“চাটুকারিতা”- এটি শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে শুধু নামাতেই থাকে। বিভিন্ন চ্যানেলের টক-শো তে গিয়ে গলাবাজি-চামবাজি-ফাঁপরবাজি-দলবাজি-চাপাবাজি করতেই জানি আমরা। নিজেদের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিনিয়ত চাটুকারিতায় লিপ্ত হই। এক ধরণের তথাকথিত উদ্যোক্তা আছেন আইটি সেক্টরে, যারা শুধু নেতাদের পা চেটে উপরে উঠার চেষ্টা করেন। নিজেদের ভিত্তি শক্ত না করতে পারলে চাটুকারিতা বৈশিষ্ট্য দিয়ে বেশিদূর আগাতে পারবেন না। এটা কোনো রাজনৈতিক ময়দান নয়। এখানে যোগ্যতা দিয়ে টিকে থাকতে হবে। মেধা দিয়ে টিকে থাকতে হবে। এটা ৫ বছরের ক্ষমতা না যে চেয়ারে পা তুলে নেতার পিছনে ঘুরে বেড়ালাম, নেতা একটা টেন্ডার ধরায়ে দিবে আর সেটার উপর ভর করে পরবর্তী ১০ বছর খেয়ে পরে বেঁচে থাকলাম। আলটিমেটলি সার্ভিস দিয়ে টিকে থাকতে হবে মার্কেটে। তা না হলে ক্লায়েন্ট পশ্চাৎদেশে লাথি মেরে বের করে দিবে।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। সরকার ফ্রিল্যান্সে উৎসাহ প্রদান করে তরুন সমাজকে এই সেক্টরে নিয়ে আসে বিভিন্ন উপায়ে। বিভিন্ন ট্রেনিং, সেমিনার, প্রজেক্ট এর ব্যবস্থা করে; যা প্রকৃত অর্থে ফলপ্রসূ না। আপনি লোক দেখানো কাজ শেখালেন, বিদেশী সংস্থাকে দেখালেন বিরাট কিছু করছে। আসলে ভেতরে কিছুই হচ্ছে না। আজ এই ইন্ডাস্ট্রির ছেলেমেয়েরা নিজেদের উদ্যোগে এতদূর এগিয়েছে। কোনো সরকারের আমলেই প্রকৃত সহযোগিতা পায় নি এইসব ছেলেমেয়েরা। কিন্তু দুষ্টু লোকেরা ঠিকই পকেট ভরেছে এদের নাম ভাঙ্গিয়ে; প্রজেক্ট দেখিয়ে, সাফল্য দেখিয়ে। আপনি কষ্ট করে বিদেশীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে আসবেন, সেখানেও ব্যাংকিং ঝামেলা। বিভিন্ন ছলে বলে কৌশলে এই ডলার আনতে হয়। সে বিরাট ইতিহাস। সরকারের যেখানে মনোযোগ দিতে হবে সেখানে তারা নিরব ভূমিকা পালন করে। কেন এমনটা করে; সেই সমীকরণ মেলাতে পারি না।
পেপ্যাল আমাদের দেশে সার্ভিস দিতে পারছে না কিন্তু আমাদের মতো নিম্ন আয়ের দেশে, উন্নয়নশীল অনেক দেশেই আছে। ভূটান, নেপাল ও উগান্ডার মত দেশে পেপ্যাল আছে কিন্তু আমাদের নেই। আমাদের দেশে নেই এর কারণ নাকি আমরা বিদেশে অর্থ পাচার করবো। আমি ১০ টাকা আয় করবো কি বিদেশে অর্থ পাচার করার জন্য? এই সহজ বিষয়গুলো যদি আপনারা গদিতে বসে না বোঝেন তাহলে নিচে নেমে দেখুন। তারপর কথা বলুন।
এবার আসি উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ নিয়ে। এই ঋণ যেনো সোনার হরিণ। এই ঋণ এর এমন শর্ত থাকে যা একটা স্টার্ট-আপ এর পক্ষে জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। আবার তাদেরকেই ঋণ দেবে যারা কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নেবে; না হয় দেউলিয়া ঘোষণা করবে। অথবা তাদেরকেই ঋণ দেবে যারা চাটুকর। যার কারণে দেশে ভাল স্টার্টআপগুলো সোজা হয়ে দাঁড়াবার আগেই ঝরে পড়ে। বেকারত্ব দূরীকরণে এই তরুণ সমাজ যে ভমিকা পালন করতে পারতো সেখানেও ব্যহত হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের টাকা মেরে দিয়ে রাজনৈতিক মহলগুলো নিজেদের পকেট ভরায় ব্যস্ত থাকছে। এভাবেই আমরা উন্নত দেশ এর সাপেক্ষে পিছিয়ে পড়ছি নিয়মিত।
পুনশ্চ: কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে ছোট করতে এই স্ট্যাটাস লিখি নি। আজকের এই অবস্থানের জন্য আমরা সকলেই দায়ী। কোনো একটি নির্দষ্ট মহলকে দোষী সাব্যস্ত করে লাভ নেই। যে দেশে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার হয়ে যায় আর রাজাকার টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় সেই দেশে “স্বদেশপ্রেম” শব্দটিকে জাদুঘরে রাখাই শ্রেয়। লেখাটা ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।
রেফারেন্স:
1. http://www.eid.ed.ac.uk/eid/sites/sbsweb2.bio.ed.ac.uk.eid/files/common/161024_LMIC.pdf
2. https://www.paypal.com/sg/webapps/mpp/country-worldwide
লেখক: হাদিউজ্জামান পলক