
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। একদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন—দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে এখন চাপে পড়েছেন মোদি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেকে ‘নিরপেক্ষ’ দাবি করলেও, পশ্চিমা জোটের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় জ্বালানি কেনায় ভারতের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
বুধবার সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ট্রাম্প এখন ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছেন। একসময় মোদিকে ‘বন্ধু’ বলে প্রশংসায় ভাসালেও, সেই সুর এখন অতীত। সম্প্রতি সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করা হবে।” তাঁর অভিযোগ, ভারত এখনও রুশ তেল কিনছে এবং তা বিশ্বনেতাদের জন্য ‘চরম হতাশার’। যদিও নতুন এই শুল্ক হার কত হতে পারে তা নির্দিষ্টভাবে বলেননি ট্রাম্প।
এর আগেও ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে অভিযোগ করেছিলেন, “ভারত সবসময়ই তাদের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে কিনেছে। চীনের পর রুশ জ্বালানির দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতাও ভারত। অথচ আমরা চাই রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ করুক।”
তবে ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ভারত এখনো কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনামলে বিশ্বের বহু দেশ বাণিজ্য চুক্তির পথে গেলেও, ভারত তা করেনি। বরং এখনো নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই বৃহৎ অর্থনীতি।
রাশিয়া থেকে আমদানি করা মার্কিন ইউরেনিয়াম ও সার প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠলে ট্রাম্প বিষয়টি এড়িয়ে যান। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, “আমি এ বিষয়ে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।” সে সময় ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক নিয়ে কথা বললেও, ভারত নিয়ে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কটাক্ষ, “আদানিকে রক্ষা করতেই মোদির এই নীরবতা।” তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে। সেই তদন্তে মোদি, আদানি ও রাশিয়ার তেলের আর্থিক লেনদেন ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই ট্রাম্পের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না মোদি।”
এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে রাহুল আরও দাবি করেন, “মোদির হাত বাঁধা। এই তদন্ত ভারতের সরকারের দুর্নীতির মুখোশ খুলে দিতে পারে।”