Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৩৬ হাজার কোটি টাকার বোঝা ও আমার মাথা ব্যাথা

tarikভারতে সাথে সাড়ে ৪ বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার চুক্তি হলো আজ। যা নাকি দেশের ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ ঋণ চুক্তি। ঠিক এমনি একটি সময়ে হচ্ছে যাতে করে অন্যান্য চুক্তির মতো এটিও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। বাম মোর্চারাও নিরবে, আর বিরোধী দলের কথা তো শুনার টাইম মিডিয়ার নাই। সুতারাং যথারীতি আমরা জনগণ ঘুমিয়ে। আমি অর্থনীতির অ ও বুঝি না। ছাত্র জীবনে এ বিষয়েই বোধহয় সবচেয়ে দুর্বল ছিলাম। তবুও আম জনতা হিসেবে বিচ্ছিন্ন কিছু প্রশ্ন জাগল মনে। তাই শেয়ার করলাম।

১) আমরা জানি ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয় ভারত । সাত বছর প্রায় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৫৮ কোটি ডলার। ২৮ কোটি ডলার এখনো খরচ হয়নি।২০১০ সালের নেওয়া সাতটি প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। কবে নাগাদ শেষ হবে কেউ বলতে পারছে না।এমন অবস্হায় এ নতুন চুক্তি কি কাজে?

chardike-ad

২) প্রথম চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা(ঠিকাদার-শ্রমিক) ভারত থেকে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছিল। এটাতোও তা বহাল আছে?

৩) প্রথম দফায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর ধীরগতির মধ্যেই ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফায় ভারতের সঙ্গে ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০০ কোটি ডলার দিয়ে ১৪ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেগুলোর কি খবর?

৪) ঋণের সুদের হার এবার নাকি হবে ১ শতাংশ। কমিটমেন্ট ফি হবে ০.৫০ শতাংশ। ২০ বছরে বাংলাদেশ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কোনো কারণে ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে সুদের বাইরে আরো ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে। যেখানে আগের ঋণও আমরা খরচ করতে পারছি না সেখানে নতুন করে ঋণ দিয়ে সুদ চাপিয়ে দেওয়ার মানে কি?

৫) তৃতীয় দফায় পাওয়া ৪৫০ কোটি ডলার যে ১৭ প্রকল্পে খরচ হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।(উল্লেখ্য ইহা ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দেশের।) এ ঋণ এ প্রকল্পে ব্যবহার হবার ফলে দেশ বিদ্যুৎ যাবে ভারতে এই বিদ্যুৎ আবার তাদের দেশে যাবে।কিন্তু রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ অন্যত্র(ভারেতে) নেওয়ার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন এ খরচ থেকেই হবে?? আবার উৎপাদিত বিদ্যুতের ও নাকি একটা বিশাল অংশ তাদের থেকে বাধ্যতামূলক কিনতে হবে? জাতির কি ইহা জানার অধিকারআছে?

৬) পায়রা বন্দর টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়ন, বেনাপোল থেকে যশোর হয়ে নড়াইল-ভাঙ্গা পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, মোংলা বন্দর সংস্কার হবে এ ঋণ দিয়ে। এসব ট্রানজিট কারা ব্যবহার করে? নামমাত্র শুল্কে তাদের পণ্য পরিবহনের ব্যবস্হা হিসেবে তাদের খেদমত করার জন্য তাদের ঋণ ব্যবহার হবে কি??

৭) পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রথমে প্রকল্প নেওয়াতেই সমস্যা থাকে। কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। পরে মাঠপর্যায়ে গিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে অনেক প্রকল্প বাদও হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভারতের ঠিকাদারদের সঙ্গে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত অনেক ধাপ পেরোতে হয়। এ কারণে অনেক সময় অপচয় হয়। সে কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য আলাদা চুক্তি করতেও অনেক সময় চলে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যে পণ্য ও সেবা বাংলাদেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেটি সঠিক হয়নি। পরে আবার পরিবর্তন করতে হয়।” এতো ঝামেলার মাঝেও আমাদের এতো আগ্রহ কেন? না চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এ ঋণ?

৮) একদিকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এর কথা বলছি অন্যদিকে ঋণের বোঝা ভারি করতেছি কেন? এ দ্বিমুখী নীতি কি বার্তা বহন করে?

৯) আমরা কি টোটাল অ্যাসিসমেন্ট করেছি শুধু সুদ বাবদ কত টাকা দিতে হবে? আমাদের স্বার্থে এর কতভাগ ব্যবহার হবে??

১০) সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদে কি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্হাপন করা হয়েছে? পাশ হয়েছে? হলে, জনগণ জানি?? যে দেশের ৬০ কোটি মানষ স্যানিটেশন সুবিধার বাহিরে তাদের কি দায় হলো ঋণ দিয়ে বেড়ানোর?

এসব একান্তই আমার মাথা ব্যাথা। তাই শেয়ার করলাম। আপনি মাথায় না নিলেও চলবে। যাক একটা কৌতুক দিয়েই শেষ করি

কামাল মিয়া একটি ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলছেন-
কামাল : আমি ১০ লাখ টাকা ঋণ নিতে চাই।
কর্মকর্তা : কী উদ্দেশ্যে ঋণ নেবেন?
কামাল : এই টাকা দিয়ে আমি গাড়ি কিনব।
কর্মকর্তা : ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করছি। তবে আগেই বলে রাখি, আপনি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারেন, ব্যাংক আপনার গাড়ি নিয়ে নেবে।
কামাল : ইস! আগে বলবেন না? আগে জানলে আমি ঋণ নিয়ে বিয়ে করতাম!

লিখেছেন: মোঃ তরিক উল্লাহ