
ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের অবশেষে বহু প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) নিশ্চিত করেছে, আগমী নভেম্বরের ১০ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে ভারতে খেলতে আসছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল। কেরালায় অনুষ্ঠিত হবে সেই বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচ, যা হতে যাচ্ছে প্রায় দেড় দশক পর ভারতীয় মাটিতে মেসির দ্বিতীয় উপস্থিতি।
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত এখনো হয়নি। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক বিবৃতির মাধ্যমে শনিবার সকালে (বাংলাদেশ সময়) এই খবর দিয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে ভারত সফরে এসে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। নভেম্বরের প্রীতি ম্যাচের বাইরে আগামী ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত সফরে লিওনেল মেসির ভারত সফরে আসার কথা আছে।
ভারতে আর্জেন্টিনার সফর নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। কেরালা সরকার প্রথমে ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে মেসিদের একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা চলছে। বারবার আশার কথা শোনা গেলেও এতদিন তারিখ ঘোষণা হয়নি। এবার আর কোনো সংশয় নেই, এএফএ’র অফিসিয়াল ঘোষণায় নিশ্চিত হলো ম্যাচের সূচি। এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালে কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের সামনে মেসি ম্যাজিক ছড়িয়েছিলেন দারুণ অ্যাসিস্ট দিয়ে নিকোলাস ওটামেন্দিকে গোল করিয়ে।
এএফএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আর্জেন্টিনা জাতীয় দল, লিওনেল স্কালোনির নেতৃত্বে, ২০২৫ সালের বাকি সময়ে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলবে। অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ম্যাচ (শহর ও প্রতিপক্ষ এখনও নির্ধারিত নয়)। নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে লুয়ান্ডা (আঙ্গোলা) ও কেরালাতে (ভারত)।’ প্রতিপক্ষ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ভারত সফরে আর্জেন্টিনা দল শুধু কেরালাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। মেসি সফরে কলকাতা, আহমেদাবাদ, মুম্বাই ও নয়াদিল্লি ভ্রমণ করতে পারেন, এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা আছে।
চলতি মৌসুমে মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) ইন্টার মায়ামির হয়ে অসাধারণ ফর্মে আছেন মেসি। সম্প্রতি তিনি ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও অ্যাসিস্ট প্রদানকারী হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন-ফুটবল ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি ভিন্ন ক্লাবে একসঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও অ্যাসিস্ট মেকার। আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) শনিবার জানিয়েছে, নভেম্বরের ফিফা উইন্ডোতে তিনটি ম্যাচ খেলবে তারা। একটি ভারতে, বাকি দুটি অ্যাঙ্গোলার লুয়ান্ডায়। তবে এবারই অবশ্য প্রথম নয়, ২০১১ সালেও ভারতে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে খেলেছিলেন মেসিরা।
এবারের সফরের আলোচনার সূত্রপাত ২০২২ বিশ্বকাপে এই উপমহাদেশ থেকে আজেন্টিনার প্রতি সমর্থনের জোয়ার থেকে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সামাজিক মাধ্যমের পাতা থেকেও তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পোস্ট করা হয়েছিল, “ধন্যবাদ বাংলাদেশ, ধন্যবাদ কেরালা, ভারত, ধন্যবাদ পাকিস্তান-আপনাদের সমর্থন ছিল অসাধারণ।” এর কয়েকদিন পরই কেরালার ক্রীড়া মন্ত্রী ভি আব্দুরাহিমান এএফএর সভাপতির কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠান আর্জেন্টিনা দলকে কেরালায় খেলার জন্য। সেই পথ ধরে নানা প্রক্রিয়ার পর গত নভেম্বরে ক্রীড়া মন্ত্রী জানান, আর্জেন্টিনা ফুটবল দল সত্যিই আসছে কেরালায়।
স্পন্সরের খোঁজে ব্রডকাস্টিং কোম্পানি ‘রিপোর্টার’-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় কেরালার সরকার। তারাই এএফএর সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় কিছু দিন আগে। এএফএর প্রধান বাণিজ্যিক ও বিপনন কর্মকর্তা চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ আনেন কেরালা সরকারের বিরুদ্ধে। এতে ঝুলে যায় সফর। তবে গত ৫ অগাস্ট রিপোর্টার ব্রডকাস্টিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্টো অগাস্টিন জানান, এএফএর সঙ্গে তাদের চুক্তি পাকাপাকি হয়েছে এবং গত ৬ জুন ১৩০ কোটি রুপির পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছে। এই বছরের মধ্যে ভারত সফরে না এলে এএফএর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
সেই সঙ্কট কেটে যাওয়ার বার্তা মিশে থাকল শনিবার এএফএর ঘোষণায়। “২০২৫ সালের বাকি সময়টায় ফিফা প্রীতি ম্যাচের দুটি উইন্ডো থাকবে লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনার। প্রথমটি অক্টোবরের ৬ থেকে ১৬ তারিখ, ম্যাচগুলি হবে যুক্তরাষ্ট্রে (প্রতিপক্ষ ও শহর পরে ঠিক করা হবে)। পরের ফিফা প্রীতি ম্যাচগুলি হবে নভেম্বরের ১০ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে অ্যাঙ্গোলার লুয়ান্ডা ও ভারতের কেরালায় (প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হয়নি)।” আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সফরের বাইরে আগামী ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত সফরে ভারতে যাওয়ার কথা মেসির। কলকাতায় সফর শুরুর পর আহমেদাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে যাবেন আটবারের ব্যালন ডি’অর জিয়ী তারকা।