Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

canadaকানাডায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এখন হিমশিম খাচ্ছে। অতিরিক্ত ঋণনির্ভরতা ও অত্যধিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কানাডীয় পেরোল অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)।

সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে। গত ২৭ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ জরিপ চালায় সিপিএ।

chardike-ad

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেককেই মাসের শুরুতে প্রাপ্ত বেতনের একটি বড় অংশ ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যয় করতে হয়। এমনকি ঋণের মাত্রা এত বেশি যে, বেতন পেতে এক সপ্তাহ দেরি হলেই বিপদে পড়তে হয় তাদের। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশই জানিয়েছেন, তারা ঋণের ভারে পিষ্ট।

সিবিসি নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক এ জরিপের বেশ কিছু আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে। নিয়মিত এক জড়িপে দেখা গেছে গত ৯ বছরে এবারই প্রথম চাকরিজীবীদের মধ্যে আবাসস্থল বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার হার ৩০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে, যাকে আশঙ্কাজনক বলছে সিপিএ।

জরিপের তথ্যমতে, অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশই নিজের আবাসস্থল বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন। আর ২৩ শতাংশ নিয়েছেন ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে।

ঋণের বোঝা বাড়ার কারণ হিসেবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছে সিপিএ।

ফারিসা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে নতুন চাকরিতে ঢুকেছেন। এর আগেও তিনি চাকরি করতেন। পড়ার ফাঁকে টরেন্টো পাবলিক লাইবেরিতে কাজ করতেন। কিন্তু কাজের চাপের কারণে তার পড়াশুনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে কাজ ছেড়ে দেন। পরে ক্যাম্পাসেই কাজ খুঁজে নেন।

ফারিসা জানান, একজনের আয় দিয়ে চলা কঠিন হয়ে গেছে কানাডায়। বাড়ি ভাড়া, দৈনন্দিন খরচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোন পরিশোধ করতেই হাত খালি হয়ে যায়। তখন ক্রেডিট কার্ড নির্ভর হতে হয়। কানাডার চাকরিজীবীদের প্রায় অর্ধেকই মাসের বেতন ঘরে নিয়ে যেতে পারেন না। একদিকে বেতন হয়, আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে নির্ধারিত অর্থ কেটে নেয় ঋণপ্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিভিন্নমুখী চাপে কানাডীয় শিক্ষার্থীরা: কানাডায় একইসঙ্গে পড়াশুনা এবং কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছে। অথচ পড়ার ফাঁকে কাজ না করলে তার জন্য চলা কঠিন হয়ে উঠবে। এমনকি যেসব শিক্ষার্থী লোন নিয়ে পড়ছেন তাদের কাজ না করলে লোনের বোঝা আরো ভারি হবে।

ফাইয়াজ আবরার টরেন্টো বিশ্বাদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রথম থেকেই তিনি পার্টটাইম একটা চাকরি করতেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্র তার কাছে উপার্জনের স্বস্তির বদলে দিয়েছে বাড়তি চাপের অভিজ্ঞতা। এতে তার শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল ভীষণভাবে। এ কারণে পরে চাকরিটি ছেড়ে দেন তিনি। কানাডার হাজারো শিক্ষার্থী বর্তমানে এমন দ্বিমুখী চাপের মধ্যে রয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র উপদেষ্টারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজে যোগ দিতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। তাদের মতে, একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়াই এখন যথেষ্ট নয়। চাই কর্মক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর এ পরামর্শ শুনে বহু শিক্ষার্থীকে কাজ ও শিক্ষা একসঙ্গে চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

শিক্ষাজীবনে ক্লাস, পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন একটি নিয়মিত বিষয়। আর এর সঙ্গে যখন কর্মক্ষেত্রে চাপ যুক্ত হয় তখন বাস্তব অভিজ্ঞতাটি হয় ‘অসহনীয়’।

শুধু ফাইয়াজ নন, হাজারো কানাডীয় শিক্ষার্থীর উপলব্ধি এটি। কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের এ সময় ছাত্র উপদেষ্টারা শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কাজে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাজ খুঁজে পেতেও সাহায্য করেন তারা। তাদের মতে, শিক্ষাজীবনে কাজে যোগ দেওয়া শুধু অর্থের জন্য নয়। এটি সার্বিক শিক্ষাকার্যক্রমেরও একটি অংশ। পরবর্তী কর্মজীবনের জন্য এটি একজন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে। শুধু ভালো ফল করাই একজন শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট নয়।

অনেক শিক্ষার্থীই এমন প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করলেও সংকট হচ্ছে যথোপযুক্ত কাজ পাওয়া। অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এমন সব কাজে যোগ দিতে হচ্ছে, যা তার নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার অনেকে নিজেই কর্মক্ষেত্রে বেশি সময় দেওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে অত্যধিক টিউশন ফি ও শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে কর্মক্ষেত্রে বেশি সময় দিতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজের ক্যাম্পাসেই কাজের সুযোগ খুঁজলেও সে সৌভাগ্য খুব কমজনেরই হয়। অধিকাংশ সময়ই বিভিন্ন দোকান কিংবা শপিং মলের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব কাজে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা থাকে, যা পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি চাপ হয়ে আবির্ভূত হয়। এ জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও কোনো কর্মক্ষেত্রে যোগদানের ক্ষেত্রে কাজের ধরনটি আগে থেকে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ