Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ এশিয়ার কুখ্যাত এক নারী মাফিয়ার গল্প

fulon-deviনারী। নামটির সঙ্গেই যেন মায়া, মমতা আর মাতৃত্ব মিশে আছে। সমাজে অপরাধকর্মে পুরুষরা জড়িত থাকলেও নারীরা স্বভাবসুলভ কারণেই এই নেতিবাচক দিকে জড়ায়নি। তবে ‘নারী’ পরিচয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়া কিংবা পুরুষ নিরাপত্তা বাহিনীকে বশীভূত করা যায় সহজেই। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পৃথিবীব্যাপী দুধর্ষ সব অপরাধে জড়িয়েছেন অনেক নারী। ভারত উপমহাদেশের সেরকম এক দস্যুরানীকে নিয়েই আজকের আয়োজন:

দস্যুরানী ফুলন দেবী: ভারতজুড়ে এক সময় আতঙ্কের নাম ছিল ফুলন দেবী। সমাজে বঞ্চনার শিকার হয়ে চরম প্রতিশোধ নেশায় মত্ত হয়েছিলেন এই নারী। ১৯৬৩ সালে জন্ম নেয়া ফুলন দেবী লুণ্ঠন আর হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন সমানতালে। অল্প সময়ের মধ্যেই দরিদ্র, অসহায় নারী থেকে হয়ে ওঠেন দস্যুরানী। ফুলন দেবীর জীবনের শুরুটা ছিল অন্য আর পাঁচটি গ্রামের মেয়ের মতই সহজ-সরল।

chardike-ad

মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে হলে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে টিকতে না পেরে তাকে ফিরতে হয় বাপের বাড়িতে। এরপর আরেক ঘটনায় তাকে চোর সাব্যস্ত করে তিন দিনের জেল দেয়া হয়। জেলে থাকা অবস্থায় ধর্ষণের শিকার ফুলনকে গ্রহণ করেনি তার নিজ গ্রামের মানুষ। চরম প্রতিশোধ পরায়ন ফুলন যোগ দিলেন দস্যুদলে।

fulon-deviদস্যু দলে ফুলনের প্রেমে পড়েন দস্যু নেতা বাবু। বাবু ফুলনকে জোরপূর্বক বিছানায় পেতে চাইলে আরেক দস্যু বিক্রম তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। সিনেমার গল্পের মতই কামুক বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করেন বিক্রম। এই সুবাদে বিক্রম-ফুলনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা একে অপরকে বিবাহ করেন।

এরই মাঝে ফুলন অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন, আর হঠাৎ করেই একদিন খুন হয় বিক্রম। বিক্রমের অনুসারীরা ফুলনের ওপর খুনের দায় চাপায় এবং তাকে বেমাই গ্রামের ঠাকুরদের কাছে ছেড়ে দেয়। টানা ২৩ দিন গ্রামের ঠাকুর ও তার লোকেরা পালাক্রমে ধর্ষণ-নির্যাতন চালায় তার ওপর। ১৭ বছর বয়সী ফুলনের উপর প্রতি রাতে জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলতে থাকে পাশবিক নির্যাতন। একরাতে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান ফুলন। প্রতিশোধের নেশায় গঠন করেন আলাদা বাহিনী।

নিজস্ব বাহিনী নিয়ে প্রথমেই হামলা চালান তার প্রথম স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখেন। এরপর ফুলনের প্রতিশোধের চোখ পড়ে ঠাকুরদের উপর। এক বিয়ে বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ফুলন তার দুই ধর্ষক ঠাকুরকে হত্যা করেন। দুই ঠাকুরকে হত্যা করার পর মনে মনে শপথ নিলেন বাকি ধর্ষক ঠাকুরদেরও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবেন। ফুলন তার অনুসারীদের নিয়ে ১৯৮১ সালে বেমাই গ্রামে আক্রমণ করে ২২ জন ঠাকুর ও ধর্ষকদের হত্যা করেন।

fulon-deviদুধর্ষ ফুলনকে ১৯৮৪ সালের দিকে সরকার সন্ধিপ্রস্তাব দেয়। ফুলন দেবী সন্ধিপ্রস্তাব মেনে নিয়ে ১০ হাজার মানুষ আর ৩০০ পুলিশের সামনে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারিক আদালত তাকে ১১ বছরের কারাবাস দেয়। কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে পরপর দুই মেয়াদে ভারতের লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে পাল্টে দেন নিজের কর্মক্ষেত্র। দস্যুতা ছেড়ে দেয়ার ‍সুযোগে তার পিছু নেয় শত্রুরা। ২০০১ সালে সুযোগ সন্ধানী এক আততায়ীর হাতে খুন হন ফুলন দেবী।

তার দুধর্ষ জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্র (Bandit Queen)। ২০ বছরেরও কম বয়সে নিরক্ষর, নিরস্ত্র ও নিরহ মেয়ে থেকে ফুলন এভাবেই হয়ে ওঠেছিলেন দস্যু রানী। নির্যাতিত নারীদের পক্ষে বিদ্রোহী শক্তি হিসেবেও আবিভূত হয়েছিলেন তিনি। ২৪লাইভনিউজপেপার