
কানাডার সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি আবারও জয় পেতে যাচ্ছে বলে প্রাথমিক ফলাফল পূর্বাভাসে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিটিভি নিউজ ও সিবিসি। তবে মার্ক কার্নির দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। খবর বিবিসির।
কানাডার প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ ভোটার এই নির্বাচনে আগাম ভোট দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল নেতা মার্ক কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের পিয়েরে পয়েলিয়েভ্র। সোমবার সকাল সাতটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হলেও চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওপর, যেখানে ভোটগ্রহণ সবার শেষে শেষ হয়েছে।
সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, এখনো লিবারেল পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৪৩টি আসনের মধ্যে ১৭২টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে তারা ১৩৩টি আসন নিয়ে এগিয়ে আছে, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির দখলে রয়েছে ৯৩টি আসন।
সিবিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, লিবারেল পার্টি ১৫৯টি আসনে জয়ী হতে যাচ্ছে, যদিও সিটিভি’র হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা বেড়ে ১৬২-তে পৌঁছাতে পারে।
এক্ষেত্রে মার্ক কার্নিকে এখন অন্য বিরোধী দলের আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ে সমঝোতা করতে হতে পারে, অথবা এককভাবে সরকার চালিয়ে অন্য দলগুলোর ওপর আস্থা ভোটের ঝুঁকি নিতে হতে পারে।
সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে কার্নির স্বাভাবিক পছন্দ হবে বামঘেঁষা নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), যার নেতৃত্বে রয়েছেন জগমিত সিং।
বর্তমানে এনডিপি প্রায় ১০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বলে পূর্বাভাস মিলেছে।
এর আগে কার্নির পূর্বসূরি জাস্টিন ট্রুডোও এনডিপির সঙ্গে সমঝোতা করে দুই বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন, বিনিময়ে সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর জনসমর্থনে ধস নামা লিবারেল পার্টির জন্য এটি এক ধরনের প্রত্যাবর্তন বলা চলে।
নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কানাডা বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয়সংকটের মুখে রয়েছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের হুমকি দেশটির অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কানাডার রপ্তানির ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে, ফলে উভয় প্রধান প্রার্থীই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকার করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ বানানোর কথা বলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এমনকি নির্বাচন দিনেও তিনি নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে বলেন, ‘দেখুন এই ভূমিখণ্ড কত সুন্দর হবে। কোনো সীমান্ত ছাড়াই মুক্ত প্রবেশাধিকার।’
প্রধানমন্ত্রী কার্নি এই প্রস্তাব জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘এটি কানাডা—এখানে সিদ্ধান্ত নেবে কানাডার জনগণ।’
প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রও একই সুরে মন্তব্য করেন। তিনি ট্রাম্পকে আহ্বান জানান, কানাডার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে। নিজের পোস্টে পয়েলিয়েভ্র লেখেন, ‘কানাডা চিরকাল গর্বিত, স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকবে। আমরা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত হব না।’
সিবিসি নিউজের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, লিবারেল পার্টি ১৫৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। তারা হাউস অব কমন্সে বৃহত্তম দল হলেও ১৭২টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে লিবারেলরা সম্ভবত সংখ্যালঘু সরকার গঠন করবে, যেখানে টিকে থাকতে ও আইন পাশ করাতে তাদের অন্যান্য দলের সহায়তা নিতে হবে।
কেবল কুইবেক প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ব্লক কুইবেকোয়া দল ২৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এনডিপি বর্তমানে ১০টি আসনে এগিয়ে থাকলেও, হাউস অব কমন্সে অফিসিয়াল পার্টির মর্যাদা পেতে তাদের অন্তত ১২টি আসন প্রয়োজন। গ্রিন পার্টি দুটি আসনে জয়ী হওয়ার পথে রয়েছে।