Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সার্কাস ইতিহাসের মারাত্মক কিছু দুর্ঘটনা

circusবিশ্বের পুরাতন এবং জনপ্রিয় শারীরিক কসরতের মধ্যে অন্যতম সার্কাস। এই প্রযুক্তির যুগেও শিশু থেকে প্রবীণ- সব বয়সের মানুষ সার্কাস মোহে থাকেন। গ্যালারিতে বসে সার্কাস দেখেন- এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও সার্কাসপ্রেমীদের সাক্ষাৎ মিলে।

সার্কাস শুধু মানুষের কসরত নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সার্কাসে হিংস্র প্রাণির অংশগ্রহণ থাকে। গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের সামনে হাসি-তামাশায় মেতে থাকেন সার্কাস শিল্পীরা। অনেক বিপজ্জনক কসরত দেখানোর সময়ও তাদের মুখে হাসি লেগে থাকে। কিন্তু ইতিহাস থেকে জানা যায়, সার্কাস দেখাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন- এমন শিল্পীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। একেকটি সার্কাসের তাবু মানেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ।

chardike-ad

সার্কাস শো-এর দর্শকরা হাততালি দিয়ে ঘরে ফিরলেও সার্কাস শিল্পীরা সব সময় হাসি মুখে ঘরে ফিরে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারা জীবন মনে রাখার মতো বিভীষিকাময় ঘটনাও ঘটে।

Mary-the-elephant
মেরি দ্য এলিফ্যান্ট

মেরি দ্য এলিফ্যান্ট: ৫ টন ওজনের মেরি ছিল একটি এশিয়ান মেয়ে হাতি। সে ‘খুনি মেরি’ নামেও পরিচিত। মেরি ‘দ্য স্পার্ক ওয়ার্ল্ড ফেমাস সার্কাস শো’-তে ট্র্যাডিশনাল হাতি হিসেবে খেলা দেখাতো।

১৯১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সার্কাস শোতে রেড অ্যাল্ড্রেজ নামে একজন হোটেল কর্মচারীকে হাতির প্রধান ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই দিনই কিন্সপোর্ট টেনেসিতে মেরির আঘাতে মারা যান ওই কর্মচারী।

১৩ সেপ্টেম্বর সকালে মেরিকে ২,৫০০ লোকের সামনে (যাদের বেশিরভাগই ছিল শিশু!) একটি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ক্রেনের সঙ্গে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রথমবার মেরিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে দেওয়ার পর ক্রেনের চেইন তার গলা পিছলে বেরিয়ে গেলে মেরি মাটিতে পড়ে তার কোমর ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে আরও মজবুত চেইন দিয়ে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্রেনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রায় ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে মেরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়!

Desi-Ispana
দেসি ইস্পানা দ্য শিফন অ্যাক্রোব্যাট

দেসি ইস্পানা দ্য শিফন অ্যাক্রোব্যাট: সার্কাস দুর্ঘটনার ইতিহাসের সাম্প্রতিক ঘটনা হলো- দেসি ইস্পানার মৃত্যু। দেসি ইস্পানা একজন গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী বুলগেরিয়ান আমেরিকান শিফন অ্যাক্রোব্যাট পারফর্মার। ২০০৪ সালে রিংলিং ব্রাদার্স অ্যান্ড বারনুম অ্যান্ড বেইলি সার্কাস শো’তে পারফর্ম করার সময় ৩০ ফুট উঁচু থেকে নিচে কংক্রিটের ফ্লোরে পড়ে মারা যান তিনি।

Masarti-lion
মাসারতি, দ্য লায়ন টেমার

মাসারতি, দ্য লায়ন টেমার: ১৮৭২ সালের ৩ জানুয়ারি থমাস ম্যাকার্ট একজন লায়ন টেমার হিসেবে তার জীবনের শেষ পারফর্ম করেন ল্যাঙ্কাশায়ারের বল্টনে। তিনি সে সময়ের একজন বিখ্যাত, সাহসী ও বেপরোয়া একহাতি লায়ন টেমার ছিলেন।

সার্কাসে পারফর্মেন্সের সময় থমাসের টাইরেন্ট নামের একটি সিংহ হঠাৎ তাকে আক্রমণ করে। একইসঙ্গে আরও তিনটি সিংহ থমাসকে ঘিরে আক্রমণ চালায়। ৫ হাজার দর্শকের সামনে থমাসের মাথার খুলি শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে সিংহগুলো।

The-sent-luice
দ্য সেন্ট লুইস ট্র্যাপিজ অ্যাক্সিডেন্ট

দ্য সেন্ট লুইস ট্র্যাপিজ অ্যাক্সিডেন্ট: ট্র্যাপিজ নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর দুঃসাহসিক ও বিপদজনক সার্কাস খেলা। এই খেলার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে অসীম শারীরিক শক্তি ও ফ্লেক্সিবিলিটি। ১৮৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্রেড লিজিলি ও বিলি মিলসন নামের দুই জন বিখ্যাত ট্র্যাপিজ শিল্পী পারফর্মেন্স চলাকালে যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে নিচে জর্জ নামের আরেকজন শিল্পীর উপর পড়ে যান। তিনজন সার্কাস আর্টিস্টই মারাত্মক আঘাত পান। লিজিলি কিছুটা কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিলির পাঁজর ভেঙে যায় এবং জর্জের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়।

The-flying
দ্য ফ্লাইং ওলেনডাস

দ্য ফ্লাইং ওলেনডাস: ‘দ্য ফ্লাইং ওলেনডাস‘ সার্কাস ইতিহাসের অন্যতম প্রবীণ সার্কাস পার্টি। এই সার্কাস পার্টির কর্ণধার কার্ল ওলেনডাস। স্ত্রী হেলেন ও ভাই হেরমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পারফর্ম করতেন তিনি। ১৯৬২ সালে ফ্লাইং ওলেনডাস সার্কাস দল এক বিভীষিকাময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন; যা কি না তাদের পুরো পরিবারকে একদম মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়।

ফ্লাইং ওলেনডাসের একটি অন্যতম পারফর্মেন্সের নাম হচ্ছে ‘সেভেন পারসন চেয়ার পিরামিড’; যেখানে ৭ জন মানুষ মাটি থেকে ৩২ ফুট উপরে শূন্যে একটি শক্ত দড়ির উপর চেয়ার রেখে তারপর পারফর্ম করেন কোনো প্রকার সেফটি নেট ছাড়াই।

সেই সময়কার দুঃসাহসী ও স্বনামধন্য অ্যাক্রোব্যাট পারফর্মার হওয়া সত্বেও ভাগ্য একদিন তাদের প্রতি নির্দয়তা দেখায়। সেদিন পারফর্মেন্সের সময় দলনেতা হুট করেই তাল হারিয়ে ফেলেন এবং তিনজন পারফর্মার নিচে পড়ে যান। কার্ল ওলেনডাসের মেয়ের জামাই এবং ভাতিজা সেখানেই মারা যান, আর দত্তক নেওয়া এক ছেলে কোমর ভেঙে সারা জীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান এই দুর্ঘটনায়।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট