অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এমনকি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কখনো একটি কথাও বলেননি।
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে যারা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগ সরকারের দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। কেবল আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মাঝেমধ্যে দু–চারটি কথা বলেন। এমনকি আমরা যার প্রতি শ্রদ্ধাশীল—প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাহেবও নীরব থেকেছেন।”
তিনি দাবি করেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের চেতনা বাস্তবায়নে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা তা ধারণ করেনি। “এই দেশ বীরদের ধারণ করতে পারে না,”—বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, “সব সময় বিপ্লবে সাধারণ মানুষ জীবন দেয়, কিন্তু বিজয়ের পরে সুবিধাভোগী কিছু রাজনীতিক এসে কৃতিত্বের মালা পরে। বারবার জাতিকে তারা বিভ্রান্ত করে, ভুল পথে চালনা করে।”
গণ-আন্দোলনের পটভূমি বিএনপি তৈরি করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি, তারাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তারাই জাতিকে সবক দিচ্ছেন।”
নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বলেন, “নির্বাচন পদ্ধতি আসনভিত্তিক হবে না পিআর পদ্ধতিতে—সেটা বড় কথা নয়। মানুষ গণতন্ত্র চায়, আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর আগে আত্মীয়-স্বজনদের সম্পদ লুটপাট করে পালিয়ে যেতে বলেছে। শেখ গোষ্ঠীর কাউকে ধরতে পারছে না কেউ।”
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৮০ হাজার, এখন সংখ্যাটা পৌনে ৩ লাখ। এর কৃতিত্বও আওয়ামী লীগের, যারা আত্মীয়–স্বজনদের তালিকায় ভরিয়ে দিয়েছে।”
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন না হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। বিনিয়োগও আসবে না। এখন চলছে মবক্রেসি আর অভিজাততন্ত্র।”
সাবেক বিচারপতি ও পুলিশ কর্মকর্তারা সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাকে সেনাবাহিনীর ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন মেজর (অব.) হাফিজ। তার ভাষায়, “জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়েছেন, পুলিশ অফিসাররা গুলি চালিয়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য অপরিহার্য। ভেতর–বাইরের কেউ যদি ঐক্যে ফাটল ধরায়, তবে জনগণের আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে। স্বৈরাচারীদের কাছে এখনও বিপুল অর্থ ও বেআইনি অস্ত্র আছে।”
তিনি আরও বলেন, “সমালোচনার আগে নিজেদের আয়নায় দেখুন। পত্রপত্রিকায় অনেক কিছু বের হচ্ছে, জনগণ সেগুলো পছন্দ করে না। দায়িত্বশীল নেতৃত্বের জন্য এখন ঐক্য অটুট রাখা জরুরি।”