
‘জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) কেউ চাঁদাবাজের আশ্রয়স্থল ভাবলে তারা ভুল করছে। মুখে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলে, আর পেছনে চাঁদাবাজি—এটা আর চলতে দেওয়া হবে না’— এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল ৫টায় ময়মনসিংহ টাউন হল মোড়ে শহীদ মিনার চত্বরে কেন্দ্রীয় পদযাত্রা শেষে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত বলেন, “আমরা সবসময় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু আজ দুঃখের বিষয়, কিছু লোক আমাদের দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজিতে নেমেছে। নেতাকর্মীরা মুখে মুখে বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই—কিন্তু নিজেরাই তো চাঁদাবাজিতে যুক্ত! এটা কোনোভাবেই বরদাশ্ত করা হবে না।”
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী লাগবে না। দরকার পরিচ্ছন্ন, আদর্শবান নেতা-কর্মী। যারা চাঁদাবাজি করে, তেলবাজি করে, নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে সেই ছবি ব্যবহার করে ব্যবসা চালায়—তাদের প্রতিহত করুন। এদের প্রশ্রয় দেবেন না। আগে নিজের ঘরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।”
হাসনাত বলেন, “আপনারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে আজকের এই প্রোগ্রাম করেছেন। দলের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। এটাই আমাদের শক্তি। ইউনিয়ন থেকে থানা—প্রতিটি ঘরে ঘরে যান, বলুন কেন এনসিপি দরকার। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখান। জনগণ একদিন এই ত্যাগের প্রতিদান দেবে, শতগুণে ফিরিয়ে দেবে আপনাদের অবদান।”
হাসনাত বলেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হলে আমাদের প্রথম কাজ হলো নিজেদের শুদ্ধ করা। যে গোষ্ঠী এনসিপিকে ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে, তাদেরকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আগে ঘরকে গুছিয়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, পড়ালেখা শেষ করে ময়মনসিংহের ছাত্ররা কোনও কাজকর্ম করতে পারে না এখানে। চাকরি এবং কাজের সন্ধানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাসিন্দাদের গাজীপুর টঙ্গী উত্তরায় কাজ করতে যেতে হয়। রিক্সাওয়ালা, দিনমজুর, ছাত্র ও গার্মেন্টস কর্মী উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ৪১ জন শহীদ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেনি। তারা পরিবেশের প্রাণ নদীগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা সেই নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পাশাপাশি সুষম বণ্টন করতে চাই। ময়মনসিংহ সংস্কৃতির জেলা। ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন লোকজ গান শুনে বড় হয়েছি। এ সময় তিনি ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান আবুল মনসুর আহমেদের কথা স্মরণ করেন।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, আপনারা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটি আমরা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এটাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রথম ১৫ দিন কোনও বাধা ছাড়াই সারাদেশে পদযাত্রা করেছে। এটি আওয়ামী লীগের সহ্য হয় নাই। আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার নির্দেশে তার দোসররা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
দেশ গড়তে জুলাই পথযাত্রা স্লোগানে অনুষ্ঠিত এ মঞ্চে কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক ও ময়মনসিংহ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জাভেদ রাসিনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।