Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ‘দায়িত্বহীন’

passport-officeঅনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ না করতে ঘুষ ও ব্লেজার দেয়ার প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. ফজলুল হক। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে ওই কর্মকর্তার বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তার এমন আচরণ ‘দায়িত্বহীন’ ও ‘অতি উৎসাহী’ বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. ফজলুল হকের সাক্ষাৎকার নেন। ওইদিন তিনি সাময়িকভাবে অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

chardike-ad

সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে তিনি অতি উৎসাহী হয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। পাসপোর্ট অধিদফতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি টেলিভিশনে প্রকাশ না করার জন্য ওই প্রতিবেদককে অর্থ ও ব্লেজার প্রদানের প্রস্তাব দেন। পুরো বিষয়টি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়।

পরে বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কয়েক দফা তদন্তের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন) মো. হেদায়েতুল্লাহ চৌধুরী। প্রতিবেদনে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মো. ফজলুল হককে দু’দফা কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে যুগ্ম সচিবের ৬৬ হাজার টাকার স্কেল থেকে অবনমিত করে ৫৬ হাজার ৬০০ বেতন নির্ধারণ করা হয়।

মো. হেদায়েতুল্লাহ চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ঘটনার দিন মো. ফজলুল হক সাময়িকভাবে অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি নিজ দায়িত্বে সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত দেয়া সাক্ষাৎকারে অতি উৎসাহী ও দায়িত্বহীন হয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। পাসপোর্ট অধিদফতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি টেলিভিশনে প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিককে অর্থ প্রদান ও ব্লেজার প্রদান করতে চান। তার এ অযাচিত কার্যকলাপে পাসপোর্ট অধিদফরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।’

অভিযোগের ভিত্তিতে মো. ফজলুল হকের বিরুদ্ধে প্রথমে ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ বিভাগীয় মামলা করাসহ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।

প্রথম দফা শুনানি এবং কারণ দর্শাও নোটিশের উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে তদন্তের ভার দেয়া হয়। তদন্তে ‘অসদাচরণের’ বিভাগীয় মামলাটি প্রমাণিত হয়। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গুরুদণ্ড প্রদানের জন্য দ্বিতীয় দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।

কারণ দর্শাও নোটিশের উত্তর হিসেবে ফজলুল হক ৩ অক্টোবর থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি চান। মন্ত্রণালয় তার সেই উত্তর ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে উল্লেখ করে।

ফজলুল হকের শাস্তি নির্ধারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের মতামত গ্রহণ ও পর্যালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবশেষে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বর্তমান বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ করার (৫৬,৫৫০০) লঘুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া পিএলআরে তার আর্থিক সুবিধাদি অবনমিত স্কেলে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তীতে শাস্তি প্রদত্ত বেতনের কোনো অংশ তিনি দাবি করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে।