
ফাইল ছবি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সংস্কার মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে না পারলে তা ফলপ্রসূ হবে না। বরং ‘সংস্কারের নামে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা’ দেশের বাস্তবতায় বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বনানীতে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ সংগঠন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এবং ‘মায়ের ডাক’। এতে গুমের শিকার নেতাকর্মীদের শিশু সন্তান ও ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শিশুদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
সংসদে আনুপাতিক পদ্ধতিতে (Proportional Representation – PR) নির্বাচন আয়োজনের ভাবনা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “পিআর কী জিনিস, দেশের মানুষ তা বোঝেই না। জনগণ এখনও ইভিএমে ঠিকমতো ভোট দিতে পারে না। সুতরাং এসব চিন্তা থেকে সরে আসা উচিত।”
তিনি বলেন, নতুন নতুন চিন্তা করতে গিয়ে বাস্তবতাকে অবহেলা করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, পরিচিত প্রক্রিয়ায় ভোট ব্যবস্থা।
আলোচনায় সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত গুম কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “কমিশন গঠন করে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্তানদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করা হবে। কিন্তু তা হয়নি।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন করলে গুমের শিকার শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গুম হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্তানরা ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে। তাদের বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর উত্তরায় নিহত শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন বলেন, “জুলাই-আগস্টে অনেক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
গুমের শিকার নুর হোসেনের মেয়ে নাবিলা নূর বলেন, “আমরা এখনও বাবাকে পাইনি। একমাত্র অপরাধ—তিনি বিএনপি করতেন।” কায়সার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার বলেন, “১২ বছর ধরে বাবাকে দেখিনি। তিনি পানি চেয়েছিলেন, সেটাও দেওয়া হয়নি। আজ আমরা শুধু চাই—তাদের খোঁজ।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সানজিদা ইসলাম এবং বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান।
একইদিন বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, “নতুন নতুন ধারণা দিয়ে দেশের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এ দেশের মানুষ যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় অভ্যস্ত, সেটাই ফিরিয়ে আনুন।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ফ্যাসিজমের মূল হোতা। তিনি বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার বিপরীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।”
অনুষ্ঠানে তিনি একাধিকবার দাবি করেন, দেশের বর্তমান সংকটের সমাধান গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেই নিহিত, অবাস্তব, জনগণের অচেনা সংস্কার-প্রস্তাবে নয়।