Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা সেকেলে

airport-fire-serviceগত দেড় বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের এক প্রতিবেদন বলছে, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা যথেষ্ট না থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ গত ৩১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিমানবন্দরের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও রেস্তোরাঁগুলোয় আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ ছাড়া আগুন নেভাতে ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম, ফায়ার ওয়াটার পাম্প সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থা নেই শাহজালাল বিমানবন্দরে। এসব ব্যবস্থা স্থাপন ছাড়াও বিমানবন্দরটিতে স্থায়ী একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন, বিমানবন্দর-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগুন প্রতিরোধ, নেভানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেস্টুরেন্টগুলোকে ফায়ার লাইসেন্স নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

chardike-ad

বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর তৃতীয় তলায় এয়ার ইন্ডিয়ার কার্যালয়ে গত ১১ আগস্ট দুপুরে আগুন লাগে বলে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। তাদের ১০টি ইউনিট ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৭ জন সদস্য আগুন নেভাতে কাজ করেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন তাঁরা। এ ঘটনায় ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে দুই কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো ধরনের হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রায় দুই ঘণ্টা বিমান উড্ডয়নসহ টার্মিনাল ভবনে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক পথের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েন হজযাত্রীসহ বিদেশগামী কয়েক শ যাত্রী।

ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস। কমিটির প্রধান ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন। ১৫ দিন বিমানবন্দরের মূল ভবন, কার্গো ভিলেজ, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ঘটনাটি নাশকতা নয় মন্তব্য করে দেবাশীষ বর্ধন বলেন, টার্মিনাল-১ ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি কক্ষ নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার কার্যালয়। এর একটি কক্ষে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুতের তারে শর্টসার্কিটে আগুন লাগে। এ আগুন কক্ষের ওপরের অংশে ছড়িয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম যেমন নেই, যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেগুলোও আধুনিক নয়। ১১ আগস্টের ঘটনার মাস খানেক আগে বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফায়ার সার্ভিসের উচ্চ পর্যায়ের একটি দল। তারা আধুনিকায়নের জন্য বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছিল সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে একটি ফায়ার স্টেশন থাকলেও এর কর্মীরা উড়োজাহাজ ওঠা-নামার সময় অগ্নিনিরাপত্তায় কাজ করেন। উড়োজাহাজে আগুন নেভানোয় তাঁরা দক্ষ হলেও বিমানবন্দরের অবকাঠামো রক্ষায় অভিজ্ঞ নন।

অন্যদিকে, বিমানবন্দরের অবকাঠামোর নিরাপত্তায় কোনো ফায়ার স্টেশন নেই। ফায়ার সার্ভিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিমানবন্দরের আগুনের ঘটনা ঘটলে কুর্মিটোলা অথবা উত্তরা ফায়ার স্টেশন থেকে তাদের ইউনিট কাজ করে। এতে কাজ শুরু করতে সময় চলে যায়।
এ ছাড়া স্প্রিংকলার সিস্টেম (আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এটি। এ ব্যবস্থায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই যন্ত্র থেকে পানি ছিটানো হয়), ফায়ার ওয়াটার পাম্প সিস্টেম (পাম্প দিয়ে পানি টেনে আনার পদ্ধতি) স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশ অনুযায়ী বিমানবন্দরের আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান গতকাল সোমবার বলেন, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনটি তাঁর কাছে আসেনি। হাতে এলে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিভিল এভিয়েশনের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আজই কেবল দায়িত্ব নিয়েছি। কাগজে–কলমে এখনো কিছু দেখিনি। আমাদের ও তাদের (ফায়ার সার্ভিস) প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে অবশ্যই ইম্প্রুভ (উন্নত) করব।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বারবার বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দ্রুত প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান পরামর্শ দেন, বিমানবন্দরের কাছাকাছি ফায়ার স্টেশন থাকা জরুরি। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হয়নি। বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় ফায়ার স্টেশন থাকা প্রয়োজন, যাতে করে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করা যায়। প্রথম আলো