীর আর সময় বাড়ানো হবে না। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনার সুযোগ তারা দেয়নি। এখন আমরা জোর দিয়েছি রি-হায়ারিং কর্মসূচীর ওপর। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মালিকপক্ষ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তারাও কোন অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করাতে চান না। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করানোর দায়ে ৫৯ জন মালিককেও আটক করেছে। দফায় দফায় সময় দেয়ার পরও বহু অবৈধ কর্মী ই-কার্ড নেয়নি। যারা ই-কার্ডের আওতায় আসেনি তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান মুস্তাফার আলী বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়ে বলেন, খুব কম কর্মী ই-কার্ডের সুবিধা নিয়েছে। বাকি বেশির ভাগ কর্মীই ই-কার্ডের সুযোগ নেয়নি। এ অবস্থায় আরেক দফা সময় বাড়ানোর কোন কারণ নেই। আরও কয়েক দফা সময় বাড়ানো হলেও অবৈধরা অবৈধই থেকে যাবে। আটককৃতদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ই-কার্ড কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। অন্য সোর্স কান্ট্রি থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশি সংখ্যক কর্মী ই-কার্ডের আওতায় এসেছে। কিছু কর্মী দালাল ও মালিকদের কারণে ই-কার্ড পাননি। তাদেরই পুলিশ আটক করছে। যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার জন। যেহেতু বাংলাদেশীরা নিবন্ধনের সুযোগ নিচ্ছেন, তাই তারা যেন ভয়ভীতি ছাড়াই এ কর্মসূচীর সুযোগ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর পর মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মালিকদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ নিতে চান তাদের যেন অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এ অনুমতিপত্র হাতে থাকলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী রি-হায়ারিং কর্মসূচী বিষয়ে এ কথা জানান।

এদিকে, জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) নেতৃবৃন্দ বলেন, মালয়েশিয়ায় যখন বৈধপথে লোকজনের কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য বাজারটিতে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র ও ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানো, সাগরপথে হাজার কর্মী পাচার না হলে আজ মালয়েশিয়াতে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। দেশটিতে কর্মীদের এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতি অভিযোগ তুলে তারা বলেন, আজকের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য বড় ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিও তারা অভিযোগ তুলেছে। জনকন্ঠ