Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

health-ministryকেউ আসছেন, কেউ যাচ্ছেন। আবার কেউ অচিরেই যাওয়ার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বিদেশ যাত্রার এমন হিড়িক লেগেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিদেশ ভ্রমণের সরকারি পরিপত্র জারি হয়েছে। এর মধ্যে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী, সহকারী অধ্যাপক, ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান রয়েছেন।

chardike-ad

সফরের তালিকায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণের নামে প্রতি বছর বিমান ও হোটেল ভাড়া, খাবার-দাবার ও দৈনিক ভাতাসহ সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের বর্তমান ও সাবেক একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার উপর বিশেষায়িত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে যারা যান, তারা প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে বাস্তবে তা কাজে লাগান না। অথচ তাদের পেছনে সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে।

গত কয়েক বছরে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট), কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ জটিল রোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন নার্সের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, দেশে আসার পর তাদের বদলি করে অন্যত্র দেয়া হয়। ফলে তারা যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন, বাস্তবে তা কাজে লাগাতে পারেন না। এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।

তারা আরও জানান, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার চিকিৎসকদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হলেও ঘন ঘন বদলির কারণে সে প্রশিক্ষণ শুধু ভ্রমণস্মৃতি হিসেবেই থেকে যায়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এভাবে সরকারি অর্থের এক ধরনের অপচয় হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রশিক্ষণে দুজন, ২৭ এপ্রিল থেকে ২৪ মে চারজন, ২ থেকে ৮ মে আমেরিকায় দুজন,৬ থেকে ১২ মে তুরস্কে একজন, ৫ থেকে ১২ মে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন, ৭ মে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় দুজন, ৮ থেকে ২৮ মে চীনে দুজন, ৯ থেকে ১১ মে ভারতে দুজন, ১০ থেকে ১৪ মে জার্মানিতে তিনজন, ১৩ মে থেকে ১৮ জুলাই ভারতে ১০ জন, ১৫ থেকে ২৪ মে ভারতে ১৪ জন, ১৪ থেকে ১৬ মে মালয়েশিয়ায় একজন, ১৪ থেকে ১৮ মে কম্বোডিয়ায় একজন, ১৬ থেকে ২৬ মে জেনেভায় একজন, ১৬ থেকে ২৬ মে জেনেভায় একজন, ১৬ থেকে ২২ মে চীনে তিনজন, ১৮ থেকে ২৪ মে সিঙ্গাপুরে আটজন, ২০ মে থেকে ৯ জুন জাপানে একজন, ২১ থেকে ২৫ মে ফ্রান্সে একজন, ২১ থেকে ৩০ মে ইতালিতে পাঁচজন, ২৩ থেকে ২৫ মে সিঙ্গাপুরে একজন, ২৩ ও ২৪ মে নেপালে একজন, ২৫ মে থেকে ১৪ জুন ভারতে চারজন, ২৮ থেকে ৩১ মে ডেনমার্কে একজন এবং ৩০ মে থেকে ১ জুন জাপানে দুজন যান। এছাড়া আগামী জুনে কমপক্ষে ৪০ জনের বিদেশ যাওয়ার সরকারি পরিপত্র জারি রয়েছে।

বছরের শেষ সময়ে এসে বিদেশ যাওয়ার হিড়িক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য) মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘এ কথা সত্য যে, বছরের শেষ সময়ে এসে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চিকিৎসক, শিক্ষক, নার্সসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। জুন থেকে জুন বছর হিসাবে বাজেট বরাদ্দই এর অন্যতম কারণ।’

‘বাজেট বরাদ্দ হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নানা প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেতে দেরি হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনসহ আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতাও এজন্য দায়ী।’

‘অনেকেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করেন না’- এমন অভিযোগের সত্যতা রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যারা মনোনয়ন দেন তাদের সেটি দেয়ার আগে মনোনীত ব্যক্তি ২/১ বছর সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করবেন- এমন অঙ্গীকার নিয়ে তবেই মনোনয়ন দেয়া উচিত।’

সৌজন্যে- জাগো নিউজ