
চ্যাটজিপিটি সহ অন্যান্য জেনারেটিভ এআই চ্যাটবটগুলো রাশিয়ার মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে! মার্চে নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ‘নিউজ গার্ড’-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এমন তথ্য রীতিমত সকলের মাঝে আলোচনার ঝড় তোলে।
নিউজগার্ড তার গবেষণায় রাশিয়াপন্থী “প্রাভডা নেটওয়ার্ক (Pravda Network) ”-এর তৈরি করা ভুয়া সংবাদভিত্তিক প্রম্পট ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে ChatGPT ও অন্যান্য AI চ্যাটবটের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। তাদের দাবি, ৩৩ শতাংশ ক্ষেত্রে চ্যাটবটগুলো রাশিয়ার ভুয়া বিবরণ হুবহু বা আংশিক পুনরাবৃত্তি করেছে।
প্রাভডা নেটওয়ার্ক হচ্ছে কিছু প্রো-ক্যাম্পেইন ওয়েবসাইটের জাল যেগুলো বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের আদলে তৈরি, কিন্তু আসলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ছড়ানো ভুয়া তথ্য প্রচার করে।
এই নেটওয়ার্ককে প্রথম চিহ্নিত করে ফ্রান্সের ভিজিনাম (Viginum) নামক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা।
গবেষকদের একটি অংশ মনে করেন, এটির উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা নয়, বরং এআই মডেলগুলোকে গ্রমিং বা প্রভাবিত করা — অর্থাৎ, মিথ্যা তথ্য খাওয়ানো যাতে ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীরা সেই তথ্য পায়।
রিপোর্টে ব্যবহৃত দুই-তৃতীয়াংশ প্রম্পটই এমনভাবে তৈরি করা যাতে চ্যাটবট মিথ্যা বলার ঝুঁকিতে পড়ে। এমনকি যেসব উত্তর সতর্ক করে যে তথ্য যাচাই করা হয়নি, সেগুলোকেও ভুল তথ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।
তবে বিশ্বজুড়ে নিউজগার্ডের এই প্রতিবেদনের উপসংহার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেক গবেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। কারণ নিউজগার্ড তাদের ব্যবহৃত প্রম্পট প্রকাশ করেনি এবং সাংবাদিকদের অনুরোধেও তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে গবেষণার পুনরায় যাচাই সম্ভব হয়নি।
অন্যান্য এআই গবেষকেরা একই চ্যাটবটগুলো (ChatGPT, Gemini, Grok, Copilot) দিয়ে আবার পরীক্ষা চালিয়ে বলেন, — প্রাভডা-নির্ভর তথ্য খুব কম পাওয়া গেছে, এমনকি নির্দিষ্ট ভুয়া দাবির ক্ষেত্রেও।
তত্ত্বটি চটকদার— যে রাশিয়া কৌশলে এআই সিস্টেমে মিথ্যা তথ্য ঢুকিয়ে ভবিষ্যতের ব্যবহারকারীদের প্রভাবিত করতে চায়। কিন্তু প্রমাণ খুবই দুর্বল। এমনকি নিউজগার্ডের-এর নিজের গবেষণাও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে এ তত্ত্বকে সমর্থন করে না।
বিশ্লেষকদের মতে, এআই চ্যাটবট যে কোনো উন্মুক্ত ওয়েব ডেটা থেকে শেখে, এবং কিছু ভুল তথ্য যদি কখনও থেকে যায়, তাতে সচেতন তদারকির প্রয়োজন—কিন্তু ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে ঝাঁপিয়ে পড়া সমাধান নয়।
বিশ্লেষক জুলিয়াস বিয়ারের নেক্সট জেনারেশন টিমের প্রধান কার্সটেন মেঙ্কে, বলেন“রাশিয়ার তথ্য শুধু থাকলেই সেটা এআই গ্রহণ করছে — এটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। তথ্যের পরিপ্রেক্ষিত, উৎস, ও বিশ্বাসযোগ্যতা সবই গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্যান্য গবেষকরা বলছেন, চ্যাট জিপিটির অ্যালগরিদম একটি ‘ব্ল্যাক বক্স’, যেখান থেকে কীভাবে তথ্য উঠে আসে সেটা একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব।”
এআই এবং মিথ্যা তথ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা যুক্তিযুক্ত। তবে ‘রাশিয়া এই কে প্রভাবিত করছে’–এর মতো জোরালো দাবি করার আগে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা দরকার। এআই ব্যবস্থাকে উন্নত করতে চাইলে প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা, প্রকাশযোগ্য মেথডোলজি, ও গুজব থেকে দূরে থাকা।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এর মতে, “মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি” বিশ্বব্যাপী ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলোর একটি। তাই এ বিষয়ে সাবধানতা জরুরি — কিন্তু গুজব দিয়ে নয়, গবেষণা দিয়ে।
সূত্র – আল জাজিরা